বঙ্গবন্ধুর দুই খুনিকে ফেরাতে উদ্যোগের কথা জানালেন ওবায়দুল কাদের

প্রকাশ | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পলাতক দুই খুনিকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে এক অনুষ্ঠানে রাশেদ চৌধুরী ও নূর চৌধুরীকে ফেরাতে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার আদালতে সরকার ?দুটি মামলা করেছে বলেও জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ছয় খুনি এখনো পলাতক থাকার প্রসঙ্গ টেনে কাদের বলেন, ‘এই ছয়জনকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জোরদার হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে আছেন রাশেদ চৌধুরী। তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার আমাদের সহযোগিতা করছে। তাকে ফিরিয়ে আনতে ওখানে একটি মামলা করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। “তেমনি নূর চৌধুরীর ব্যাপারে কানাডার একটি আইন আছে; সেটা হলো কাউকে মৃত্যুদÐ দেয়ার বিধান সেদেশের আইনে নেই। এই কারণে আইনটিকে শিথিল করে নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কানাডায় একটি মামলাও বাংলাদেশ সরকার করেছে। কানাডা সরকারের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা অব্যাহত আছে।” ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা ও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যা করে সেনাবাহিনীর একদল কমর্কতার্ ও সৈনিক। দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সে সময় দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। দীঘির্দন বিচার বন্ধের পর আইনি প্রক্রিয়ায় মৃত্যুদÐপ্রাপ্ত ১২ জনের মধ্যে পঁাচজনের ফঁাসি কাযর্কর হয়েছে ২০১০ সালে। বাকিদের একজন মারা গেছেন এবং ছয়জন পলাতক আছেন। এরা হলেন আব্দুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এম রাশেদ চৌধুরী, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, আব্দুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেমউদ্দিন। তাদের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিস জারি করা আছে। এদের মধ্যে নূর চৌধুরী কানাডায় এবং এম রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে আছে বলে নিশ্চিত রয়েছে ইন্টারপোলের বাংলাদেশ শাখা ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)। নূর চৌধুরীকে ফেরাতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী বরাবর অনলাইন পিটিশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ওবায়দুল কাদের। সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন গৌরব ৭১, কানাডা আওয়ামী লীগ অল ওভারসিস বাংলাদেশি এবং মুভমেন্ট ফর ডিপারটেশন অব কিলার নূর চৌধুরী টু বাংলাদেশ যৌথভাবে এ উদ্যোগ নিয়েছে। অনুষ্ঠানে কাদের বলেন, ‘আমি বার বার একই প্রশ্ন করছি বিএনপির নেতৃত্বের কাছে; বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে কারা জড়িত, সেই খুনিদের বিচারের পথ বন্ধ করতে কেন ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল, কেন এই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে বাংলাদেশের লাখো শহীদের রক্তের আখরে রচিত সংবিধান পরিবতর্ন করে পঞ্চম সংশোধনীতে অন্তভুর্ক্ত করা হয়েছিল? হত্যাকারীদের বিচারের পথ রুদ্ধ করতে। এই প্রশ্নের জবাব বিএনপি আজও দেয়নি। আমি আবারও সেই প্রশ্নের জবাব চাচ্ছি।’ সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি অনুষ্ঠানে বলেন, কানাডার মতো সভ্য দেশ আত্মস্বীকৃত দÐিত খুনির জন্য অভয়ারণ্য হতে পারে না। এই খুনি ও তার দোসররা একটি দেশের জাতির পিতাকে, তার সহধমির্ণীকে ও তার ১০ বছরের শিশু রাসেলসহ ১৮ জন মানুষকে হত্যা করেছে। এই খুনি গত ৪৩ বছর ধরে মুক্ত জীবনযাপন করছে। নূর চৌধুরীর বিষয়ে কানাডা সরকারের কাছে দুটি দাবি জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পকির্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এই সভাপতি। ‘প্রথমত, তারা এই খুনিকে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেবেন, যাতে আত্মস্বীকৃত দÐিত খুনির ফঁাসি কাযর্কর করা যায় এবং আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কানাডা সরকারের অঙ্গীকার রক্ষা পায়। “দ্বিতীয়ত, তাকে যেন স্বাভাবিক মুক্ত জীবনযাপনের সুযোগ যেন না দেন। মৃত্যুদÐপ্রাপ্ত আত্মস্বীকৃত খুনি থাকবে জেলে, তার স্বাভাবিক জীবনযাপন কেন?” পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচাযর্ অধ্যাপক মীজানুর রহমান, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।