শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
একনেক সভায় উচ্ছ্বসিত প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশ থেকে ব্যান্ডউইথ কিনতে চায় সৌদি আরবসহ চার দেশ

২১১৫ কোটি টাকার চার প্রকল্প অনুমোদন
যাযাদি রিপোর্ট
  ০২ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০
একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বাংলাদেশ থেকে ব্যান্ডউইথ কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে সৌদি আরব, ভারত, নেপাল ও ভুটান। এরই মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে ভুটান ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য প্রস্তাব দিয়েছে আর অনানুষ্ঠানিকভাবে আগ্রহ প্রকাশ করেছে সৌদি আরব ও নেপাল। এতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে ইন্টারনেট সেবা রিমোট এলাকায় নিয়ে যেতে বিটিসিএলকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়ার সময় বিষয়টি সামনে আসে। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-সচিবরা একনেক সভায় অংশ নেন। ব্যান্ডউইথ বিক্রির বিষয়টি একনেক সভায় জানান ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

সভা শেষে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য সিনিয়র সচিব ড. শামসুল আলম সাংবাদিকদের সামনে প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরেন। বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। সিঙ্গাপুর থেকে ফ্রান্স পর্যন্ত সংযুক্ত ঝঊঅ-গঊ-ডঊ-৬ সাবমেরিন ক্যাবলটি ভারত মহাসাগর, আরব সাগর, লোহিত সাগর হয়ে ভূ-মধ্যসাগর অবধি বিস্তৃত হবে। ক্যাবলটির কোর ল্যান্ডিং স্টেশন হবে সিঙ্গাপুর, ভারত, জিবুতি, মিসর ও ফ্রান্সে। বাংলাদেশের ব্রাঞ্চটি বঙ্গোপসাগর হয়ে কক্সবাজারের ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। অক্টোবর ২০২০ থেকে জুন ২০২৪ পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। ৬৯৩ কোটি ১৬ লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয় হবে এ প্রকল্পে।

প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে ড. শামসুল আলম বলেন, প্রকল্পটি নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী খুশি হয়েছেন। এ প্রকল্পের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। সৌদি আরব কীভাবে ব্যান্ডউইথ নেবে বিষয়টি পরিষ্কারভাবে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশ থেকে সৌদি-ভারত-নেপাল-ভুটান ব্যান্ডউইথ কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করায় প্রধানমন্ত্রী উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন দেশেও ব্যান্ডউইথের চাহিদা বাড়ছে। এছাড়া ২০২৫ সালে একটি সাবমেরিন ক্যাবল অকেজো হয়ে যাবে। এ জন্য সময়োপযোগী একটি প্রকল্প হাতে নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী খুশি হয়েছেন। প্রকল্পের আওতায় সাবমেরিন ক্যাবল ও সংশ্লিষ্ট সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করে স্থাপন করা হবে। ১৩ হাজার ২৭৫ কিলোমিটার কোর সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনসহ ১,৮৫০ কি.মি ব্রাঞ্চ সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করা হবে।

অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে ৩ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ডিজিটাল সংযোগের জন্য টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক আধুনিকীকরণ (১ম সংশোধিত) অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্প প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে ড. শামসুল আলম বলেন, ইন্টারনেট সেবা রিমোট এলাকায় নিয়ে যেতে বিটিসিএল'কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। শুধু নগরে নয়, হাওড়-বাঁওড় ও পাহাড়ি এলাকায় ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিতে বিটিসিএল'কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের 'নরসিংদী জেলার অন্তর্ভুক্ত আড়িয়াল খাঁ নদী, হাড়িদোয়া নদী, ব্রহ্মপুত্র নদ, পাহাড়িয়া নদী, মেঘনা শাখা নদী ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র শাখা নদ পুনঃখনন' প্রকল্পের প্রথম সংশোধন আনা হয়েছে। প্রকল্পটির মূল খরচ ছিল ৫০০ কোটি ২৮ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধনীতে ৪০৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা খরচ বাড়িয়ে করা হয়েছে ৯০৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা। প্রকল্পটি ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়েছে। ২০২১ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। আজকের সংশোধনীতে এর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে 'ডিজিটাল সংযোগের জন্য টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক আধুনিকীকরণ' প্রকল্পের প্রথম সংশোধন আনা হয়েছে। প্রকল্পটির মূল খরচ ছিল দুই হাজার ৫৭৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। সংশোধনীতে ৭৪১ কোটি ৫৪ লাখ বাড়িয়ে করা হয়েছে তিন হাজার ৩১৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। প্রকল্পটি ২০১৭ সালের জুলাইয়ে শুরু হয়েছে। ২০২০ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। সংশোধনীতে মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয়েছে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত।

স্থানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের 'মিউনিসিপ্যাল গভারন্যান্স অ্যান্ড সার্ভিসেস' প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধন আনা হয়েছে। প্রকল্পটির মূল খরচ ছিল দুই হাজার ৪৭০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধনীতে এর মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয়েছিল দুই হাজার ৪৭০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। আজকের দ্বিতীয় সংশোধনীতে ২৭৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা বাড়িয়ে করা হলো দুই হাজার ৭৪৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে