মহাদেবপুরে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন

বর্তমানে শেষ মুহূর্তের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। আগামী সপ্তাহের মধ্যে ধান কাটা-মাড়াই শুরু হবে

প্রকাশ | ২৪ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

ইউসুফ আলী সুমন, মহাদেবপুর (নওগাঁ)
নওগাঁর মহাদেবপুরে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে বাতাসে দুলছে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন -যাযাদি
দেশের উত্তর জনপদের খাদ্যভান্ডার খ্যাত নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় চলতি মৌসুমে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে আমন ধানের সোনালি শিষ বাতাসে দোল খাচ্ছে। দৃষ্টিসীমা ছাপিয়ে চারদিকে বিরাজ করছে অপার দুলুনি। এ দোলায় লুকিয়ে আছে হাজারো কৃষকের রঙিন স্বপ্ন। পোকামাকড় ও রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ ছাড়াই বেড়ে ওঠা ধানের শিষে ভরে গেছে মাঠ। দিগন্তজোড়া সোনালি ফসলের মাঠ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও বিকশিত করে তুলেছে। উপজেলার হাজারো কৃষক পরিবারের চোখে-মুখে এখন স্বপ্ন পূরণের প্রত্যাশা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা কোনো বিপর্যয় না ঘটলে কৃষকদের বাড়ির আঙ্গিনা ভরে উঠবে সোনালি ধানের হাসিতে। বর্তমানে শেষ মুহূর্তের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। আগামী সপ্তাহের মধ্যে ধান কাটা-মাড়াই শুরু হবে। নতুন ধান উঠবে কৃষকের গোলায়। ধান ঘরে তোলার স্বপ্নে চাষিরা বিভোর। গৃহস্থ আর কৃষান-কৃষানিরা গোলা, খলা, আঙ্গিনা পরিষ্কার করায় ব্যস্ত। সরকারের কৃষিবান্ধব কর্মসূচি, কৃষি অফিসের ব্যাপক তৎপরতা, কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রম, অনুকূল আবহাওয়া, সার, কীটনাশকসহ বাজারে কৃষি উপকরণের পর্যাপ্ত সরবরাহ, সহনশীল দাম, সহজলভ্যতা ও সেচের জন্য প্রয়োজনীয় বিদু্যতের সরবরাহ এবং আবাদ উপযোগী পরিবেশ ইত্যাদি বিবেচনায় চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে এবার আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮ হাজার ৩৩৫ হেক্টর। সেখানে আবাদ হয়েছে ২৮ হাজার ৭৫০ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪৪৫ হেক্টর বেশি। উৎপাদনেও লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রমের প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের। সরেজমিনে দেখা গেছে, কৃষকরা তাদের খেতের ধান কাটার অপেক্ষায় রয়েছেন। ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে কৃষক পরিবারসহ ব্যবসায়ীরা। খেতের মধ্যে পোঁতা বাঁশের কঞ্চি ও গাছের ডালের উপর ফিঙে, শালিক, দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বসে আছে। সুযোগ বুঝে ধানখেতের ক্ষতিকারক পোকা ওই পাখিরা খেয়ে ফেলছে। আবার অনেকে অধিক ফলন পাওয়ার আশায় নিজ নিজ জমিতে রাসায়নিক ও জৈব সার প্রয়োগ করছে। কেউ আবার খেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত রয়েছে। কখন নতুন ধান ঘরে তুলবে এ স্বপ্নে বিভোর ওই কৃষকরা। তাই প্রতিটি বাড়ি বাড়ি চলছে নতুন ধান ঘরে তোলার নবান্ন উৎসবের প্রস্তুতি। উপজেলার ধর্মপুর গ্রামের কৃষক রহমান বলেন, গতবারের চেয়ে এবার ধান ভালো হয়েছে। আর কয়েকদিন পর কাটা শুরু করা যাবে। তিনি বলেন, খেতে রোগ-বালাই ও পোকা আক্রমণ করতে পারেনি। প্রকৃতি অনুকূলে থাকলে স্বপ্নের সোনালি ধান যথাসময়ে ঘরে তুলতে পারবেন। সুলতানপুর গ্রামের কৃষক তারেক বলেন, সেচ খরচ এবং শ্রমের অধিক মূল্য ও কৃষি শ্রমিকের কিছু সমস্যা থাকলেও অনুকূল আবহাওয়ায় সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত সার, কীটনাশক ও বিদু্যৎ সরবরাহ পাওয়ায় এ বছর আমন ধান খুবই ভালো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ধানখেতের পাশে দাঁড়ালে মন জুড়িয়ে যায়। এ বছর তিন একর জমিতে আমন আবাদ করেছেন। গত বছরের তুলনায় এবার অধিক ফলন হবে বলেও আশা করছেন তিনি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অরুন চন্দ্র রায় বলেন, বাম্পার ফলন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে আমরা মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে আসছি। কৃষকরা যাতে লাভবান হতে পারে এবং কোনো ধরনের সমস্যায় না পড়ে এ জন্য আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি। আশা করি বিগত মৌসুমের মতো এবারও আমন ধানের বাম্পার ফলন হবে। এতে কৃষক অনেকটা লাভবান হবে বলেও আশা করছেন তিনি।