স্ত্রীসহ দুদকে তলব

ডিআইজি মিজানের অঢেল সম্পদের খেঁাজ মিলেছে

প্রকাশ | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
মিজানুর রহমান
দুনীির্ত দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে পুলিশের বিতকির্ত উপমহাপরিদশর্ক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানের কোটি টাকারও বেশি অবৈধ সম্পদের খেঁাজ পাওয়া গেছে। সে কারণে মিজান ও তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে সংস্থাটি। দুদক সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিক অনুসন্ধানে ডিআইজি মিজানুর রহমানের নামে ৪৬ লাখ ৩২ হাজার ১৯১ টাকার এবং তার স্ত্রীর নামে ৭২ লাখ ৯০ হাজার ৯৫২ টাকার অসংগতিপূণর্ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের খেঁাজ পাওয়া গেছে। মিজানুর রহমানের ছোট ভাই মাহবুবুর রহমান স্বপন ও ভাগনে পুলিশের এসআই মাহামুদুল হাসানের নামেও স্থাবর ও অস্থাবর প্রচুর সম্পদের খেঁাজ পাওয়া গেছে। দুদকের ধারণা, এসব সম্পদের প্রকৃত মালিক ডিআইজি মিজান। প্রাথমিক অনুসন্ধানের ধারাবাহিকতায় দুদক আইনের ২৬(১) ধারায় মিজানুর রহমান ও তার স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রতœার নামে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ জারি করে সংস্থাটি। সূত্র জানায়, ডিআইজি মিজান তার আয়কর নথিতে নিজের নামে স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে মোট ১ কোটি ৫৩ লাখ ৭০ হাজার ৭৬৩ টাকার সম্পদ দেখিয়েছেন। তবে দুদকের অনুসন্ধানে আয়কর নথির বাইরে ৪৬ লাখ ৩২ হাজার ১৯১ টাকার জ্ঞাত আয়বহিভূর্ত সম্পদের খেঁাজ মিলেছে। সোহেলিয়া আনার রতœা তার আয়কর নথিতে স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে মোট ৮৫ লাখ ৪৬ হাজার ৯৩৫ টাকার সম্পদের তথ্য দিয়েছেন। অথচ তার আয়ের উৎস পাওয়া যায় মাত্র ১২ লাখ ৫৫ হাজার ৯৮৩ টাকা। অথার্ৎ দুদকের অনুসন্ধানে আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূণর্ ৭২ লাখ ৯০ হাজার ৯৫২ টাকার সম্পদ রয়েছে বলে দুদক মনে করে। মিজানুর রহমানের ছোট ভাইয়ের নামে রাজধানীর বেইলি রোডে বেইলি রোজ নামের অ্যাপাটের্মন্টে ২ হাজার ৪০০ বগর্ফুটের ফ্ল্যাট ও ভাগনে মাহামুদুল হাসানের নামে চাকরিতে প্রবেশের আগেই ঢাকার পাইওনিয়ার রোডে ১ হাজার ৯১৯ বগর্ফুটের একটি ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া গেছে। দুদক ধারণা করছে, ডিআইজি মিজানই তাদের নামে এসব সম্পদ করেছেন। এসব অবৈধ সম্পদের খেঁাজ পাওয়ায় মিজানুর রহমানকে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। একই সঙ্গে মিজানের স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রতœাকে প্রথমবারের মতো জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অবৈধ সম্পদের খেঁাজে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্ত্রীসহ ডিআইজি মিজানকে ৩০ সেপ্টেম্বর সকালে দুদকে হাজির হতে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। ডিআইজি মিজানের উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ২৯ নম্বর বাড়ির ঠিকানায় তলবি নোটিশ পাঠিয়েছেন দুদকের উপপরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী। দুদক সূত্র প্রথম আলোকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। এর আগে গত ৩ মে অবৈধ সম্পদসহ বিভিন্ন দুনীির্তর অভিযোগে প্রথম দফায় প্রায় সাত ঘণ্টা ডিআইজি মিজানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। সকাল সাড়ে নয়টা থেকে বিকাল সাড়ে চারটা পযর্ন্ত তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী। অবৈধ সম্পদ অজর্ন ও বিভিন্ন দুনীির্তর অভিযোগে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ওই দিন সকাল নয়টারও আগে কালো রঙের একটি পাজেরো গাড়িতে সাইরেন বাজিয়ে দুদকে আসেন তিনি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দুদক ছাড়েন বিকেল পঁাচটায়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত এই ডিআইজি। তার বিরুদ্ধে আনা অবৈধ সম্পদ অজের্নর অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। তিনি জানান, আয়কর ফাইলে দেয়া তথ্যের বাইরে তার কোনো সম্পদ নেই। এ সময় এক সংবাদ পাঠিকাকে হুমকি দেয়ার বিষয়ে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে মিজান বলেন, ‘আই অ্যাম সরি।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে মিজান জানান, তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে, সেগুলো সম্পকের্ পুলিশ সদর দপ্তর তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সে কমিটি সবকিছু খতিয়ে দেখবে। ডিআইজি মিজান ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে কমর্রত ছিলেন। গত জানুয়ারির শুরুর দিকে তাকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। দ্বিতীয় বিয়ে গোপন করতে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ত্রী মরিয়ম আক্তারকে গ্রেপ্তার করানোর অভিযোগ উঠে ডিআইজি মিজানুরের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে নারী নিযার্তনেরও অভিযোগ ওঠে। জানা গেছে, ব্যাংক কমর্কতার্ মরিয়ম আক্তারকে গত বছরের জুলাই মাসে বিয়ে করেন মিজানুর রহমান। ২০১৯ সাল পযর্ন্ত সেই কথা গোপন রাখার শতর্ দিয়েছিলেন স্ত্রীকে। মরিয়ম রাজি হননি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি গত বছরের ১২ ডিসেম্বর পুলিশ পাঠিয়ে মরিয়মকে গ্রেপ্তার করান। মিজানুর রহমান ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার ছিলেন, সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। পরে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পায় পুলিশের তদন্ত কমিটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাকে প্রত্যাহার করা হয়। সবশেষ মিজানুরের বিরুদ্ধে এক সংবাদ পাঠিকা প্রাণনাশের হুমকি ও উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ তোলা হয়। ওই সংবাদ পাঠিকা প্রথমে ঢাকার বিমানবন্দর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। তাতে তিনি অভিযোগ করেন, মিজানুর রহমান মুঠোফোনে তাকে ও তার পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন। তিনি বাড়ির বাইরে বের হলে তাকে হেনস্তা করবেন এবং অশ্লীল ছবি তৈরি করে প্রচার করবেন। গত ১০ এপ্রিল তিনি তার নামে খোলা একটি ফেসবুক পেজের কথা জানতে পারেন। তিনি দেখতে পান, পেজটি তার নামে খোলা এবং সেখানে তার ছবির সঙ্গে অশ্লীল ছবি জুড়ে দেয়া হয়েছে। পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগে সংবাদ পাঠিকা অভিযোগ জানিয়েছেন এবং এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন করেছেন। নামে-বেনামে ডিআইজি মিজানুর রহমানের বিপুল সম্পদ রয়েছেÑএমন অভিযোগের অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়ে দুদকের উপপরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারীকে এ বছরের ১০ ফেব্রæয়ারি অনুসন্ধান কমর্কতার্ নিয়োগ দেয়া হয়।