বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
৩ বছরে ১৫ সংঘর্ষ-মামলা আসামি তিন শতাধিক

মহম্মদপুরে দুই নেতার দ্বন্দ্বে অশান্ত বেথুড়ি গ্রাম

এস আর এ হান্নান, মহম্মদপুর (মাগুরা)
  ০১ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ০১ ডিসেম্বর ২০২০, ১০:২৮
সংঘর্ষে ভাঙচুর করা বাড়ি

সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর ও লুটের জনপদে পরিণত হয়েছে গোটা বেথুড়ি গ্রাম। গত তিন বছরে অন্তত ১৫ সংঘর্ষ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। মামলা হয়েছে ১৩টি। এতে তিন শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। অধিকাংশ সংঘাতের ঘটনা এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে। সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, মামলা মোকাবিলা করতে গিয়ে গোটা গ্রামের মানুষ এখন শঙ্কিত। গ্রাম্য দুই নেতার দ্বন্দ্বের কারণে এ ভয়াবহ অবস্থা মাগুরার মহম্মদপুরের পলাশবাড়ীয়া ইউনিয়নের বেথুড়ি গ্রামের। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মহম্মদপুর উপজেলার পলাশবাড়িয়া ইউনিয়নের বেথুড়ি গ্রামে দুই নেতার দ্বন্দ্ব এক যুগেরও বেশি সময়ের। হামলা, সংঘর্ষ ও লুটপাটের ঘটনা এখানে নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই গ্রামের সহস্রাধিক মানুষ জিম্মি হয়ে অসহায় জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। গত ৩ বছরে দুই নেতার দ্বন্দ্বে ১৫টি বৃহৎ সংঘর্ষের ঘটনায় ১৩টি মামলা হয়েছে। অধিকাংশ মামলা বিচারাধীন থাকায় নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতে হয় দরিদ্র পরিবারের ৩ শতাধিক অসহায় মানুষকে। রোববার সকালে ওই গ্রামে সরজমিন পরিদর্শনে জানা গেছে অসহায় মানুষদের জীবন যাত্রার করুণ চিত্র। মহম্মদপুর উপজেলা সদর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত পলাশবাড়িয়া ইউনিয়নের বেথুড়ি গ্রামটি। মোট জনসংখ্যা ১২শ। পরিবারের সংখ্যা প্রায় ৫শ। ৬৫ ভাগ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। ৩০ ভাগ মানুষ শ্রমজীবী এবং ৫ শতাংশ মানুষ চাকরিজীবী। প্রায় প্রতিটা মানুষই রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিহিংসার শিকার। আর তাই বাধ্য হয়েই নেতাদের ছত্রছায়ায় গ্রামে বসবাসের চেষ্টা করে থাকেন তারা। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল করিম বাবু এবং সাবেক মেম্বর বিএনপি অনুসারী আহাদুল ইসলাম আহাদের সমর্থকদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে একের পর এক সহিংস ঘটনা ঘটছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ওই দুই নেতার দ্বন্দ্বে গত তিন বছরে বেথুড়ি গ্রামে ১৫টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে বহু মানুষ আহত হন। বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ১৩টি। এতে আসামি করা হয়েছে তিন শতাধিক ব্যক্তিকে। মামলা বিচারাধীন থাকায় আসামিদের আদালতে হাজিরা দিতে হয়। ফলে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হওয়াসহ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে। সর্বশেষ ২৮ নভেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত গ্রামবাসীর দুই দলের সংঘর্ষে কমপক্ষে ২০ ব্যক্তি আহত হন। সংঘর্ষ চলাকালে অর্ধশতাধিক বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। বেশিরভাগ পরিবারের ঘরের টিভি, ফ্রিজ ও প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে প্রতিপক্ষের লোকজন। বিদু্যতের মিটার ভেঙে দেওয়ায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে পলস্নী বিদু্যৎ বিভাগ। এ কারণে আরও বেশি বিপাকে পড়েছে অসহায় পরিবারগুলো। অন্যদিকে গ্রেপ্তার আতঙ্কে অনেক পরিবারের পুরুষরা আত্মগোপন করায় পরিবারের সদস্যরা মানবেতন জীবনযাপন করছেন। এ ঘটনায় ১৭ জনকে আসামি করে দ্রম্নত বিচার আইনে গত শুক্রবার রাতেই থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। মহম্মদপুর থানার ওসি তারক বিশ্বাস বলেন, বেথুড়ি গ্রামের বিষয়ে পুলিশ তৎপর। অপরাধ যারাই করুক কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না বলেও জানান তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে