কবুতরের পরিচর্যা করছেন আব্দুল মন্নাফ -যাযাদি
কবুতরকে বলা হয় শান্তির প্রতীক। আগের যুগে রাজা-বাদশাহরা কবুতরের পায়ে বার্তা বেঁধে তথ্য আদান-প্রদান করতেন বলে জানা যায়। অন্যদিকে, রোগীর পথ্য হিসেবেও কবুতরের মাংসের জুড়ি নেই। শখের বসে অনেক তরুণ কবুতর পালন করেন। কবুতর বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হন। শৌখিন কবুতরপ্রেমী অনেকেই সফলতা পেয়েছেন। তেমনই একজন নাটোরের সিংড়া উপজেলার চকসিংড়া মহলস্নার আব্দুল মন্নাফ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করে ইলেকট্রনিক্স ব্যবসার পাশাপাশি অল্প সময়ে কবুতর পালনে সফলতা পেয়েছেন।
বর্তমানে দুটি কবুতর ফার্মের মালিক তিনি। তার কাছে আছে ইন্ডিয়ান ফান্টেল, লাহোর কালো, হলুদ, তুরিবাজ লাল, কালো, এলমন্ড, ইন্ডিয়ান লোটন, দেশি লোটন, বাশিরাজ কোকা, মাক্সি রেচার হুমা, সবজে
গিরিবাজ, লাল, সাদা, হলুদ বোম্বাই, আমেরিকান সো কিং, কালদম, মুক্ষি লাল, হলুদ, কালো, সিলভার, কফি, ঝরনা শার্টিন, ল্যাভেন্ডার সোয়া চন্দন ইত্যাদি প্রজাতির কবুতর। এছাড়া লাভবার্ডস, কোকাটেল, জাভা, বাজরিগার পাখি রয়েছে।
প্রাথমিকভাবে দুই জোড়া কবুতর নিয়ে শুরু করে এখন তার কবুতরের সংখ্যা পঞ্চাশ জোড়া ছাড়িয়ে গেছে। প্রায় বিশ বছর আগে শখের বশে কবুতর পালন শুরু করলেও এখন আর তা শখে সীমাবদ্ধ নেই, পরিণত
হয়েছে পেশায়। খরচ বাদে বর্তমানে তার মাসিক আয় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা।
আব্দুল মন্নাফ তার ছোটবেলায় প্রতিবেশী আত্মীয়দের বাসায় রং-বেরঙের কবুতর দেখতেন। তখন থেকেই কবুতর পালনের ইচ্ছে জাগে তার মনে। কিন্তু তার মা কবুতর পালনে বাধা দিতেন। ঈদের সালামির টাকা জমিয়ে একবার তার চাচাতো ভাইদের নিয়ে হাটে যান। সে সময় ২০০ টাকা দিয়ে দুই জোড়া কবুতর কিনে আনেন। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ক্রমে তার কবুতর বেড়েছে, বেড়েছে রকমও। এখন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শৌখিন কবুতরপ্রেমীরা কবুতর কিনতে ও প্রশিক্ষণ নিতে আসে মন্নাফের কাছে। তবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কবুতরের দাম যতটা সম্ভব কম রাখেন মন্নাফ। অনলাইনেও কবুতর বিক্রি করেন তিনি।
মন্নাফের কবুতরের খামারের নাম মন্নাফ-শারমিন পিজিওন অ্যান্ড বার্ড গার্ডেন। তিনি বাগানের পাশে একটি বড় ঘরে খাঁচায় কবুতর পালন করেন। কিছু কবুতর ছেড়েও পালন করেন। তিনি বলেন, 'দেশে অসংখ্য ছাদ ফাঁকা পড়ে আছে। এসব ছাদে ঘর তুলে যে কেউ অনায়াসে কবুতর পালন করতে পারেন। তার মতে, কবুতর বিনোদনের অন্যতম উৎস। এরা খুব শান্ত ও মায়াবী পাখি। মানুষের সাহচর্য খুব পছন্দ করে।
তিনি জানান, বেকার যুবকরা কবুতর পালন করে স্বনির্ভর হতে পারে। তবে এজন্য প্রশিক্ষণেরও প্রয়োজন রয়েছে। ভালো কোয়ালিটির লাহোর বা ফান্টেল কবুতর বেশ লাভজনক। সব সময় এসব প্রজাতির চাহিদা থাকে। তার মতে, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আমাদের দেশের কবুতরের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তাই সরকারি সহযোগিতা পেলে কবুতর রপ্তানি করে বছরে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এস এম খুরসিদ আলম জানান, আব্দুল মন্নাফ একজন সফল খামারি। শখের বশে শুরু করলেও এখন তিনি বেশ সফল। এছাড়াও এ উপজেলায় শতাধিক কবুতর খামারি রয়েছে। তাদেরকে তারা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। খামারিরা চাইলে তারা সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।