সিলেটে চালের সরবরাহ কম দেশি পেঁয়াজের দখলে বাজার

প্রকাশ | ২৪ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

কাইয়ুম উলস্নাস, সিলেট
সিলেটে চালের বাজার এখনো পুরো স্থির হয়নি। সরবরাহ কম থাকায় এবং বৃষ্টির কারণে চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। এদিকে ভারতের নানা ধরনের সিদ্ধান্তের কারণে দেশি পেঁয়াজের দখলে বাজার। তবে আলুর হিসাবটা একটু ভিন্ন। সবজির লাগামহীন দাম বাড়ায় আলু সিন্ডিকেট পালস্না দিয়ে বাড়িয়েছে। তবে সরকার আলুর দাম ৩৫ টাকা নির্ধারণের পর পরিস্থিতি কিছুটা পালটেছে। শুক্রবার সিলেটের কালিঘাটসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে পাওয়া গেল চাল, আলু ও পেঁয়াজের দাম বাড়ার এই সব নেপথ্যের কারণ। কালিঘাট আড়তের চালের ব্যবসায়ীরা জানান, সুনামগঞ্জের হাওড়ের ধানেই সিলেটের বাজার চলত। এ বছর এমনিতেই কৃত্রিম বন্যার কারণে ধান কম হয়েছে। তার ওপর রয়েছে উত্তরবঙ্গের 'মিল সিন্ডিকেট'। উত্তরবঙ্গে বেশ কিছু ধনী লোক মিল খুলে বসেছেন। এ বছর সরকার ধানের দাম নির্ধারণ করে দিলে এই মিল মালিকেরা লোক লাগিয়ে সুনামগঞ্জের হাওড়ের কাঁচা ধান কিনে নেয়। তারা ধান মিলে নিয়ে মজুত করেছে ঠিকই কিন্তু দাম বাড়ার অপেক্ষায় বাজারে সরবরাহ করছেন না। আবার বৃহত্তর সিলেটের কৃষকদের ধানে মোটামুটি সিলেটর চালের বাজার চলত। সঙ্গে ছিল ভারতীয় চালের আমদানির চালান। আগে কালিঘাটের রাস্তায় গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত চালের বস্তা নিয়ে ট্রাকের দীর্ঘ সারি ছিল। এখন রাস্তা ফাঁকা। সরবরাহ কম থাকায় সিলেটের বাজারে চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। বাজার ঘুরে দেখা গেল, আগে ২৮ মিনিকেট চালের বস্তা ছিল ২১০০ টাকা, এখন বিক্রি হচ্ছে ২৪০০ থেকে ২৫০০ টাকা। নতুন ২৮ মিনিকেট চালের বস্তা আগে ছিল ২১০০ টাকা, এখন ২২০০ টাকা। ২৯ পুরান চাল আগে ছিল ২০০০ টাকা, এখন তা ২৪০০ টাকা। নতুন লাল চাল ছিল ১৬০০ টাকা, এখন বস্তাপ্রতি ২০০০ টাকা। চিনি গুঁড়া ৫০ কেজি বস্তা ছিল ৩০০০ টাকা, এখন ৩২০০ টাকা। কাটারি ভোগ ছিল ২৫০০ টাকা, এখন ২৬৫০ টাকা। পাইকারি বাজারে বস্তাপ্রতি দাম বাড়ায় খুচরা বাজারেও বেড়েছে ৫ থেকে ৭ টাকা। দক্ষিণ সুরমার লালাবাজারের শাহ মনু মিয়া সন্সের ব্যবসায়ী রাসেল আহমদ বলেন, 'বন্যায় কিছু ফলন নষ্ট হইসে। তার উপরে চালের সিন্ডিকেট। যে কারণে বাজারে চালের ঘাটতি। আবার চালের গাড়ি পর্যাপ্ত সিলেটে প্রবেশ করলে দাম কমে যামে।' কালিঘাটের চাল বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি ফারুক আহমদ যায়যায়দিনকে বলেন, 'উত্তরবঙ্গের নতুন কিছু বিত্তশালী লোক এই ব্যবসায় এসেছেন। তারা অসংখ্য মিল খুলেছেন। মিলের এই মালিকেরা ধান কিনে নিয়ে মজুত করেছেন। যে কারণে বাজারে চাল নেই। সরকারকে বাজারে চালের সরবরাহ বাড়াতে কাজ করতে হবে।' পেঁয়াজপট্টি ঘুরে জানা গেল, সিলেটের লোকেরা দেশি পেঁয়াজ খুব একটা খান না। ভারত সীমান্তের এলাকা হওয়ায় এখানে খুব সহজে এলসির পেঁয়াজ প্রবেশ করে। কাটাকুটিতে কষ্ট কম, তাই ভারতের বড় সাইজের পেঁয়াজ এই অঞ্চলে সরবরাহ না হলে ক্রেতারা সংকটে পড়ে যান। এবার এলসির পেঁয়াজ আসা বন্ধ। তবে আশার কথা হলো, দেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে প্রচুর। ভারতের পেঁয়াজ কম কম আসায় দাম বেড়ে গেছে। আগে ছিল ৩৫-৪০ টাকা কেজি, এখন ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে এলসি পেঁয়াজ। যে কারণে দামটা বেশি মনে হচ্ছে। ভারতের পেঁয়াজের আমদানি না থাকায় দেশি পেঁয়াজ প্রবেশ করেছে সিলেটের বাজারে। তবে দাম আগে ছিল ৫০ টাকা, এখন তা ৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে ৯০ টাকা কেজি। ব্যাপারী আজহারী জানালেন, ফরিদপুর থেকে সিলেটের বাজারে পেঁয়াজ আসছে। এ বছর দেশি পেঁয়াজ থাকায় ভারতের আমদানি বন্ধ হওয়ার পরও চলা যাচ্ছে। ফরিদপুরের মিরকি গ্রামের কৃষক মিলন মিয়া বলেন, এই বছর তারা ৭৭ টাকা করে পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন। তারা আরও এক মাস দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারবেন। বিভিন্ন পাইকারি দোকান ঘুরে জানা গেছে, আলুর দাম বাড়ার মূল কারণ সবজির দাম বৃদ্ধি। বাজারে কোনো সবজিই ৫০ টাকার নিচে বিক্রি হচ্ছে না। যে কারণে 'আলু সিন্ডিকেট' মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেছে। তারা সবজির সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে আলুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। আগে আলু প্রতি কেজি ছিল ২৫ থেকে ২৮ টাকা, এখন খুচরা বাজারে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। সরকার ৩৫ টাকা আলুর দাম নির্ধারণ করে দেওয়ায় কিছু দোকানে দাম কমেছে। কিন্তু আলুর কৃত্রিম সংকট এখনো রয়ে গেছে। লালাবাজারের আমিরা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের ছাব্বির হোসেন লিটন বললেন, 'একদিকে বৃষ্টির কারণে এবার শীতের নতুন আলু বাজারে আসেনি, অন্যদিকে হিমাগারে মজুত করা হচ্ছে আলু। তবে সবজির দাম নাগালে না এলে আলুর দামও কমবে না।'