প্রচারে হামলা ও ভাঙচুর

অন্তকর্লহে উত্তপ্ত রাজশাহী তৃণমূলের রাজনীতি

বেশ কিছুদিন ধরে এ উত্তেজনা চলে আসলেও সম্প্রতি তা সহিংস রূপ নিয়েছে। মনোনয়ন প্রত্যাশীর প্রচারে হামলা ছাড়াও বিলবোডর্ ফেস্টুন ও ব্যানার ভাঙার ঘটনা ঘটছে

প্রকাশ | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

রাজশাহী অফিস
একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন ঘিরে অন্তকর্লহে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে রাজশাহী আওয়ামী লীগের তৃণমূলের রাজনীতিতে। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সমথর্ক ও মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সমথর্কদের মধ্যে চলছে এ উত্তেজনা। বেশ কিছুদিন ধরে এ উত্তেজনা চলে আসলেও সম্প্রতি তা সহিংস রূপ নিয়েছে। মনোনয়নপ্রত্যাশীর প্রচারে হামলা ছাড়াও বিলবোডর্, ফেস্টুন ও ব্যানার ভাঙার ঘটনা ঘটছে। সবের্শষ রোববার দুপুরে রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে এক মনোনয়নপ্রত্যাশী গোলাম রাব্বানীর প্রচারের গাড়িবহরে হামলা হয়। স্থানীয় এমপির সমথর্করা তার গাড়িবহরে মামলা করে নেতাকমীের্দর মারধর ও গাড়ি ভাঙচুর চালায়। এতে অন্তত ২০ জন আহত হন। এছাড়া ভাঙচুর করা হয় অন্তত ১০টি গাড়ি। এর আগেও রাজশাহী-১, রাজশাহী-৩ ও রাজশাহী-৫ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীর প্রচারে হামলা ও বিলবোডর্, ব্যানার ফেস্টুন ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এদিকে রাজশাহী আওয়ামী লীগের এ পরিস্থিতি সমাধানে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় কমিটি সমঝোতা সভা আহŸান করলেও ওই দিন তা হচ্ছে না। তবে কবে নাগাদ হবে তা এখনো যানানো হয়নি। ওই দিন অন্য জেলায় কমর্সূচি দেয়ায় রাজশাহীর সভা বাতিল করা হয়েছে বলে জেলার নেতারা জানিয়েছেন। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদসহ শোকজ করায় তৃণমূল পযাের্য় ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে শোকজ করা হয় জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহসানুল হক মাসুদ ও রাজশাহী-৫ আসনের সাংসদ আব্দুল ওয়াদুদ দারাকে। তার বিরুদ্ধে তৃণমূল নেতাকমীের্দর বিক্ষোভ সমাবেশ হওয়ার কারণ আব্দুল ওয়াদুদ দারার কাছে জানাতে ১৫ দিন সময় দিয়েছে কেন্দ্র। আর এমপিদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ ও বক্তব্য রাখার কারণ জানাতে বলা হয়েছে আসাদুজ্জামান আসাদ ও আহসানুল হক মাসুদকে। গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় নেতারা ২২ সেপ্টেম্বর রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্ব›দ্ব ও সংকট নিরসনে সভা ডেকেছেন। তাতে কয়েক এমপি ও তাদের ঘনিষ্ঠদের ওপর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখাতে পারেন বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতাকমীর্রা। কারণ রাজশাহী তৃণমূল নেতাকমীর্রা ভেতরে ভেতরে ফুঁসছে। তৃণমূল এসব নেতাকমীর্ ২২ সেপ্টেম্বরের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। ফলে সমঝোতা সভায় অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা করা হয়েছে। এমন তথ্য দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে। দলীয় সূত্র মতে, রাজশাহীর ছয় আসনের মধ্যে পঁচটিতে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য রয়েছেন। এ পঁাচ আসনের এমপির মধ্যে ৩ জনের ভেতরে তৃণমূল ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। ত্যাগী নেতাকমীের্দর প্রতি অব্যাহত বঞ্চনা ও অবজ্ঞার কারণে রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন ও রাজশাহী-৫ (দুগার্পুর-পুঠিয়া) আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল ওয়াদুদ দারার বিরুদ্ধে তৃণমূল নেতাকমীর্রা ক্ষুদ্ধ। তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ছাড়াও সমাবেশ অব্যাহত রেখেছেন। তারা প্রায় একজোট হয়ে এ তিন সংসদ সদস্যকে মনোনয়ন না দিতে কেন্দ্রে দাবি জানিয়ে আসছেন। সূত্রমতে, গত ২৮ আগস্ট রাজশাহী-৫ সংসদীয় এলাকার দুগার্পুর উপজেলা ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের একটি অংশের নেতাকমীর্রা একজোট হয়ে একই মঞ্চে সমবেত হন আব্দুল ওয়াদুদ দারাকে এবার যাতে কোনোভাবেই মনোনয়ন না দেয়া হয়। জাতীয় শোক দিবসের ব্যানারে বিশাল ওই দলীয় সমাবেশে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান ছাড়াও এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য তাজুল ইসলাম ফারুকও বক্তব্য রাখেন নেতাকমীের্দর সঙ্গে সুর মিলিয়ে। এমপি দারার বিরুদ্ধে দুনীির্ত ও অনিয়মের অভিযোগ প্রকাশ্যে আনেন নেতাকমীর্রা। কেন দলীয় নেতাকমীর্রা একজোট হয়ে তার বিরুদ্ধে এত বড় সমাবেশ করলেন সাংসদ দারাকে ১৫ দিনের মধ্যে সেই কারণ জানাতে বলেছে কেন্দ্র। একই সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও এ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী আহসানুল হক মাসুদকেও শোকজের জবাব দিতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে একই ধরনের অভিযোগে এক বছরে ২১টি এমপিবিরোধী সমাবেশ হয়েছে রাজশাহী-৩ আসনের এমপি আয়েন উদ্দিনের বিরুদ্ধে। তবে আয়েন উদ্দিন কেন্দ্রকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন জেলার সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদই তার বিরুদ্ধে নেতাকমীের্দর উস্কে দিয়ে এসব সমাবেশ করছেন। কেন তার বিরুদ্ধে উস্কানির অভিযোগ উঠেছে আসাদকে কারণ জানাতে ১৫ দিনের সময় দিয়েছে কেন্দ্র। এদিকে রাজশাহী-১ আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে জামায়াত-বিএনপি তোষণ অভিযোগে সমাবেশ করেছে তৃণমূল নেতাকমীের্দর একটি অংশ। তার নিবার্চনী এলাকা গোদাগাড়ী ও তানোরের নেতাকমীর্রা ওমর ফারুক চৌধুরীকে এবার মনোনয়ন না দিতে কেন্দ্রের প্রতি দাবি করে আসছে। তবে তার বিরুদ্ধে এসব সমাবেশ করার জন্য ফারুক চৌধুরী জেলা সম্পাদক আসাদুজ্জামানসহ কতিপয় নেতাকে দায়ী করেছেন। ফলে কেন্দ্র জেলা সম্পাদক আসাদকেও ১৫ কাযির্দবসের মধ্যে কারণ দশাের্তও বলেছেন। অপরদিকে গত ১১ সেপ্টেম্বর সংসদ সদস্য আবদুল ওয়াদুদ দারা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক আহসানুল হক মাসুদ কারণ দশাের্নার নোটিশ পান। তবে তারা কেউ এখনো জবাব দেননি। জেলা সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, তিনি যথাসময়ে শোকজের জবাব দেবেন এবং তার সঙ্গে কতিপয় এমপির দুনীির্ত-অনিয়মের চিত্র তুলে ধরবেন। একই কথা জানান সাংগঠনিক সম্পাদক আসানুল হক মাসুদ।