বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
ফুলছড়ি-সাঘাটায় সম্মুখযুদ্ধ

২৪ অক্টোবর শহীদ হন ১২ বীর মুক্তিযোদ্ধা

ফুলছড়ি (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
  ২৪ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০
১২ মুক্তিযোদ্ধার সেই স্মৃতিস্তম্ভ

মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে আজ ২৪ অক্টোবর গাইবান্ধার সাঘাটা-ফুলছড়ি এলাকার এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে সাঘাটা উপজেলার প্রাণ কেন্দ্র বোনারপাড়ার অদূরে ত্রিমোহনী ঘাটে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে ৬ ঘণ্টাব্যাপী সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন ১২ বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধারাও ২৭ পাক সেনাকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটান।

ওইদিন স্থানীয়দের উদ্যোগে মুক্তিযোদ্ধাদের সমাহিত করা হয় দলদলিয়া গ্রামে। শহীদদের গণকবর ও স্মৃতিস্তম্ভটি সারাবছরেই অযত্ন ও অবহেলায় পড়ে থাকলেও স্থানীয় জনসাধারণের কাছে শুধুই স্মৃতি। চারদিকে ধানক্ষেত মাঝখানে ৬ বীর মুক্তিযোদ্ধা কবর। এখান থেকে একটু দূরেই আরও ৬ মুক্তিযোদ্ধা চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন। ফুলছড়ির শহিদুলস্নাহ, হাবিবুর রহমান, সাঘাটার আনছার আলী, আ, হাই, লালমনিরহাটের হাতিবান্ধার আহম্মদ আলী, প্রভাত চন্দ্র, ভরত চন্দ্র, বোঁচারাম দাস, ধনঞ্জয়, গাইবান্ধা সদরের হামিদুল হক মধু, পাবনার আব্দুল হাই এবং হাবিবুর রহমান।

মুক্তিযোদ্ধারা জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় গাইবান্ধার ভরতখালী-বোনারপাড়ার পার্শ্ববর্তী পদুমশহরে অস্ত্র ও গোলাবারুদ বহনকারী রেলওয়াগনে হামলা, সিংড়িয়া রেলব্রিজ পাহারায় নিয়োজিত ১২ রাজাকারকে হত্যা, ভরতখালী-গাইবান্ধা সড়কে পাকসেনা কনভয়ের ওপর হামলা এবং বাদিয়াখালী ব্রিজ ধ্বংসের সফল অভিযান পরিচালনা করে ১১নং সেক্টরাধীন রোস্তম আলী খন্দকার কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধারা বোনারপাড়া পাকসেনা শিবির আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন এবং ফুলছড়ির গলনা থেকে ২২ অক্টোবর গভীর রাতে বোনারপাড়ার ত্রিমোহনী ঘাট এলাকার কয়েকটি বাড়িতে আশ্রয় নেন।

২৪ অক্টোবর সূর্যোদয়ের আগেই পাক সেনাদের একটি বিশাল বাহিনী ত্রিমোহনী ঘাট এলাকা চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। শুরু হয় সম্মুখযুদ্ধ। সকাল থেকে শুরু হয়ে ৬ ঘণ্টাব্যাপী যুদ্ধে শহীদ হন ১২ বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধারাও ২৭ পাকসেনাকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটান। ওইদিন বিকালে স্থানীয় লোকজন যুদ্ধক্ষেত্রে বিচ্ছিন্নভাবে পড়ে থাকা ১২ বীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধার লাশ উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী দলদলিয়া গ্রামের দুটি স্থানে সমাহিত করে। ২০০১ সালে স্থানীয় উদ্যোগে এখানে নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। দীর্ঘদিন অযত্ন ও অবহেলায় থাকায় সেটি এখন সংস্কার করা হচ্ছে।

শহীদ ধনঞ্জয় বিশ্বাসের ছোট ভাই দলদলিয়া গ্রামের বাসিন্দা নির্মল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, ২৪ অক্টোবর আসলেই শুধু পরিষ্কার ও ধোয়া-মোছা করা হয়। ওইদিন পেরিয়ে গেলেও সারা বছর ময়লা-আর্বজনা দিয়ে ঢাকা থাকে শহীদদের গণকবর। একই গ্রামের বাসিন্দারা জানান, 'এখানে অনেক অফিসার কবর দেখার জন্য আসেন, কিন্তু এটি খিকি যাওয়ার পর আর কোনো খোঁজ নেয় না।' স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, 'এখানে শহীদ ১২ মুক্তিযোদ্ধাকে সমাহিত করা হয়েছে। কারা শহীদ হয়েছেন তাদের নাম ঠিকানা সংবলিত কোনো সাইন বোর্ড কিংবা তালিকা নেই।'

বীর মুক্তিযোদ্ধা গৌতম চন্দ্র মোদক জানান, স্মৃতি স্তম্ভটি ইতোমধ্যে সংস্কার করা হয়েছে। এখানে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে একটি মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘর নির্মাণের বরাদ্দ হয়েছে। দিনটি উপলক্ষে আজ দিনব্যাপী স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে। স্মরণ সভায় জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মতিন, ইউএনও মো. মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ গাইবান্ধা জেলার সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ও যুদ্ধকালীন কমান্ডার আলহাজ সামছুল হকসহ অন্যান্য বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<116351 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1