বিবিসি প্রতিবেদন

কেন ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে মানসিক চাপের শহর?

ঢাকাবাসীর মানসিক চাপ কমানোর জন্য কতৃর্পক্ষ বা বেসরকারিভাবে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই

প্রকাশ | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান যিপজেটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, এশিয়ার শহরগুলোর মধ্যে ঢাকাতে বাস করা সবচাইতে স্ট্রেসফুল বা মানসিক চাপের ব্যাপার। গবেষণায় বায়ুদূষণ, ট্রাফিক জ্যাম, লিঙ্গ বৈষম্য, বেকারত্ব, মানসিক স্বাস্থ্যের মতো বিষয়ের মানদÐে বিশ্বের ১৫০টি শহরের তালিকা করা হয়েছে। কিন্তু ঢাকাবাসী মানুষের মানসিক চাপ কমানোর জন্য কতৃর্পক্ষের যেমন কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়, তেমনি বেসরকারিভাবেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। মানসিক চাপ কীভাবে প্রভাব ফেলে ঢাকাবাসীর জীবনে আর কীভাবে তা মোকাবেলা করা সম্ভব? ঢাকায় দীঘির্দন ধরে বাস করছেন, এমন কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানতে চাওয়া হয়, এই শহরে বসবাসের ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো তাদের নিয়মিত মানসিক চাপে ফেলে দেয়। তারা বলেন, ‘ঢাকার প্রতিটা মোড়ে, প্রতিটা সিগন্যালে অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয়, বাসা থেকে রোজ সকালে এক ঘণ্টা আগে বের হতে হয়। ধেঁায়া, ধুলা, কোথাও সহজে যাওয়া যায় না, এমনকি শপিং সেন্টারেও দেখবেন ভিড়।’ ‘যেখানে যাবেন জ্যাম, রাস্তায় দেখবেন ডাস্টবিন উপচে পড়ছে ময়লা। আর খাবারের ক্ষেত্রে বিশুদ্ধতার কোনো গ্যারান্টি নাই।’ ‘হঁাটার কোনো জায়গা নাই, এজন্য দেখা যায় ওজন বেড়ে যায়, রক্তচাপ বাড়ে এবং ডায়াবেটিস হয় এগুলোও মানসিক চাপ বাড়ায়।’ কথা হয়, কয়েকজন অল্প বয়েসী ঢাকাবাসীর সঙ্গেও, যাদের বয়স ত্রিশের নিচে, কেউ শিক্ষাথীর্, কেউ চাকরিতে ঢুকেছেন। একই প্রশ্নে তাদের উদ্বেগ দেখা যায়, একটু ভিন্ন বিষয়ে। তারা বলেন, ‘রাস্তায় জ্যাম, কোনো ট্রাফিক রুলস নাই, গাড়ি যে যেভাবে ইচ্ছা ওইভাবেই যাচ্ছে।’ ‘আমি যেখানে থাকি সেখানে পানির অনেক সমস্যা, রান্না বা গোসলের জন্য ঠিকমতো পানি পাওয়া যায় না।’ ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছি, বাস পাই নাই, দুই-তিনবার গাড়ি বদলে আসতে হয়েছে।’ যিপজেটের গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিক চাপ সৃষ্টির পেছনে শব্দ ও বায়ুদূষণ যেমন ভ‚মিকা রেখেছে, তেমনি রয়েছে অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ, প্রাকৃতিক পরিবেশের হার কমে যাওয়া, গণপরিবহন ও ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তার অভাব ইত্যাদি বিষয়সমূহ। মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব বিষয় একজন মানুষের ব্যক্তিগত এবং সামাজিক সম্পকর্গুলোর ওপর প্রভাব ফেলছে বলছেন, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের মনোবিজ্ঞানী ডা. মেঘলা সরকার “প্রতিদিনের কাজ সম্পন্ন করা যখন কঠিন হয়ে যায় সিম্পল একটা জ্যামের কারণে তখন সেটা একজন মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক সম্পকের্র ওপর প্রভাব ফেলে। শহরে দেখবেন সম্পকের্র ক্ষেত্রে অনেক অবিশ্বস্ততা, সেটাও অস্থিরতা থেকে আসতে পারে। আমরা সাময়িক একটা আনন্দের জন্য আমাদের মনটাকে নানাভাবে ‘চ্যানেলাইজ’ করছি।” কিন্তু ঢাকা শহরে যে ভীষণ মানসিক চাপের মধ্যে মানুষজন বসবাস করে, তা মোকাবেলার জন্য কতৃর্পক্ষের তেমন কোনো উদ্যোগ এখনো দৃশ্যমান নয়। আর সেটি স্বীকারও করলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। তবে তিনি বলেন, ২০১৭ সালের শুরুতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৩১টি খেলার মাঠ ও পাকর্ পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু করেছে, যাতে মানুষজন সেখানে সময় কাটাতে পারে। পাশাপাশি ‘গোস্বা ঘর’ নামে একটি অভিনব উদ্যোগও নেয়া হয়েছিল, কিন্তু সেসব এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমরা ৩১টি খেলার মাঠ ও পাকর্ পুনরুদ্ধারের কাজ হাতে নিয়েছি। সেই সঙ্গে আমাদের গ্রামবাংলায় ‘গোস্বা ঘর’ বলে একটা ব্যাপার ছিল, নদীর পাড়ে ছোট একটি কুড়েঘর, বাড়িতে ঝগড়াঝঁাটি মনোমালিন্য হলে মানুষ গিয়ে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে কাজে বা ঘরে ফিরত।’ “আমরা সেই ভাবনা থেকে শহরে একটি ‘অ্যাংগার রিডাকশন ম্যানেজমেন্ট পাকর্’ শুরু করি। আগামী বছরের শুরুতে সেটি সবার জন্য খুলে দেয়ার আশা আছে।” এদিকে, মনোবিজ্ঞানী ডা. মেঘলা সরকার বলেন, মানসিক চাপ সামলানোর জন্য প্রাপ্তবয়স্ক যেকোনো নাগরিককে সচেতনভাবে কিছু চেষ্টার মধ্যে থাকতে হবে ‘নিজের শরীরে প্রতি যতœবান হতে হবে, নিজেকে সময় দেয়া, নিয়ম করে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করা, মানে পাটির্-কালচারের মতো নয়, সত্যিকারের যোগাযোগ তৈরি করতে হবে।’ কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি হিসাবে এই মুহ‚তের্ যে শহরের জনসংখ্যা প্রায় দুই কোটি, অথার্ৎ প্রতি বগর্ কিলোমিটারে প্রায় দুই লাখ মানুষ বাস করে, সে শহরকে মানুষের জন্য একটু স্বস্তিকর করতে হলে কতৃর্পক্ষের আশু উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই। বিবিসি