শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে...

স্মৃতিফলকে খোদাই করে লেখা বীরদের নাম

মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অহংকার। ১৯৭১-এ মহান মুক্তিযুদ্ধে লাখো বাঙালি অকাতরে প্রাণ বিলিয়েছেন দেশের জন্য। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে লড়াই করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন অনেকেই। তাদের কেউ আমাদের চেনা, কেউবা অচেনা। বাঙালির শ্রেষ্ঠ এই সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা উজ্জীবিত রাখতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নির্মিত হয়েছে ভাস্কর্য ও স্মৃতিফলক। এছাড়া প্রতিটি এলাকায় ছড়িয়ে আছে বধ্যভূমি। পঞ্চগড় জেলার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ও বধ্যভূমি নিয়ে লিখেছেন আমাদের প্রতিনিধি মো. আব্দুল কাইউম
নতুনধারা
  ২৭ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ২৭ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:১০
পঞ্চগড়ে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম সংবলিত স্মৃতিফলক

দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ শেষে একাত্তরের ১৬ই ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে জন্ম হয় বাংলাদেশ নামের একটি নতুন রাষ্ট্র। কিন্তু তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সর্ব উত্তরের জেলা দিনাজপুরের পঞ্চগড় স্বাধীন হয় ১৭ দিন আগে অর্থাৎ ২৯ নভেম্বর। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পঞ্চগড় জেলায় শহীদ হন ৫৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে পঞ্চগড় পুলিশ সুপারের অফিসের ঠিক সামনে নির্মাণ করা হয় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিফলক। উপজেলাভিত্তিক শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা এই ফলকে খোদাই করে লেখা রয়েছে। স্মৃতিফলক নির্মাণের আগে সব জাতীয় দিবসের শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হতো শহীদ মিনারে। স্মৃতিফলক নির্মাণের পর থেকে স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে তোপধ্বনি ও শ্রদ্ধাঞ্জলি এখানেই দেওয়া হয়। এ দুটি দিবস ছাড়া এখানে আর কোনো অনুষ্ঠান হয় না। যদিও স্মৃতিফলকের পূর্ব পাশে একটি স্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে কয়েক বছর আগে। এখানে নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠান করা হলে শিক্ষার্থীসহ আগত দর্শনার্থীরা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম-পরিচয় জানতে পারত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা সংগ্রামের ঘোষণার পরই এ জেলার ছাত্র, জনতা, কৃষক-শ্রমিক প্রস্তুতি নিতে থাকেন। পুলিশ, সেনাবাহিনীর সদস্য, আনসার, কৃষক-শ্রমিক, রাজনৈতিক কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর পাক হানাদার বাহিনী সারাদেশে আক্রমণ শুরু করলেও ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত পঞ্চগড় পাক হানাদারমুক্ত ছিল। পাক হানাদার বাহিনী সড়কপথে এসে ১৭ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টায় পঞ্চগড় দখল করে নেয়। এরপর তারা পঞ্চগড়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ক্যাম্প স্থাপন করে। স্বাধীনতাকামী বীর মুক্তিযোদ্ধারা সাধ্যমতো তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে অনেকে শহীদ হন। আহত হন অনেকে। স্বাধীনতার জন্য পাগলপ্রায় বীর মুক্তিযোদ্ধারা ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত সমানতালে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করে যান। পাক হানাদার বাহিনী পঞ্চগড় দখলের পর স্বাধীনতাকামী সাধারণ মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে। একাত্তরের জুলাই মাসের প্রথমদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মিলিত গেরিলা যুদ্ধের তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। তাদের অব্যাহত গেরিলা আক্রমণের তীব্রতায় পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার আলবদররা। ১ নভেম্বর থেকে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে ভারতীয় মিত্র বাহিনী যৌথভাবে পাকবাহিনীর ডিফেন্সের উপর হামলা চালায়। ফলে প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা মুক্ত হতে থাকে। মরণ কামড় হিসেবে মুক্তি ও মিত্র বাহিনী পর্যায়ক্রমে পাকবাহিনীর উপর প্রচন্ড আক্রমণ চালিয়ে ২০ নভেম্বর অমরখানা, ২৫ নভেম্বর জগদলহাট, ২৬ নভেম্বর শিংপাড়া, ২৭ নভেম্বর পূর্ব তালমাসহ একই দিনে আটোয়ারী, মির্জাপুর, ধামোর, শক্রমুক্ত করে রাতেই তারা পঞ্চগড় সিও অফিস ও ঘাটিয়ারপাড়া এলাকায় ফ্রন্টলাইন গড়ে তোলেন। ২৮ নভেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধারা চারদিক থেকে পাক হানাদার বাহিনীর উপর ঝড়ো আক্রমণ করেন। এ আক্রমণে পঞ্চগড় শহরের পূর্বদিকে ডিফেন্স নিয়ে থাকা পাক হানাদার বাহিনী টিকতে না পেরে টুনিরহাট দেবীগঞ্জ ভায়া ডোমার হয়ে কাঁচা রাস্তা ধরে সৈয়দপুর অভিমুখে পিছু হটতে থাকে। ওইদিন রাতে মুক্তি, মিত্র, ট্যাংক ও পদাতিক বাহিনীর সম্মিলিত সাঁড়াশি আক্রমণে পরাজিত হয়ে পাক হানাদার বাহিনী পঞ্চগড়ের মাটি ছেড়ে চলে গেলে ২৯ নভেম্বর ভোরে পঞ্চগড় হানাদারমুক্ত হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে অনেকে শহীদ হলেও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও জেলা প্রশাসনের হিসেবে বর্তমান পঞ্চগড় জেলার পাঁচ উপজেলায় ৫৪ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার তালিকা রয়েছে। তাদের মধ্যে তেঁতুলিয়া উপজেলার ১৩ জন, সদর উপজেলার ২০ জন, বোদা উপজেলার ১১ জন, আটোয়ারী উপজেলার ৬ জন এবং দেবীগঞ্জ উপজেলার ৪ জন রয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে