শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

খাদ্য আর বিলাসিতায় ব্যয় হচ্ছে বৈদেশিক আয়ের বড় অংশ

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ৩৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ ব্যয় হয় ভরণপোষণ ও পোশাকে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ, আসবাব কেনায় তিন দশমিক ৪৬ শতাংশ, ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ ব্যয় হয় বাড়ি নির্মাণ ও জমি ক্রয়ে, ১৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ ব্যয় হয় এসএমইতে বিশেষ করে কৃষি খাতে। এই অর্থ অনাবাদি জমি কিনে তাতে হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশুর খামার স্থাপনে ব্যয় হয়
হাসান আরিফ
  ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

দেশের অর্থনীতির ভিত্তি দাঁড়িয়ে আছে প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক আয় বা রেমিট্যান্সের ওপর। এর ওপর ভর করেই চলতি হিসাবে ঘাটতির পরিমাণ কমে আসছে। আর সেই রেমিট্যান্সের এক-তৃতীয়াংশই চলে যায় ভরণপোষণে। অর্থাৎ সাংসারিক ব্যয়ে। এর সিংহ ভাগ ব্যয় হয় খ্যাদ্য আর পোশাক কেনায়। এই ব্যয় করে থাকেন গ্রামীণ বা পলস্নী অঞ্চলের মানুষ। জমি কেনার কাজেও তারা ব্যয় করে থাকেন। তবে উচ্চ শিক্ষিতদের পাঠানো রেমিট্যান্সের বড় একটি অংশ ব্যয় হয় বিনিয়োগে।

জানা গেছে, গত অর্থবছরে এক লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের আড়াই মাসেই (১ জুলাই থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর) ৫৯৯ কোটি ৬৬ লাখ (৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠানো প্রবাসীদের রেমিট্যান্সে সিংহভাগের উৎস হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ৩৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ ব্যয় হয় ভরণপোষণ ও পোশাকে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ, আসবাব কেনায় তিন দশমিক ৪৬ শতাংশ, ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ ব্যয় হয় বাড়ি নির্মাণ ও জমি ক্রয়ে, ১৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ ব্যয় হয় এসএমইতে বিশেষ করে কৃষি খাতে। এই অর্থ অনাবাদি জমি কিনে তাতে হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশুর খামার স্থাপনে ব্যয় হয়।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সব কিছুকে ছাড়িয়ে প্রবাসীদের দেশে থাকা স্বজনদের প্রাধান্য দিতে হয় ঋণ পরিশোধে। কারণ, বিদেশ যাওয়ার খরচের ৪০ শতাংশই ঋণ নিতে হয় স্থানীয় এনজিও ও ব্যক্তিপর্যায় থেকে। এসব ঋণের বিপরীতে দিতে হয় উচ্চ সুদ। তবে সরকার প্রবাসীদের বিদেশযাত্রার ব্যয় কমিয়ে আনতে পারলে ঋণ নেওয়ার হার কমে যাবে। সুদ ও ঋণ পরিশোধ বাবদ অর্থ সঞ্চয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী রেমিট্যান্সের মাত্র সাত শতাংশ যায় সঞ্চয়, বিমার প্রিমিয়াম, বিভিন্ন বিনিয়োগ ও পুঁজিবাজারে। আর বিলাসী ও অপ্রয়োজনে খরচ হয়ে যাচ্ছে রেমিট্যান্সের বড় একটি অংশ। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে এই অপ্রয়োজনীয় ব্যয়কে সঞ্চয়ে আনা সম্ভব বলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

সূত্র জানায়, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ৬৯ শতাংশই যায় গ্রামীণ বা পলস্নী অঞ্চলে। বাকি ৩১ শতাংশ যায় শহরাঞ্চলে। শহর-পলস্নী উভয় অঞ্চলে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের সিংহভাগের ব্যবস্থাপনা বা খরচের কর্তৃত্ব নারীরা নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, যেহেতু পলস্নী অঞ্চলে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বেশি এবং এর নিয়ন্ত্রণ নারীদের হাতে থাকে। বিনিয়োগের সুযোগ না থাকায় তারা ভোগব্যয় বেশি করছেন। ফলে সম্পদ অর্জন ও সঞ্চয় বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা তাদের হাতে নেই। গ্রামীণ এলাকায় বিনিয়োগের সুযোগ কম থাকা ও অর্থ ব্যবস্থাপনার জ্ঞানের অভাবে এমনটা হচ্ছে। তাই সুযোগ বাড়ানোর ক্ষেত্র তৈরি করে দিলে তাদের মধ্যে আয় এবং সঞ্চয় করার প্রবণতা বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। যা এখন শুধু উচ্চ শিক্ষিতদের পাঠানো রেমিট্যান্সের বড় একটি অংশ ব্যয় হচ্ছে বিনিয়োগে। তবে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের কারণে গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। আর বিনিয়োগ বাড়াতে প্রবাসী অধু্যষিত জেলায় থাকা গ্রামীণ নারীদের আর্থিক বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং পলস্নী এলাকায় বিনিয়োগের সুযোগ বৃদ্ধি করা হলে ভোগব্যয় অনেকটাই কমে বিনিয়োগ বাড়বে বলে নীতিনির্ধারকরা মনে করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<113736 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1