মাঠে মাঠে এখনো সবুজ ধান পিছিয়ে পড়ছে রোপা আমন

প্রকাশ | ২৯ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

বাবরুল হাসান বাবলু, তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ)
মাঠে পাকা আমন ধান -যাযাদি
পিছিয়ে পড়তে পারে রোপা আমন। যথাসময় ধান কাটার সম্ভাবনা কম। চলতি বছর দফায় দফায় বন্যায় রোপা আমন জমি নষ্ট; আবারও জমি রোপণ- সব মিলিয়ে এবার পিছিয়ে যাচ্ছে আমন ধান কাটা উৎসব। তবে সীমান্তে অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে রোপণকৃত ফসল যথাসময় কাটা যাবে বলে দাবি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভিন্ন ইউনিয়নের উপসহকারী কর্মকর্তাদের। তাহিরপুর উপজেলার উত্তর-পূর্বে লাউড়েরগড় থেকে পশ্চিমে বীরেন্দ্রনগর পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার সীমান্তে ছোট ছোট হাওড়ের ক্ষেতজুড়ে এখন স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি আমন ধান চাষাবাদ করা হয়। দফায় দফায় বন্যায় ধান ক্ষতিগ্রস্ত না হলে এই সময় পাকা ধানের গন্ধে ম ম সুবাস বইতো হাওড়জুড়ে। চাষিদের মুখে নতুন ধান কাটার হাসির ঝিলিক দেখা যেত। চলতি বছর সেই হাসি হয়ত আর কটা দিন পরই দেখতে হবে। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মুখে মলিন হাসিও থাকবে। সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলা মূলত বোরো ফসলপ্রধান এলাকা। উপজেলার সাত ইউনিয়নের মধ্যে চার ইউনিয়নের কিছু অংশে আমন ধান চাষাবাদ করা হয়। চলতি বছর উপজেলার বালিজুরী, বাদাঘাট, উত্তর বড়দল ও উত্তরশ্রীপুর ইউনিয়নে ১২ হাজার একর জমিতে আমন ধান চাষাবাদ করা হয়েছিল। এর মধ্যে এ বছর একাধিকবার বন্যায় অনেক কৃষকের আমন ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকার জমিতে শেষ বন্যার পর শেষতক কৃষক আর আমন ধান রোপণ করতে পারেননি। সরেজমিন উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের সীমান্ত গ্রাম বরগুফ হাওড়ে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ হাওড়জুড়ে বাতাসে-বাতাসে দোল খাচ্ছে সবুজ ধান। সে সময় কথা হয় হাওড়ের বড়গুফ গ্রামের কৃষক হামিদ মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, এবার বন্যায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। সীমান্ত এলাকার জমিগুলোতে পানি না উঠলেও পাহাড়ি ঢলের পানি জমির ওপর দিয়ে গেছে। যে জমিগুলো ভালো রয়েছে, সে জমিগুলোতে ফলন কিছুটা ভালো হবে। সীমান্ত পথ ধরে আরও কিছুদূর এগুনোর পর কড়ইগড়া হাওড়ে গিয়ে দেখা হয় গ্রামের কৃষক আবদুল মোতালেবের সঙ্গে। তিনি জানান, চলতি বছর তিনি স্বল্পমেয়াদি জাতের ধান চাষাবাদ করেননি, অন্যান্য জাতের ধান চাষাবাদ করায় পাকতে একটু দেরি হচ্ছে। জানা যায়, ব্রি-৩৩ ও বিণা-৭ এ দুটি জাত স্বল্পমেয়াদি। অন্যান্য জাতের ধান যেখানে পাকতে সময় লাগে ১৪০-১৪৫ দিন, সেখানে ব্রি-৩৩ ও বিণা-৭ পাকতে সময় লাগে ১০০-১১০ দিন। বাদাঘাট ইউনিয়নের পুরান লাউড় মোকসেদপুর গ্রামের গ্রামের কৃষক রহিম উদ্দিন জানান, চলতি আমন মৌসুমে তিনি তিন বিঘা জমিতে আগাম জাতের আমন ধান রোপণ করেছেন, ফলনও ভালো হয়েছে। জমিতে বন্যার পানি উঠেনি। তিনি আশা করছেন, আগামী সপ্তাহ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ধান কাটতে পারবেন। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, সীমান্ত এলাকায় কিছু কিছু জমির ধান পাকতে শুরু করেছে। সেগুলো হয়ত কয়েক দিনের মধ্যে কাটা যাবে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাওড়ে ধান পাকতে সময় লাগবে। তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান উদ দৌলা বলেন, চলতি বছর একাধিকবার বন্যায় কৃষক কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বারবার তাদের বীজতলা তৈরি করতে হয়েছে। এতে কিছুটা সময়ও গেছে। বন্যায় যে সমস্ত কৃষকের ধানের ক্ষতি হয়নি, তারা যথাসময় তাদের ধান কাটতে পারবেন, তবে সেটা মোট আবাদি জমির সামান্য।