রোগ প্রতিরোধে গবেষণার তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশ | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন Ñফোকাস বাংলা
মানুষ যাতে সুস্থ থাকতে পারে, সে জন্য সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধে গবেষণা বাড়াতে চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহŸান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সুপার স্পেশালাইজড’ হাসপাতালের নিমার্ণকাজের ভিত্তি স্থাপন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার অব এক্সলেন্সের আওতায় আরও কয়েকটি নতুন প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এই আহŸান জানান। ডাক্তার, নাসর্সহ সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণকে চিকিৎসাসেবা দিতে নিজেদের উৎসগর্ করতে হবে। তাহলে এই বিশ্ববিদ্যালয় তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পেঁৗছতে পারবে।’ তিনি বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবির্ক কাযর্ক্রম আন্তজাির্তক মানে উন্নীত করবেন সে আহŸান আমি জানাই। আপনাদের আরও গবেষণার প্রতি জোর দিতে হবে এবং মানুষের যাতে রোগ না হয়, সে ব্যাপারেও কাযর্কর উদ্যোগ নিতে হবে, স্বাস্থ্য সম্পকের্ আরও সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। আর সে জন্য সরকারের তরফ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে প্রতিশ্রæতি দেন প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের অধীনে বাংলাদেশে প্রথম এই ‘সুপার স্পেশালাইজড’ হাসপাতালটি নিমার্ণ করা হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার সহযোগিতায়। ১৩তলা ভবনে অত্যাধুনিক এই হাসপাতালে এক ছাদের নিচেই মিলবে সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা। উদ্বোধনের আগে প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক জুলফিকার রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মা ও শিশুর সব ধরনের সেবা এই হাসপাতালে এক জায়গায় পাওয়া যাবে। এখন আমাদের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়, এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছোটাছুটি করতে হয়। কিন্তু এখানে সব ধরনের রোগের জন্য আলাদা আলাদা কেন্দ্র থাকবে, ফলে একটি জায়গাতেই সব সেবা দেয়া সম্ভব হবে। তিনি জানান, নতুন এই হাসপাতালে সেন্টার ফর স্পেশালাইজড অটিজম অ্যান্ড মেটারনাল অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার, ইমারজেন্সি মেডিকেল কেয়ার সেন্টার, হেপাটোবিলিয়ারি অ্যান্ড গ্যাস্ট্রোএনটারোলজি সেন্টার, কাডির্ও অ্যান্ড সেরিব্রো-ভাসক্যুলার সেন্টার, কিডনি সেন্টার এবং রেসপিরেটরি মেডিসিন সেন্টারসহ আরও কয়েকটি সেন্টার থাকবে। ১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সাবেক ইনস্টিটিউট অব পোস্টগ্র্যাজুয়েট মেডিকেল রিসাচের্ক (আইপিজিএমআর, পিজি হাসপাতাল নামে পরিচিত) বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নামকরণ করা হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেই অত্যাধুনিক এই হাসপাতাল তৈরি করা হচ্ছে, যেখানে ২৪ ঘণ্টা জরুরি সেবাও পাওয়া যাবে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই, এই বিশ্ববিদ্যালয় আরও উন্নত হোক। আমি আশা করি, আমাদের চিকিৎসকসমাজ গবেষণা করে চিকিৎসাক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারবেন। এই বিশ্ববিদ্যালয় দেশের মেডিকেল শিক্ষার নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে আমি আশা করি।’ বিএসএমএমইউর উত্তর পাশে ৩ দশমিক ৪ একর জমিতে এক হাজার ৩৬৬ কোটি টাকায় নিমার্ণ করা হবে এই হাসপাতাল। এই ব্যয়ের মধ্যে এক হাজার ৪৭ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার। অথার্য়নে সহযোগিতার জন্য কোরিয়া সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটি একটি গবেষণাকেন্দ্রে পরিণত হবে। শিক্ষা, চিকিৎসাসেবা, গবেষণার গুণগত মানোন্নয়নে নিরলস কাজ করার জন্য বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চিকিৎসাসেবা গ্রামপযাের্য় নিয়ে গিয়েছি। প্রত্যেকটি হাসপাতালে ওয়েব ক্যামেরা ব্যবহার হচ্ছে। এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। মানুষকে যেন অহেতুক ঢাকা শহরে আসতে না হয়, জায়গায় বসে যেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসাসেবা পায়, সেই সুযোগ সৃষ্টির পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি। আমরা চাই, দেশটা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাক। বাংলাদেশ বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে চলুক, আমরা সেটাই চাই।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেকে ধনী হয়েছেন। তাদের হঁাচি-কাশি হলে বিদেশে যেতে চায়। আমি মনে করি, যারা অনেক অথর্শালী বা সম্পদশালী, তারা যদি বিদেশে যান, আমার আপত্তি নেই। আমার এখানকার যারা সাধারণ মানুষ, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তরা একটু জায়গা পাবে, চিকিৎসা করার সুযোগ পাবে।’ প্রতিটি বিভাগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করার প্রতিশ্রæতি আবারও তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি। সিলেটের আইনও পাস হবে।’ মেডিকেল কলেজগুলোতে পড়ালেখার মান ঠিক রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রাইভেট অনেক মেডিকেল কলেজ হয়ে যাচ্ছে, সেখানে আদৌ কোনো পড়াশোনা হচ্ছে কিনা? সত্যিকারের ডাক্তার তৈরি হচ্ছে, না রোগী মারা ডাক্তার হচ্ছে সেটাও আমাদের দেখা দরকার। একমাত্র মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় পারবে সেটা নজরদারিতে রাখতে। যাতে মানসম্মত শিক্ষাগ্রহণ করতে পারে, সে ব্যবস্থাটা আমরা করতে চাই। চিকিৎসাব্যবস্থার মানোন্নয়ন করতে চাই।’ বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে বতর্মানে ১৯০০ শয্যার হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার সুযোগ রয়েছে, যার ৪৫ শতাংশ দরিদ্র রোগীদের জন্য সংরক্ষিত থাকার কথা। এই হাসপাতালের বহিবির্ভাগে প্রতিদিন সাত থেকে আট হাজার রোগী এবং আরও হাজারখানেক রোগী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সেবা নিয়ে থাকেন। এই হাসপাতালে ৩০ টাকার টিকিট কেটে যেসব রোগীর সেবা নেয়ারও সক্ষমতা নেই, তাদের জন্য একটি তহবিল তৈরির জন্য প্রধানমন্ত্রী দুই দফায় ১৫ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন। বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠানে আরও ১০ কোটি টাকা অনুদান দেয়ার ঘোষণা দেন তিনি। অন্যদের মধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়-সম্পকির্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বিএসএমএমইউ-এর উপাচাযর্ কনক কান্তি বড়ুয়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।