আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও দুর্নীতি

যশোর হিসাবরক্ষণ অফিসের সাবেক অডিটর গোলাম রসুল ও তার স্ত্রীর কারাদন্ড

গোলাম রসুল বর্তমানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়ের পিএ-৫ শাখার অডিটর হিসেবে কর্মরত।

প্রকাশ | ২৮ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও দুর্নীতির আলাদা মামলায় যশোর জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের সাবেক অডিটর গোলাম রসুলকে ৮ বছর ও তার স্ত্রীকে ৭ বছর কারাদন্ড ও অর্থদন্ড দিয়েছে যশোরের একটি আদালত। মঙ্গলবার স্পেশাল জজ (জেলা ও দায়রা জজ) আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সামছুল হক আলাদা রায়ে এ সাজা দিয়েছেন। দন্ডপ্রাপ্তরা হলেন- যশোর মণিরামপুরের মনোহরপুর গ্রামের মৃত মোবারক আলী সরদারের ছেলে শহরের পূর্ব বারান্দীপাড়ার বাসিন্দা গোলাম রসুল ও তার স্ত্রী আয়েশা খাতুন। গোলাম রসুল বর্তমানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়ের পিএ-৫ শাখার অডিটর হিসেবে কর্মরত। সরকার পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেছেন দুদকের স্পেশাল পিপি জিএম জুলফিকার আলী। মামলার অভিযোগে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে গোলাম রসুল যশোর জেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের অডিটর হিসেবে চাকরিরত ছিলেন। ওই সময়ে শহরের পূর্ব বারান্দীপাড়ায় স্বামী-স্ত্রীর নামে ১০.১০ শতক জমি ক্রয় করেন। ২০১২ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে তারা এ জমিতে একটি তিনতলা বাড়ি নির্মাণ করেন। বাড়িটি নির্মাণে তাদের ব্যয় হয় ৬৪ লাখ ১৮ হাজার ৪৯৪ টাকা। সেহেতু এ জমি ও বাড়ির অর্ধেক ৫ দশমিক ৫ শতক জমির মালিক তার স্ত্রী আয়েশা খাতুন। আয়েশা খাতুন ২০১২ সালের ৩১ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রাপ্ত নোটিশের জবাবে তার আয় ও বাড়ি নির্মাণে ব্যয় দেখিয়েছেন ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত কার্যালয় যশোর বিষয়টি তদন্ত শুরু করে। এর পরে গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলী দিয়ে বাড়ি নির্মাণের খরচ নিরূপণ করা হয়। বাড়ি নির্মাণে এবং আয়েশা খাতুনের সম্পদের হিসাব বিবরণীতে ১৯ লাখ ২৩ হাজার ৫৬৮ টাকা ৫০ পয়সার সম্পত্তি গোপন করেছেন। এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন যশোরের সহকারী পরিচালক আমিনুর রহমান ২০১৪ সালের ২৮ এপ্রিল জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও দুর্নীতির অভিযোগে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। এ মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগে সত্যতা পাওয়ায় ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল আয়েশা খাতুনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন। অপরদিকে, গোলাম রসুল যশোরে চাকরিকালীন সময়ে তার স্ত্রী আয়েশা খাতুনের সঙ্গে যৌথভাবে ১০ দশমিক ১০ শতক জমি ক্রয় করেন। যার মধ্যে তার নিজের অংশ ৫ দশমিক ৫ শতক। ওই জমিতে তারা যৌথভাবে তিনতলা একটি ভবন নির্মাণ করেন। গোলাম রসুল তার সম্পদ বিবরণীতে তিনতলা বাড়ি নির্মাণের কথা উলেস্নখ করে ব্যয় দেখান ২৭ লাখ ৬১ হাজার ৩৭৫ টাকা। দুদকের অনুসন্ধানে ভবনের নির্মাণ খরচ পাওয়া যায় ৬৪ লাখ ১৮ হাজার ৪৯৪ টাকা। অর্ধেক হিসেবে গোলাম রসুলের সম্পদ বিবরণীতে ৩২ লাখ ৯ হাজার ২৪৭ টাকা দেখানোর কথা। সে হিসেবে তিনি ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৮৭২ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেছেন। এছাড়া তিনি আয়কর নথিতে বাড়ি নির্মাণের ব্যয় ১৪ লাখ ১১ হাজার ৩৭৫ টাকাসহ সর্বমোট ২১ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ টাকার হিসাব দেখিয়েছেন। দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে তার মোট ৩৭ লাখ ১৪ হাজার ১৮০ টাকা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ পাওয়া গেছে। যার বিপরীতে তার কোনো ঋণ নেই। এতে তিনি ১৫ লাখ ২৯ হাজার ৬৮০ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। এ ব্যাপারে দুদক যশোর সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমিনুর রহমান বাদী হয়ে ২০১৪ সালের ১৬ জুলাই কোতোয়ালি থানায় দুদক আইনে মামলা করেন। এ মামলার তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ১৭ আগস্ট আসামি গোলাম রসুলকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। আলদা এ মামলার দীর্ঘ সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আসামি আয়েশা খাতুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৬(২) ধারায় ৩ বছর সশ্রম কারাদন্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ের আরও ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড ও দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় ৪ বছর সশ্রম কারাদন্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৪ মাসের কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন বিচারক। একই সাথে জ্ঞাত আয়ের বহির্ভূত ১৯ লাখ ২৩ হাজার ৫৬৮ টাকা ৫০ পয়সা জরিমানা করা হয়েছে। অপরদিকে আসামি গোলাম রসুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৬(২) ধারায় ৩ বছর সশ্রম কারাদন্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ের আরও ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড ও দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় ৫ বছর সশ্রম কারাদন্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৪ মাসের কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন বিচারক। একই সাথে জ্ঞাত আয়ের বহির্ভূত ১৫ লাখ ২৯ হাজার ৬৮০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত গোলাম রসুল ও তার স্ত্রী আয়েশা খাতুন বর্তমানে কারাগারে আছেন।