কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে পলো উৎসব

প্রকাশ | ০৫ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০

রানা আহমেদ, নলডাঙ্গা (নাটোর)
শুক্রবার নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার ব্রহ্মপুর বিলে পলো দিয়ে মাছ ধরতে আসা শৌখিন মৎস্য শিকারিরা -যাযাদি
শীতে পানি কমে গেলে রোদ মাখা সকালে মানুষ দলে দলে পলো নিয়ে মাছ ধরতে বিলে নামেন। তলাবিহীন কলসির মতো দেখতে, বাঁশ-বেতের তৈরি শৈল্পিক কারুকাজময় যে জিনিসটি দিয়ে মাছ ধরা হয়, নাটোরের আঞ্চলিক ভাষায় তার নাম পলো। শুষ্ক মৌসুমে খাল-বিলে পানি কমে গেলে দেশি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আশ্রয় নেয় জলাশয়ের তলদেশের আগাছাপূর্ণ স্থানে। তখন কম পানিতে পলো দিয়ে মাছ শিকার করা সহজ। এ সময়টাতে মাছ ধরতে আনন্দ পান শৌখিন মৎস্য শিকারিরা। পলো নিয়ে দলে দলে একসঙ্গে খালে-বিলে বা নদীতে মাছ ধরাকে স্থানীয়ভাবে বলা হয় পলো উৎসব। আড়াই থেকে তিন ফুট লম্বা আকৃতির এ খাঁচাসদৃশ পলো পানিতে তলদেশে ফেলে ওপরের ফাঁকা অংশ দিয়ে হাত ঢুকিয়ে মাছ শিকার করা হয়। কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে সেই চিরচেনা গ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য পলো উৎসব। গ্রামবাংলার পুরনো এ ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য শুক্রবার নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার ব্রহ্মপুর বিলে পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসবের আয়োজন করা হয়। পলো উৎসবে যোগ দেওয়া কয়েকজন জানান, শুক্রবার নলডাঙ্গা উপজেলার ব্রহ্মপুর বিলে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসবের আয়োজন করা হয়। এ উৎসবে ১০ কিলোমিটার দূরের গ্রাম মোমিনপুর, মির্জাপুর গ্রাম থেকে কয়েক শতাধিক শৌখিন মাছ শিকারি অংশ নেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ব্রহ্মপুর বিলে এক প্রান্ত থেকে সবাই একই সঙ্গে লাইন ধরে লুঙ্গি আটঘাট করে বেঁধে অথবা কাছা দিয়ে একসঙ্গে দল বেঁধে নান্দনিক ছন্দের তালে তালে ঝপ ঝপাঝপ শব্দে পলো দিয়ে মাছ ধরা শুরু করেন এবং সারিবদ্ধভাবে এগিয়ে যান সামনের দিকে। অনেকেরই মাথায় গামছা বাঁধা। পলো দিয়ে পানিতে একের পর এক চাপ দেওয়া আর হৈহুলস্না করে সামনের দিকে অঘোষিত ছন্দের তালে তালে এগিয়ে যান। যেন এক নিজস্ব চিরচেনা গ্রামবাংলার অপরূপ সৌন্দর্যময় দৃশ্য। ব্রহ্মপুর বিলে মোমিনপুর থেকে আসা পুরনো মাছ শিকারি আজগর, সুজন, মোজাফর জানান, খাল বিলে আগের মতো আর মাছ নেই। বিভিন্ন ফাঁস জাল দিয়ে বা অবৈধভাবে বেড়জাল দিয়ে মাছ শিকার করায় দেশীয় মাছ আজ হারিয়ে যাচ্ছে। ব্রহ্মপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক বলেন, 'ঝপ ঝপাঝপ পলো বাও/মজার মজার মাছ খাও'- সদলবলে পলো দিয়ে মাছ ধরার অভিযানে নামার স্স্নোগান এটি। হারিয়ে যাচ্ছে পলো নিয়ে মাছ ধরা। আগামী প্রজন্ম পলো কী তা চিনবে না। নতুন প্রজন্মের জন্য এসব ঐতিহ্য ধরে রাখার উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে দাবি করেন।