শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লাখাইর বিস্তীর্ণ সরিষার মাঠ হতে পারে মধুর রাজ্য

মহসিন সাদেক, লাখাই (হবিগঞ্জ)
  ০৪ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০
হবিগঞ্জের লাখাইয়ে সরিষা ক্ষেতে বাক্স পদ্ধতিতে মৌচাষ -যাযাদি

সরিষা শীতকালীন বিভিন্ন শস্যের মধ্যে অন্যতম একটি তেল জাতীয় শষ্য। কৃষি ও শস্যভান্ডার খ্যাত হবিগঞ্জের লাখাইয়ে অতীতে সরিষা চাষের উলেস্নখযোগ্য রেকর্ড থাকলেও গত কয়েক বছর ধরে উপজেলাজুড়ে বেশ কয়েকটি মাঠে মধ্যবর্তী ফসল হিসেবে সরিষা চাষে মনোযোগী হয়েছেন কৃষকরা।

অর্থকরি এই ফসল চাষে বাড়তি কোনো পানি বা জ্বালানি খরচ না থাকায় অল্প খরচে উৎপাদনযোগ্য একটি শস্য হওয়ায় বিগত বছর সরিষা চাষে এলাকার বাম্পার ফলন ও সফলতার কারণে এলাকায় একসময়ের অনাবাদী জমিগুলো আজ সরিষা উৎপাদনমুখী হয়ে উঠছে। ফলে সরিষার ভরা মৌসুমে বিস্তৃীর্ণ মাঠজুড়ে দেখা মিলে সবুজ আর হলুদের মহাসমারোহ। পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনায় সরিষা মাঠের ফুলের এই মহাসমারোহকে অর্থ এবং পুষ্টির উৎস হিসেবে কাজে লাগানোর এখনই মোক্ষম সময়। লাখাই উপজেলা সরিষানির্ভর মৌ-চাষের এবং মধু আহরণের একটি অপার সম্ভাবনাময় উপজেলা। সরিষা ক্ষেত থেকে মধু আহরণের ফলে মৌমাছির মাধ্যমে সরিষার ফুলে পরাগায়ন হার বেড়ে যায়, এতে করে জমিতে একদিকে সরিষার উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, অপরদিকে মৌমাছি সরিষা ফুলের ছোট ছোট পোকা ও ব্যাক্টেরিয়া নষ্ট করে বিধায় সরিষা ক্ষেতের বিভিন্ন মড়ক প্রাকৃতিকভাবে কমে যায়।

মধ্যবর্তী ফসল হিসেবে সরিষা চাষ যেমন খুবই লাভজনক, তেমনি সরিষার ফুল থেকে মধু চাষেরও উপযোগী। যার মাধ্যমে অর্থ ও পুষ্টি দুটিই অর্জন সম্ভব। এ ক্ষেত্রে সরিষা থেকে মধু আহরণের জন্য উৎকৃষ্ট উপায় হতে পারে সরিষা ক্ষেতের পাশে আধুনিক পদ্ধতিতে মৌ বাক্স স্থাপন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত ২০১৭ সালে লাখাই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় উপজেলার মৌবাড়ি এলাকায় সরিষার ফসলি মাঠে প্রথমবারের মতো মধু আহরণ প্রক্রিয়া শুরু করেন হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ এলাকার মৌচাষি হাফেজ নিয়ামত উলস্নাহ। বক্স পদ্ধতিতে মৌমাছি মাধ্যমে ওই সময় তিনি প্রায় দেড় হাজার লিটার মধু আহরণ করতে সক্ষম হন।

এরই ধারাবাহিকতায় বিগত বছরও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দ্বিতীয়বারের মতো হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বাহুবল গ্রামের মৌচাষি মো. ছুরত আলী উপজেলার গুনিপুর গ্রামে সরিষার ফসলি মাঠে ৫১টি মৌবক্স স্থাপনের মাধ্যমে মধু আহরণ কার্যক্রম শুরু করেন এবং স্বল্প সময় উলেস্নখযোগ্য পরিমাণের মধু আহরণ করেন। যার বাজার মূল্য প্রায় দেড় লাখ টাকা।

জানা যায়, ইতোপূর্বে আফগানিস্তান এবং মিশরের দুই বিদেশি পর্যটক লাখাইয়ে সরিষার বাম্পার ফলন আর হলুদ ফুলের বিশাল সমারোহ দেখে অবিভূত হয়ে বলেন্‌, যথাযথ পৃষ্টপোষকতায় সরিষা চাষকে কাজে লাগিয়ে বিপুল পরিমাণের মধু আহরণ সম্ভব। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আজহার মাহমুদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, এ বছর উপজেলাজুড়ে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১৭২৫ হেক্টর, যা বিগত বছরের চেয়ে ১৫০ হেক্টর বেশি। এ বছর সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে মৌ বক্স স্থাপনের কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে বিগত বছরের চেয়ে কিছুটা হলে বেশি আকারে করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে তিনি উলেস্নখ করেন।

সরেজমিন এলাকার সচেতন চাষিদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, কৃষকদের মধু আহরণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত করে তুলতে পারলে সরিষার পাশাপাশি মধু চাষে মডেল হতে পারে লাখাই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে