আড়াইহাজারের বেনারশীর সুনাম দেশজুড়ে

প্রকাশ | ২৪ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

রফিকুল ইসলাম রানা, আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ)
বেনারশী বোনার কাজে ব্যস্ত এক তাঁতি -যাযাদি
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার দুটি গ্রামের একটি ফতেপুর ইউনিয়নের লতব্দী, অপরটি হাইজাদী ইউনিয়নের নারান্দী। দুটি গ্রামই 'আড়াইহাজারের বেনারশী পলস্নী' নামে পরিচিত শত বছর ধরে। এখানে তৈরি তাঁতকলে বোনা বেনারশী ও কাতান শাড়ির সুনাম ও চাহিদা রয়েছে সারাদেশে সমানতালে। এ পলস্নীতে তৈরি বেনারশী ও কাতান শাড়ি যায় ঢাকার মিরপুরে। মিরপুরের ১০, ১১, ১২, পলস্নবী ও কালসীতে বিক্রি হয় শাড়িগুলো। বাংলাদেশের বৃহত্তম বেনারশী পলস্নী রয়েছে মিরপুরের কালসীতে। তার উপর আড়াইহাজারের লতব্দী ও নারান্দী বেনারশী পলস্নীর তাঁতে বোনা বেনারশী ও কাতান শাড়িগুলো যুক্ত হয় মিরপুরে তৈরি শাড়িগুলোর সঙ্গে। সেখান থেকে শাড়িগুলো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এমনকি বিদেশেও রপ্তানি করা হয়ে থাকে। সব মিলিয়ে লতব্দীতে ৫০ থেকে ৬০টি বেনারশী কারখানা রয়েছে। নারান্দীতে রয়েছে ১০ থেকে ১৫টি। দুটি পলস্নীতে প্রায় ৭০ থেকে ৭৫টি কারখানায় গড়ে ২০ থেকে ২৫টি করে তাঁতকল রয়েছে। প্রতিটি তাঁতকলে দুজন করে কারিগর কাজ করে থাকেন। একজন মূল কারিগর যিনি শাড়ি বোনেন। আরেকজন চড়কায় সুতা কাটেন। চড়কায় সুতা কাটার কাজটি সাধারণত মেয়েরা করে থাকেন। শাড়ি বোনেন পুরুষ কারিগররা। একেকজন কারিগর দিনে গড়ে ৩ থেকে ৪টি শাড়ি বুনতে পারেন। প্রতিটি শাড়ি বুননের মজুরি দেওয়া হয় ২০০ টাকা করে। একজন কারিগর দিনে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকার কাজ করতে পারেন। প্রতিটি শাড়ি বাজারজাত করা পর্যন্ত মূল্য দাঁড়ায় ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা। বাজারে সেগুলো ১২শ থেকে ১৮শ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হয়ে থাকে। প্রতিটি শাড়ি বাজারজাত করা পর্যন্ত শাড়িপ্রতি ৫ থেকে ৬শ টাকা করে লাভ আসে। এতে করে বেনারশী পলস্নীগুলো এলাকার অর্থনৈতিক উত্তরণে এবং বেকার সমস্যা ঘোঁচানোর ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। লতব্দী গ্রামের বেনারশী কারখানার মালিক নজরুল ইসলাম জানান, কোরবানির ঈদের পর থেকে বাজার একটু মন্দা। তাই তার ২ থেকে ৩টি তাঁত বন্ধ রাখতে হয়েছে। তবে খুব একটা লোকসান গুনতে হয় না। অন্য মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ ব্যবসা করতে তারা কোনোরকম সরকারি অনুদান অথবা কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেননি। অনোয়ার হোসেন নামে একজন কারিগর জানান, এলাকায় প্রচুর কারিগর রয়েছে। তবে কালের বিবর্তনে তারা পাওয়ারলুমের প্রতি ঝুঁকে পড়ায় কিছুটা কারিগর সংকট আছে। তাই বাইরের এলাকার কারিগররা এখানে এসে কাজ করছে। এ ব্যাপারে সঠিক পরিসংখ্যান জানার জন্য আড়াইহাজার উপজেলা তাঁত বোর্ড অফিসে গিয়ে অফিসটি বন্ধ পাওয়া যায়।