মান্দায় ভিক্ষুকের দানের টাকায় মসজিদের সাব-মার্সিবল পাম্প

প্রকাশ | ০১ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

মান্দা (নওগাঁ) প্রতিনিধি
প্রতিবন্ধী মোজাম হোসেন
নওগাঁর মান্দায় প্রতিবন্ধী মোজাম হোসেনের ভিক্ষার জমানো টাকা মসজিদে দেওয়া হয়েছে সাব-মারসিবল পাম্প কেনার জন্য। গত এক মাস থেকে মুসলিস্নরা ওই সাব-মারসিবল পাম্পের তোলা পানিতে অজু করে মসজিদে নামাজ আদায় করছেন। মান্দা সদর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম বাদলঘাটা মৎস্যজীবী পাড়ায় নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম মোজাম হোসেনের। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে মোজাম হোসেন সবার বড়। জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী মোজাম মেরুদন্ড সোজা না হওয়ায় দুই পা ও হাতের তালুতে ভর দিয়ে চলেন। ঠিকমতো কথাও বলতে পারেন না। একসময় ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। একটি থলি কখনো গলায় ঝুঁলিয়ে বা কোমরে বেঁধে ভিক্ষা করে থাকেন। সংসারে দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে শফিকুল ইসলাম মাছ শিকারসহ বিভিন্ন পেশা এবং ছোট ছেলে বাবু অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালায়। তারা স্ত্রীসহ আলাদা সংসারে থাকেয়। মেয়েকেও বিয়ে দিয়েছেন। প্রায় আট বছর আগে স্ত্রী সুফিয়ার সঙ্গে বনিবনা না হওয়া তাকে তালাক দিয়ে অন্যত্র চলে যান। পরে মোজাম হোসেন দ্বিতীয় বিয়ে করে একটি টিনের ছাপড়াঘরে বসবাস করেন। স্ত্রীকে নিয়েও মাঝেমধ্যে তিনি ভিক্ষা করেন। প্রতিদিন ভিক্ষার উর্পাজনে যে আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালাতে হয়। আর ভিক্ষার থলিতে একটু একটু করে জমিয়েছেন টাকা। তা দিয়ে গত এক মাস আগে বাড়ির পাশের মসজিদে মুসলিস্নদের অজুর কষ্ট দূর করতে সাবমারসিবল পাম্প কিনে দিয়েছেন। প্রসাদপুর বাজারের বাসিন্দা আল ইমরান বলেন, দু'মুঠো ডাল-ভাত জোগাড় করার জন্য হাঁটতে না পেরে যিনি এ দুয়ার হতে ওই দুয়ারে হাত পেতে দু'চারআনা পয়সা জমিয়ে আলস্নাহর ঘর মসজিদে বিশুদ্ধ পানির জন্য সাবমারসিবল পাম্প কিনতে দান করেছেন, সেই ভিক্ষুক যুগ যুগ বেঁচে থাক মানুষের মাঝে। মোজাম হোসেনের বড় ছেলে শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা মৎস্যজীবী গরিব মানুষ। সংসার চালাতে বিভিন্ন পেশার কাজ করতে হয়। বাবা ভিক্ষা করে সংসার চালান। টিনের একটা ছাপড়াঘরে আলাদা থাকেন। বলতে গেলে কষ্ট করেই বাবা থাকেন। মৎস্যজীবী পাড়ার প্রধান কামাল হোসেন বলেন, তিনি ইচ্ছে থেকেই মটর কেনার জন্য প্রায় ১৬ হাজার টাকা দিয়েছেন। তার সঙ্গে আরও সাড়ে ১১ হাজার টাকা যোগ করে মটর বসানোর কাজটি সম্পূর্ণ করা হয়েছে। মান্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন বলেন, মোজাম হোসেন ভিক্ষা করেই জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। ওই এলাকার অনেক বৃত্তবান ব্যক্তি আছেন যারা ইচ্ছে করলেই মসজিদের জন্য একটি সাবমারসিবল দিতে পারতেন। আমি জনপ্রতিনিধি হয়েও সেখানে সহযোগিতা করতে পারিনি। একজন প্রতিবন্ধী এবং ভিক্ষুক মসজিদের জন্য পানির ব্যবস্থা করে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।