শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পরচুলা তৈরি হতে পারে সম্ভাবনাময় কুটির শিল্প

আখতার হোসেন খান, ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল)
  ১৮ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০
পরচুলা তৈরিতে ব্যস্ত দুই কিশোরী -যাযাদি

'চুল তার কবে কার অন্ধকার বিদিশার নিশা...।' কিংবা 'বাবরি দোলানো মহান পুরুষ সৃষ্টি সুখের উলস্নাসে কাঁপা...।' অথবা 'খায়রুন লো তোর লম্বা মাথার কেশ...।' চুল নিয়ে রয়েছে এমনি হাজারো গান, কবিতা আর ছড়া।

নারী কিংবা পুরুষের সৌন্দর্যের অন্যতম অলঙ্কার হচ্ছে মাথার চুল। যাদের মাথায় চুল যত বেশি, যাদের চুলের সৌন্দর্য যত বেশি, তাদের চুলের অহংকারও তত বেশি। কিন্তু সেই অহংকারের চুল যখন ঝরে পড়ে, তখন তার সৌন্দর্য এবং অহংকারের পতন ঘটে।

সেই অহংকার না ফেরানো গেলেও, টাক মাথায় চুলের সৌন্দর্য ফেরানো যায় পরচুলা লাগিয়ে। তাই দিন দিন পরচুলার চাহিদা এবং গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। টাক মাথা ঢেকে চুল দুলিয়ে বাতাসে এলো চুল উড়িয়ে মনের আনন্দ বৃদ্ধি করা যেতেই পারে। তার জন্য চাই উন্নতমানের পরচুলা। আর সেই পরচুলা তৈরির জন্য প্রয়োজন পরচুলা শিল্প। সম্ভাবনাময় এই ক্ষুদ্র শিল্পের কাজ শুরু হয়েছে টাঙ্গাইলের সখিপুর উপজেলার কালিদাশপাড়া গ্রামে।

কালিদাশপাড়া গ্রামে ঘুরে এই ক্ষুদ্র শিল্পের কাজ করতে দেখা গেছে গৃহিণী যুবতী ও শিশুদের। পরচুলা তৈরি করে সংসারের অভাব ঘুচিয়ে স্বাবলম্ব্বী হচ্ছে কেউ কেউ। তবে মজুরি কম হওয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ঘটেনি। পরচুলা শিল্পী আরতি বেগম জানান, একটি ছোট পরচুলা তৈরি করতে কারও দু'দিন কারও তিন দিন সময় লাগে। আর বড় পরচুলা তৈরিতে তিন থেকে চার দিন সময় লাগে। আকারভেদে প্রতিটি পরচুলা তৈরির মজুরি তিনশ' থেকে আটশ' টাকা দেওয়া হয়।

এই গ্রামের প্রায় ১শ' পরিবার এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত। এই কুটির শিল্পের ব্যাপক প্রসার কামনা করেছেন পরচুলা শিল্পী রিপা, চন্দনা, মীম, রিমা, আনিকা ও লামিয়া। শিল্পের ঠিকাদার রোজিনা বেগম বলেন, চীনা একটি কোম্পানি এই পরচুলা তৈরির কন্ট্রাক্ট দিয়েছে। উপকরণ তারাই সরবরাহ করেন। সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরচুলার বাজার সৃষ্টি করা হলে এর বিস্তার ঘটিয়ে অনেক পরিবার স্বাবলম্বী হতে পারবে। কালিদাসপাড়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য নুরুল ইসলাম বলেন, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে এই কুটির শিল্প গড়ে তোলা হলে গরিব, অসহায় ও অসচ্ছল পরিবারগুলো সচ্ছল জীবনযাপন করতে পারবে।

পরচুলা শিল্পী আরতি বলেন, সংসারের কাজের ফাঁকে পরচুলা বানিয়ে যে টাকা পাই, তা দিয়ে সংসারে স্বামীকে সহযোগিতা করা যায়। ছয় বছরের শিশু লামিয়াকে প্রশ্ন করা হলে, সে বলে, 'কাম কইর টেকা পাই, তা দিয়া দোকানে কিছু কিনা খাই, আর টেকা মায়েরে দেই।'

পরচুলা শিল্পী রোজিনা বেগম বলেন, 'অনেকেই কাজ চায়, কিন্তু সীমাবদ্ধতার জন্য সবাইকে কাজ দেওয়া সম্ভব হয় না। সরকারি ব্যবস্থাপনায় এই কুটির শিল্পের বিস্তার ঘটানো হলে, অর্থনৈতিকভাবে দরিদ্রদের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব এবং বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে