বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
চলতি মৌসুমে আলু আবাদ

বগুড়ায় বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া
  ১৫ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০
আলু

বগুড়ায় এবার আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। ক্ষেত থেকে আলু তুলতে কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। ক্ষেতজুড়ে আলু ও শীতের সোনালি রোদ্দুরের সঙ্গে কৃষকের হাসি মিলেমিশে একাকার। গত বছরের তুলনায় এবার বিঘা প্রতি আলুর ফলন জাত ভেদে ১০ মণ বেশি হয়েছে। এদিকে বেশি ফলনের আশায় আলুচাষিরা স্থানীয় জাতের পরিবর্তে উচ্চ ফলনশীল আলু আবাদের দিকে ঝুঁকছেন। এতে ক্রমান্বয়ে কমছে স্থানীয় জাতের আলু আবাদ। কৃষি বিভাগ বলছে, চলতি মৌসুমে ক্ষেত থেকে আলু উত্তোলন কেবল শুরু হয়েছে। এটা চলবে ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত। গত দুই বছরের তুলনায় এবার ফলন বেশি হয়েছে বলেও জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

বগুড়া সদরের শাখারিয়ার নামাবালা এলাকার কৃষক আব্দুর রাজ্জাক ক্ষেত থেকে আলু তুলে বস্তায় ভরছিলেন। তার চেহারাজুড়ে ছিল প্রশান্তি। ১০ বিঘা জমিতে ক্যারেট জাতের আলু চাষ করেছেন। ফলন হয়েছে বিঘাপ্রতি প্রায় ৭০ মণ। গত বছরে এই ফলন ছিল ৫৫ থেকে ৬০ মণ। তবে এখন গত বছরের তুলনায় বাজারে আলুর দাম কিছুটা কম হলেও বেশ ভালো লাভ হবে বলে জানালেন তিনি।

কালিবালা এলাকার কৃষক এমরান প্রায় ৩ বিঘা জমিতে 'সেভেন' নামে উচ্চ ফলনশীল বা উফশি জাতের আলু আবাদ করেছেন। এখন ক্ষেত থেকে ফলন তুলছেন। তিনি জানালেন, প্রতি শতকে এবার প্রায় ৩ মণ পর্যন্ত এই জাতের আলু পাওয়া গেছে। গত বছর এটা প্রতি শতকে দেড় থেকে ২ মণ পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে। তবে গত বছরের এই সময় আলুর বাজার দর আরও ভালো ছিল। এর পরেও আবাদ ও ফলন নিয়ে তারা খুশি। কারণ আলু আবাদে এবার কোনো সমস্যা হয়নি।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানিয়েছে, গত দুই বছরের তুলনায় এবার আলুর আবাদ ভালো হয়েছে। এবার ৫৭ হাজার ৭শ' হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ৫৮ হাজার ৫২৫ হেক্টরে। কৃষি বিভাগ সূত্র বলছে, এর বাইরে আরও প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। সব মিলিয়ে বগুড়া আলুর আবাদ হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে। আর ফলন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ লাখ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন। আগাম জাতের আলুর বাইরে এখন সাধারণ আলু জমি থেকে তোলা হচ্ছে। এই আলু উত্তোলন চলবে ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত। কৃষি বিভাগ বলছে, গত দুই বছরের বগুড়ায় প্রায় ৫৭ ও ৫৮ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়। সেই তুলনায় এবার আলুর আবাদ বেশি। তবে গত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয়েছিল ২০১৫ সালে। ওই সময় আবাদ হয় প্রায় সাড়ে ৬১ হাজার হেক্টর জমিতে। সূত্র বলছে, গত বছর আলু দাম বেশি থাকায় এবার কৃষকরা আলুর আবাদে কোনো জমি ফেলে রাখেনি। এছাড়া অনুকূল আবহাওয়া থাকায় আবাদও ভালো হয়েছে। অন্যদিকে কৃষকরা এখন বেশি ফলনের জন্য উচ্চ ফলনশীল জাতের আলু আবাদেরর দিকে ঝুঁকছেন। উচ্চ ফলনশীল বা উফশি জাতের আলুর মধ্যে রয়েছে- এস্টারিকস, ডায়মন্ড, গস্নানোলা, কার্ডিনালসহ বিভিন্ন জাত। কৃষি বিভাগ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত দুই বছরে জেলায় মোট আবাদের মধ্যে ১৪ থেকে ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের পাকড়ি ও হাগড়াই জাতের আলুর চাষ হতো। সেখানে এবার স্থানীয় জাতের আলুর আবাদ হয়েছে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে।

কৃষি বিভাগ সূত্র বলছে শতাংশের হিসাবে এবার মোট আলু আবাদের মধ্যে ১৮ শতাংশ জমিতে স্থানীয় জাতের আলু এবং ৮২ শতাংশ জমিতে উফশি জাতের আলুর আবাদ হয়েছে। বেশি লাভ ও বেশি উৎপাদনের জন্যই কৃষকরা উফশি জাতের আলু আবাদের দিকে ঝুঁকছেন। কৃষি বিভাগ বগুড়া সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক দুলাল হোসেন জানিয়েছেন, এবার গত কয়েক বছরের মধ্যে আলুর ফলন ভালো হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে