জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ও স্বাস্থ্য বিধি মানছে না রোহিঙ্গারা

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে জনসংখ্যা যে হারে বাড়ছে, তা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত

প্রকাশ | ০১ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

মো. আরাফাত সানী, টেকনাফ (কক্সবাজার)
কক্সবাজারের টেকনাফ এবং উখিয়ার ৩৮টি শরণার্থী শিবির ও একটি আশ্রয়কেন্দ্রে কয়েক লাখ রোহিঙ্গার বসবাস। তারা প্রতিনিয়ত ছোট-বড় অপকর্ম করেই চলেছে। মানছে না প্রচলিত আইন-কানুন। পাশাপাশি তারা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ও স্বাস্থ্যবিধিও মানছে না। তাই শিবিরগুলোতে জনসংখ্যা যে হারে বাড়ছে, তা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ক্যাম্পে কর্মরত বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার থেকে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক এ দেশে পালিয়ে আসার সময় অনেক নারীই ছিলেন সন্তানসম্ভবা। এর পর গত তিন বছরেও জন্ম নিয়েছে অসংখ্য রোহিঙ্গা নবজাতক। সব মিলিয়ে ১২ লাখ আশ্রিত রোহিঙ্গার সঙ্গে যোগ হয়েছে আরও কয়েক লাখ নবজাতক শিশু। এমনকি ক্যাম্পগুলোয় অন্তঃসত্ত্বা মা কতজন আছেন বা বাংলাদেশে আসার পর এসব শিবিরে কত রোহিঙ্গা নবজাতক শিশুর জন্ম হয়েছে, তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছেও পূর্ণাঙ্গ হিসাব নেই। বেশির ভাগ নারী সন্তান প্রসবের জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসতেও রাজি হন না। মিয়ানমারের অধিকাংশ মানুষ নিরক্ষর। অশিক্ষিত এসব রোহিঙ্গা মুসলমান ধর্মকে বেশি প্রাধান্য দিতে গিয়ে জন্মনিয়ন্ত্রণে অনাগ্রহী। ফলে শরণার্থী শিবিরে অবস্থানরত ভাসমান জীবনেও থেমে নেই তাদের উচ্চ জন্মহার। যার ফলে জন্ম নিচ্ছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নবজাতক। যার পুরো চাপটাই এখন পড়েছে আশ্রয়দাতা বাংলাদেশের ওপর। ২৭নং নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একাধিক নারী ও পুরুষের সঙ্গে কথা হয়। কারও কারও সন্তান সংখ্যা ১০ থেকে ১২। তাদের ভাষায়, এত সন্তান সংখ্যার কারণ 'আলস্নাহ দিয়েছে'। নয়াপাড়া ক্যাম্পের বাসিন্দা আরেফা বেগমের সঙ্গে কথা হলে জানান, জন্মনিয়ন্ত্রণ এটা আবার কী? আমরা চাই বেশি করে সন্তান জন্ম হোক। আমাদের মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য দখল করতে হবে। দখল করতে হলে যুদ্ধে নামাও প্রয়োজন হতে পারে। আমরা চাই আমাদের সন্তান সেদেশের মগের সঙ্গে যুদ্ধ করে আরাকান রাজ্য জয় করবে। সম্প্রতি ইউনিসেফের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের কক্সবাজারে অবস্থানরত ৫ লাখ রোহিঙ্গা শিশু রাষ্ট্রহীন শরণার্থী অবস্থায় রয়েছে। তারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন এবং হতাশা ও নৈরাশ্যের ঝুঁকিতে আছে। এছাড়া শরণার্থী শিবিরে নিত্যদিন মাদক, চোরাচালান, অপহরণ, হত্যা ও ধর্ষণ বেড়েই চলছে। চলছে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি। নেপথ্যে চলছে ইয়াবার ভাগ-বাঁটোয়ারা ও আধিপত্য বিস্তার। এসবের সঙ্গে জড়িত সিংহভাগ সশস্ত্র রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রম্নপ। তারা টাকার লোভে মানুষ হত্যা করতেও দ্বিধাবোধ করে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যমতে, কক্সবাজারের ক্যাম্পসহ রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করে চলতি বছরের ৯ মাসে শতাধিক দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় ২১১টি গোলাবারুদ পাওয়া গেছে। এসব আগ্নেয়াস্ত্রসহ অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা ডাকাতকে আটক করা হয়েছে। যাদের বেশির ভাগই রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা। এর আগের বছর ২৬টি দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্রসহ ১৩৮টি গোলাবারুদ উদ্ধার করেছিলর্ যাব। রোহিঙ্গাদের হাতে এত অস্ত্র ও ইয়াবা কীভাবে আসে- প্রশ্ন সচেতন মহলের। এদিকে করোনা প্রতিরোধে রোহিঙ্গারা মানে না কোনো স্বাস্থ্যবিধি। স্বাস্থ্যবিধির কথা বললেই তারা বলে রোগ-বালাই সবই আলস্নাহর দান। আলস্নাহ পাকের হুকুম ছাড়া কিছুই করার নেই। করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সবাইকে মাস্ক ব্যবহারে গুরুত্বারোপ করা হলেও রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে তা মানছে না কেউ। এছাড়া স্থানীয় শ্রমবাজার পুরোপুরি রোহিঙ্গাদের দখলে। স্থানীয় শ্রমজীবীদের ভাষ্যমতে, রোহিঙ্গারা গ্রামাঞ্চলে গিয়ে দিনমজুর, জেলে ও কৃষি কাজ করে বাড়তি আয় করেই চলছে। স্থানীয় এক কৃষক জানান, দেশীয় শ্রমিকের দাম বেশি। বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে কম মূল্যে শ্রমিক নিতে হলে রোহিঙ্গা ছাড়া পাওয়া যায় না। এছাড়া রোহিঙ্গাদের দিয়ে যা ইচ্ছা করানো যায়। কক্সবাজারের ১৬ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হেমায়েতুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গাদের অবৈধ অস্ত্র ও মাদকের প্রবেশ রোডগুলো চিহ্নিত করে সমূলে উৎখাতের চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার এবং অস্ত্র সরবরাহকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।