বেলা ১১টায়ও সূর্যের দেখা মেলেনি

প্রকাশ | ১৭ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

মমিনুল ইসলাম, প্রহলাদ মন্ডল
শনিবার বেলা ১১টা। তখনো কুড়িগ্রামে সূর্যের দেখা মেলেনি। কুয়াশায় ঢেকে আছে চারপাশ। জেলাজুড়ে যানবাহন ছিল কম। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হয়নি কেউ। শহরের কে সি রোডে কথা হয় রিকশাচালক কফিল-এর সঙ্গে। তার বাড়ি কুড়িগ্রাম পৌর সদর হরিশেষ গ্রামে। শীত কেমন- জানতে চাইলে কফিল বলেন, 'গরিব মানসের আবার শীত-গরম! বাড়িত লাড়া (খড়) দিয়ে তোসক বানাইছি। পোলাপান নিয়ে জরাইকুড়াই থাহি। কিন্তু তাউ জেন জার (শীত) ছারবের চায় না। তাই রিকশা নিয়ে বড়াইচি। রিকশার প্যাডেল ঘুরালি ইকটু গরম লাগে।' কথা হয় বেড়া উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নের একজন কৃষক ইউসুফ মৃধার সঙ্গে। তিনি জানান, প্রচন্ড ঠান্ডা আর কুয়াশায় চরের মানুষের কষ্টের পাশাপাশি কাজকর্মও বন্ধ। ঠান্ডার কারণে কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে। কৃষিশ্রমিকেরা চলতি বোরো মৌসুমের ধান রোপণ করতে পারছেন না। পেঁয়াজের চারা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। উলিপুর উপজেলা সদরের রেজাউল ইসলাম জানান, শীতে সবচেয়ে কষ্টে আছে গরিব মানুষ। অনেক গ্রামেই শীতের কাপড়ের অভাবে কেউ বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না। তাদের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। জেলা সদরের হরিজন কলোনির নেতা হরিলাল বাশফোড় বলেন, হরিজন সম্প্রদায়ের অধিকাংশ মানুষই দরিদ্র। জেলা শহরের দুটি কলোনিতে দেড় শতাধিক পরিবারের এক হাজার সদস্য রয়েছে। যত শীতই পড়ুক, ভোরে উঠে বের হতে হয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে। তাদের খোঁজ কেউ রাখে না। প্রচন্ড ঠান্ডায় অনেকেই খুব কষ্টে আছে। জেলার বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলার বেশিরভাগ অঞ্চলই গ্রাম ও চরবেষ্টিত। অধিকাংশ মানুষই দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। ফলে ভালো শীতের কাপড় কিনতে পারে না তারা। বিভিন্ন সংস্থা শীতবস্ত্র বিতরণ করলেও গ্রামে তা খুব কমই পৌঁছায়। তাই পুরো শীতের মৌসুম তাদের কষ্টে কাটাতে হয়। গতকাল দুপুরে সরেজমিনে জেলা শহরের পুরাতন শীতবস্ত্রের বাজার পাবনা নছর মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, অনেকেই ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে শীতবস্ত্র বিক্রি করছেন। ক্রেতারা ঘিরে রেখেছে দোকানগুলো। জেলা সিভিল সার্জন বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সগুলোতে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। যারা হাসপাতালে আসছে তাদের অধিকাংশ গরিব রোগী। জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম বলেন, 'সরকারি-বেসরকারি বিভিন্নভাবে আমাদের কাছে শীতবস্ত্র আসছে। আমরা নিজেরা রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেগুলো বিতরণ করছি।' রাজারহাটে জনজীবন স্থবির : কুড়িগ্রামের রাজারহাটের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় তাপমাত্রা কমেছে ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে চারদিক। গত ৩ দিন ধরে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। উত্তরের হিমেল হাওয়ায় কনকনে ঠান্ডার মাত্রা বেড়ে গেছে। শনিবার দুপুরে উপজেলার হাসপাতালগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত তিনদিন ধরে ঠান্ডার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালেই ইনডোরের পাশাপাশি আউটডোরে চিকিৎসা সেবা নিয়েছে ২ শতাধিক শ্বাসকষ্টজনিত রোগী। রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়া পর্যবেক্ষক সুবল চন্দ্র সরকার জানায়, শনিবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আরও কমপক্ষে ৩ দিন তাপমাত্রা নিম্নগামী থাকতে পারে বলে জানান তিনি।