বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

টানা বর্ষণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

স্বদেশ ডেস্ক
  ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১১:১১
বন্যায় পানিবন্দি বসতবাড়ি -যাযাদি

কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানির তোড়ে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধার পলাশবাড়ী ও নেত্রকোনার পূর্বধলার নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। নদ-নদীর পানি বেড়ে বাঁধ ভেঙে বসতঘর, ফসলের জমি, বিভিন্ন স্থাপনা, সড়ক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাড়িঘরে পানি ওঠায় অনেকেই গবাদিপশু নিয়ে বাঁধ ও রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছে। দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। এসব এলাকা থেকে প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর : কুড়িগ্রাম : ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামের ধরলা এবং তিস্তাসহ সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের পানিও বিপৎসীমার খুব কাছ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সম্প্রতি কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতি ও ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি। দ্রম্নতগতিতে পানি বাড়ার ফলে পঞ্চম দফা বন্যায় কুড়িগ্রাম সদর, রাজারহাট, ফুলবাড়ী ও উলিপুর উপজেলার শতাধিক চর নতুন করে পস্নাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। ডুবে গেছে গ্রামীণ সড়ক। নৌকা ও কলা গাছের ভেলা ছাড়া যাতায়াতের কোনো মাধ্যম নেই। প্রায় ৫ হাজার হেক্টর আমন ও সবজি খেত তলিয়ে গেছে। ধরলা অববাহিকার কয়েকটি গ্রামে প্রবল স্রোতে ভেসে গেছে শতাধিক ঘর। পলাশবাড়ী (গাইবান্ধা) : গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নে করতোয়া নদীর বাঁধ ভেঙে ১৪টি গ্রাম পস্নাবিত হয়েছে। মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যান ও ত্রাণ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলীসহ স্থানীয় সাংবাদিকরা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। করতোয়া নদীর টোংরারদহ ও কিশোরগাড়ীর সুলতানপুরঘাট এলাকায় দুটি স্থানে সোমবার রাতে প্রায় ৬০ মিটার বাঁধ ভেঙে যায়। ফলে ইউপির কিশোরগাড়ী, তেকানী, চকবালা, কাশিয়াবাড়ী, পশ্চিম মির্জাপুর, প্রজাপাড়া, সগুনা, কেশবপুর, পশ্চিম রামচন্দ্রপুর, হাসানখোর, সুলতানপুর বাড়াইপাড়া, মুংলিশপুর ও জাইতর গ্রামে পানি প্রবেশ করে আমন ধান ও সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এলাকাবাসী জানায়, বন্যার পানি বাড়িতে প্রবেশ করায় অনেক পরিবার দুর্বিসহ জীবন-যাপন করছে। দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের সংকট। শ্রমজীবী মানুষের হাতে নেই কোনো কাজ। অসংখ্য পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রোপা আমন ধান, রবিশস্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও রাস্তা-ঘাট। এসব এলাকা পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুজ্জামান, ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম রিন্টু, ত্রাণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম, পলাশবাড়ী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক দুদুসহ বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকরা। পরিদর্শন শেষে ইউএনও কামরুজ্জামান বলেন, দ্রম্নত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণ ও রাস্তাঘাট উন্নয়নের ব্যবস্থা নেবেন। পূর্বধলা (নেত্রকোনা) : নেত্রকোনার পূর্বধলায় ভারী বর্ষণে আমন ফসলের একটা বড় অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলায় সরকারি হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৬৮৮ হেক্টর পুরোপুরি ও ৪১২ হেক্টর আমন ফসল আংশিক পানির নিচে তলিয়েছে। কৃষকদের দাবির পরিমাণ দ্বিগুণ হবে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১১ ইউনিয়নের ৩৩টি বস্নকের নিম্নাঞ্চলসহ উঁচু এলাকার আংশিক পস্নাবিত হয়েছে। উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের বাইঞ্জা, কালীপুর, ঘাগড়া, কাপাশিয়া, জারিয়া ইউনিয়নের বাড়হা, জারিয়া, মৌদাম কান্দাপাড়া, নাটেরকোনা, বৈরাটি ইউনিয়নের কাজলা, খামারহাটী, তেনুয়া, বৈরাটি, নারান্দিয়া ইউনিয়নের নারান্দিয়া, পাইলাটি, ভুগী, বিশকাকনী ইউনিয়নের ধলা, হলুদাটি, বিশকাকুনী, খলিশাউড় ইউনিয়নের ধারা, পাবই, পাজুনিয়া, গোহালাকান্দা ইউনিয়নের গোহালাকান্দা, মহিষবেড়, ধলামুলগাঁও ইউনিয়নের কুড়িকুনিয়া, ধলামুলঁগাওসহ অন্যান্য ইউনিয়নের নিচু এলাকা পস্নাবিত হয়। উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের বাইঞ্জা গ্রামের বুলবুল আকন্দ বলেন, অকাল বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যায় তার ৫৮ কাটা (৫ শতকে ১ কাট) জমির ফসল পুরোপুরি তলিয়ে গেছে। হোগলা ইউনিয়নের বহেরাকান্দা গ্রামের কৃষক ফারুক হোসেন ফকির ও ইসলাম উদ্দিন মন্ডল বলেন, এ বছর নিচু এলাকার পানি না কমায় সেগুলোতে আমন চারা রোপণ করতে পারেননি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শফিকুল ইসলাম বলেন, আমন রোপণের শেষ সময়ে টানা বর্ষণে নিচু এলাকা পস্নাবিত হয়ে উপজেলায় মোট উৎপাদনের প্রায় ৫৫০ মে. টন চাল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যার পরিমাণ প্রায় ২ কোটি টাকা। তবে পানি দ্রম্নত সরে গেলে ক্ষতির পরিমাণ কম হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে