শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দৃষ্টিনন্দন শিকারি মাছরাঙা

এ পাখির দেহের তুলনায় মাথা বড়, ঠোঁট লম্বা ও চোখা চঞ্চু, খাটো পা ও লেজ রয়েছে। তবে স্ত্রী পাখি ও পুরুষ পাখির ক্ষেত্রে দেহের রঙের ভিন্নতা রয়েছে। অধিকাংশ মাছরাঙা বিষুবীয় অঞ্চলে বসবাস করে ও বড় একটা অংশকে শুধু বনে দেখা যায়
মামুন তানভীর, দশমিনা (পটুয়াখালী)
  ০১ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০
শিকার মুখে মাছরাঙা -যাযাদি

দৃষ্টিনন্দন শিকারি পাখি মাছরাঙা। তাদের গায়ের রং খুবই উজ্জ্বল। অ্যান্টার্কটিকা বাদে পৃথিবীর প্রায় সব অঞ্চলেই মাছরাঙার দেখা মিলে। অষপবফরহরফধব (অ্যালসিডিনিডি) গোত্র ও অষপবফরহবং (অ্যালসিডিনিস) উপবর্গের সব প্রজাতিই মাছরাঙা নামে পরিচিত। এ উপবর্গের তিনটি গোত্র রয়েছে। গোত্রগুলো হলো- অষপবফরহরফধব (গাঙ মাছরাঙা) ঐধষপুড়হরফধব (গেছো মাছরাঙা) ও ঈবৎুষরফধব (পান মাছরাঙা)। তবে পৃথিবীতে প্রায় ৯০ প্রজাতির মাছরাঙা রয়েছে বলে জানা যায়।

এ পাখির দেহের তুলনায় মাথা বড়, ঠোঁট লম্বা ও চোখা চঞ্চু, খাটো পা ও খাটো লেজ রয়েছে। তবে স্ত্রী পাখি ও পুরুষ পাখির ক্ষেত্রে দেহের রঙের সামান্য ভিন্নতা রয়েছে। অধিকাংশ মাছরাঙা বিষুবীয় অঞ্চলে বসবাস করে এবং এদের বড় একটা অংশকে কেবলমাত্র বনে দেখা যায়। এরা অনেক ধরনের প্রাণী শিকার করে; বড় একটি অংশ মাছ শিকার করে। সাধারণত গাছের ডাল থেকে ডাইভ দিয়ে পানির মধ্যে মাছ শিকার করে। অন্যান্য শিকারের মধ্যে রয়েছে পোকামাকড়, ব্যাঙ, সরীসৃপ, পাখি এমনকি ছোট আকারের স্তন্যপায়ী প্রাণীও।

মাছরাঙা মাটি ও গাছের গর্তে বাসা বাঁধে। সাধারণত জলাশয়ের পাশে খাড়া পাড়ের গর্তে এরা বাসা বানায়। কয়েক প্রজাতির দ্বীপবাসী মাছরাঙা বৈশ্বিকভাবে বিপদগ্রস্ত বলে বিবেচিত।

উপকূলীয় অঞ্চলে পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গেলে কখনো নদীর পাড়ঘেঁষে, কখনো গ্রামের আঁকাবাঁকা পথের ধারে ছোট-বড় পুকুরে বাঁশের খুঁটিতে দেখা মেলে দৃষ্টিনন্দন শিকারি এ পাখির। তবে গ্রামে পাতি মাছরাঙা বেশি রয়েছে। এই মনকাড়া পাখিরও নানা নাম আছে। উপকূলে যেসব মাছরাঙা দেখা যায় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পাতি মাছরাঙা, সাদাবুক মাছরাঙা, বাদামিডানা মাছরাঙা, ছোট মাছরাঙা, কলার্ড মাছরাঙা, পাকড়া মাছরাঙা ইত্যাদি। মাছরাঙা পানির ধারে ও বনে বসবাস করে। এদের বিচরণ সারাদেশে।

যেখানে একটু পানি আছে সেখানেই তারা খুঁটির ওপর ওঁত পেতে থাকে। মাছ শিকারের কৌশল আলাদা রকম। এই পাখির বিচক্ষণতা আছে বলেই মানুষের দেখামাত্র স্থির থাকে না। তবে এরা শান্ত প্রকৃতির, মাছ ধরায় পটু। নীরব ও চুপচাপ ত্বরিতগতিতে পুকুরে মাছ শিকারে ঝাঁপিয়ে পড়ে। পানির গভীরেও প্রবেশ করতে দ্বিধা করে না। অনেক পাখির ভিড়ে এ পাখি রূপে-গুণে অনন্য।

মাছরাঙার প্রধান খাদ্য মাছ হলেও পানির ওপরে ভেসে থাকা নানা ধরনের পোকা-মাকড় খায়। এদের ডিমের রঙ সফেদ সাদা। হেমন্তের পর বসন্তে স্ত্রী-পুরুষ জোড়া বাঁধে। তারপর তৈরি করে বাসা। অন্য পাখির চেয়ে প্রখরতা আছে বলে বাসা আলাদা রকমের হয়। বাসা সহজে কেউ চিনতে পারে না। যেসব জায়গায় শীতকালে পানি জমে যায়, সেসব জায়গার মাছরাঙারা অন্যত্র যাওয়ার সংকেত অনুমান করতে পারে। এক সময় গ্রামের নদ-নদীর ধারে ঝোঁপে, বিলে-ঝিলে, ধানখেতে, পুকুর পাড়ে, জমে থাকা অল্প পানিতে মাছরাঙা দেখা যেত।

সময়ের বিবর্তনে পরিবেশ দূষণ, নির্বিচারে গাছ কাটা, জমিতে কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে পাখির বিচরণক্ষেত্র ও খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে বিলুপ্তির পথে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন পাখি।

দশমিনা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আবু সাইম আল সালাউদ্দিন জানান, ফসলের মাঠে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পোকামাকড় মারা যায়। ফলে পাখিরা খাদ্য সংকটে ভোগে। আবার ফসলের কিটনাশক খেয়ে পাখিও মারা যাচ্ছে। একই সঙ্গে বনাঞ্চল কেটে উজাড় করে ফেলা হচ্ছে। এতে করে পাখি তার আবাসস্থল হারাচ্ছে। পাখি বংশ বিস্তার করতে পারছে না। পাখি রক্ষায় সবার সচেতন হওয়া জরুরি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<117407 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1