শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাঁশের সাঁকোটি সেতু হবে কবে?

সবুজ শর্মা শাকিল, সীতাকুন্ড (চট্টগ্রাম)
  ১৮ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০
সীতাকুন্ডের সৈয়দপুরে মধ্যবর্তী-বদরখালী খালের ওপর বাঁশের সাঁকোয় পারাপার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ -যাযাদি

'গ্রাম হবে শহর'-এমন সেস্নাগান নিয়ে দেশের মানুষের ভাগ্য বদলের ঘোষণা দিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে লক্ষ্যে চলছে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মযজ্ঞও। কিন্তু এখনো সেই তিমিরেই রয়ে গেছে সীতাকুন্ডের সৈয়দপুর ইউনিয়নের উত্তর ও দক্ষিণ বগাচতর গ্রামের মধ্যবর্তী বদরখালী খালের ওপর অবস্থিত অর্ধশত বছরের প্রাচীন বাঁশের সাঁকোটির ভাগ্য। অসংখ্যবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের শরণাপন্ন হয়েও এই সাঁকোটি সেতুতে পরিণত করতে পারেনি এলাকাবাসী। ফলে হতাশাগ্রস্ত হয়েও ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন চলতে হচ্ছে তাদের।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সীতাকুন্ডের সৈয়দপুর ইউনিয়নের উত্তর ও দক্ষিণ বগাচতর গ্রামের বদরখালী খালের দু'পাশে দুটি গ্রামের মানুষের যোগাযোগের জন্য স্বাধীনতা যুদ্ধেরও আগে স্থাপন করা হয় প্রায় ৮০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি বাঁশের সাঁকো। সেই থেকে প্রতি বর্ষায় নিজেরা চাঁদা তুলে স্বেচ্চাশ্রমে সাঁকোর বাঁশ, পাটাতন, খুঁটি পরিবর্তন করে কোনোরকম যোগাযোগ রক্ষা করেন স্থানীয়রা। এভাবে জরুরি প্রয়োজনে চলাচল করতে গিয়ে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনাও ঘটে। এ কারণে সাঁকোটিকে সেতুতে পরিণত করতে বহুবার ধর্ণা দিয়েছেন এলাকাবাসী। কিন্তু কোনো না কোনো অজুহাত আর কারণ দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। সরেজমিন এই সাঁকোটি পরিদর্শনে গেলে এলাকাবাসী এ বিষয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

স্থানীয় বাসিন্দা মহানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, 'গত বর্ষায়ও যাতায়াতের জন্য গ্রামের লোকজন নিজ খরচে বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছেন। একটি সাঁকো এক বর্ষা পার করার পর আর ব্যবহার করা যায় না। স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে আমরা বেশ কয়েকবার ধরনা দিয়ে বারবার আশ্বাস পেয়েছি। কিন্তু সেতু বা ব্রিজ মেলেনি। '

স্থানীয় কমর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্র কাঞ্চন চন্দ্র নাথ বলেন, 'এ সাঁকো পার হয়ে প্রতিদিন স্কুলে যেতে অনেক কষ্ট হয়, সাঁকোটি সেতুতে পরিণত হলে আমাদের আর কষ্ট হবে না।'

স্থানীয় কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, দেশ স্বাধীনের ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও সাঁকোটি সংস্কারে বা সেতু করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। প্রতিদিন সাঁকো দিয়ে কৃষিপণ্য স্থানীয় সমিতির হাট ও আইয়ুব আলী মার্কেটে নিতে হয়। অনেক সময় দুর্ভোগে পড়তে হয়। যথাসময় কৃষিপণ্য বাজারে পৌঁছাতে না পারলে ন্যায্যমূল্যও পাওয়া যায় না।

সাঁকো দিয়ে নিয়মিত যাতায়াতকারী কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যকর্মী নাজমা আক্তার বলেন, 'সাঁকোটি নড়বড়ে থাকায় চলাচলের সময় ভয়ে থাকি। বিশেষ করে বর্ষাকালে বিশালাকৃতির এই সাঁকো পার হতে কষ্ট হয়। কাঁদা-পানিতে একাকার হয় খালের পার। বর্তমানে এ সাঁকো চলাচলের একেবারে অনুপযোগী। প্রায় সময় পড়ে গিয়ে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে। আর শুধু দুই গ্রাম নয় বিভিন্ন কাজে বারৈয়াঢালা ও সৈয়দপুর দুই ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ এ সাঁকোর মাধ্যমে চলাচল করেন।'

ইউপি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম নিজামী যাযাদিকে বলেন, 'আমি পিআইওকে (প্রকল্প উন্নয়ন কর্মকর্তা) বিষয়টি অবহিত করেছি। তিনি বলছেন বদরখালী খালের ওপর অবস্থিত বাঁশের সাঁকোটি ৮০ ফুট লম্বা। তারা সাধারণত ৫০ ফুটের বেশি সেতু তৈরি করে না। তাই এটি করতে পারছেন না। এরপর আমি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে এর জন্য আবেদন করেছি। বরাদ্দ পাওয়া গেলে সেতুটি নির্মাণ করা হবে।'

সীতাকুন্ড উপজেলা প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম যাযাদিকে বলেন, 'জনবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়ায় সেখানে একটি সেতু নির্মাণ জরুরি। তিন বছর আগে সাঁকোটির স্থানে সেতু নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা পাঠিয়েছেন। এর কোনো কার্যকারিতা না থাকায় গত বুধবার আবার প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। প্রস্তাবটি অনুমোদনের পর সেতু নির্মাণের পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হবে।'

সীতাকুন্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন রায় বলেন, 'এটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে যাতে দ্রম্নত সেতুটি করা যায়। '

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে