শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
মার্চে তুর্কি প্রেসিডেন্টের সফর

শিক্ষা ও বাণিজ্যসহ একাধিক চুক্তির প্রস্তুতি বাংলাদেশের

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে চায় তুরস্কের রাষ্ট্রায়ত্ত এলপিজি উৎপাদন ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান আইগাজ। এ ছাড়া কর্ণফুলী নদীতীরে যৌথ উদ্যোগে এলপিজি পস্নান্টে বিনিয়োগ করতে চায় দেশটি
রেজা মাহমুদ
  ১৮ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়ে্যপ এরদোয়ানের ঢাকা সফরে নতুন ও পুরনো বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। দেশটির সঙ্গে স্বাক্ষরিত পুরনো চুক্তিও এই সফরে ঠিকঠাক করে নেওয়া হবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও ঢাকায় ডি-৮ সম্মেলন উপলক্ষে আগামী মার্চে তুরস্কের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের কথা রয়েছে।

তুরস্কের রাষ্ট্রপতির সম্ভাব্য বাংলাদেশ সফরের সময় দ্বিপক্ষীয় চুক্তি, সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর ও সংশ্লিষ্ট নানাবিধ বিষয় চলতি মাসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পশ্চিম) রাষ্ট্রদূত শাব্বির আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়েছে। সভার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ তিনগুণ বাড়াতে বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি পণ্য আমদানি করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে তুরস্ক। এজন্য আমদানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান বাধা চিহ্নিত করে তা দূর করার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট।

কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে চায় তুরস্কের রাষ্ট্রায়ত্ত এলপিজি উৎপাদন ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান আইগাজ। এ ছাড়া কর্ণফুলী নদীতীরে যৌথ উদ্যোগে এলপিজি পস্নান্টে বিনিয়োগ করতে চায় দেশটি। চট্টগ্রাম বন্দরের বদলে তুরস্ককে মোংলা বন্দর ব্যবহার করতে দিতে চায় বাংলাদেশ। এ ছাড়া আড়াই লাখ বর্গমিটার আয়তনের একটি আধুনিক হাসপাতাল স্থাপনেরও প্রস্তাব দিয়েছে দেশটি।

বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ, মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিএসটিআইর সক্ষমতা বাড়াতে পৃথক চুক্তি ও সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছে দেশটি।

এরদোয়ানের সফরে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও উন্নয়ন সহযোগিতা বিষয়ে এমন বেশকিছু চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করতে আগ্রহী তুরস্ক। এসব ক্ষেত্রে সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশে যাতে ধর্মীয় মৌলবাদের বিস্তার না ঘটে, সে বিষয়ে সতর্কতার সঙ্গে এগোতে চায় ঢাকা।

সভায় নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় কর্মকর্তারা জানান, আইগাজকে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারে অনুমতি দেওয়া বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। তাই চট্টগ্রামের বদলে মোংলা বন্দর ব্যবহারের বিষয়টি বিবেচনা করতে তুরস্ককে প্রস্তাব দেবে ঢাকা।

সভায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্মকর্তারা জানান, গত সেপ্টেম্বরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের তুরস্ক সফরকালে এরদোয়ান বাংলাদেশ-তুরস্কের বাণিজ্য তিন বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার ওপর জোর দেন। তুরস্ক বাজারে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে কী কী বাধা রয়েছে, তা চিহ্নিত করে বাংলাদেশের রপ্তানিযোগ্য তালিকা চেয়েছিলেন এরদোয়ান। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে তুরস্কের কাছে যে তালিকা পাঠিয়েছে তাতে তৈরি পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য, ওষুধসহ বাংলাদেশের প্রধান প্রধান রপ্তানি পণ্যের নাম আছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ব ইউরোপ ও সিআইএস অণুবিভাগের মহাপরিচালক সিকদার বদিরুজ্জামান সভায় বলেন, তুরস্ক সরকার ঢাকা বা ঢাকার অদূরে ২ লাখ ৫০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের একটি আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণ করতে চায়। সেজন্য দেশটি বাংলাদেশের কাছে জমি চেয়েছে। জমি বরাদ্দ দিতে ইতোমধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রীকে ডিও লেটার দিয়েছেন।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ শওকত আলী এ প্রসঙ্গে বলেন, উত্তরা, পূর্বাচল বা ঝিলমিল প্রকল্প থেকে প্রয়োজনীয় জমি বরাদ্দ দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। জমি খোঁজার পাশাপাশি তুরস্ককে ঢাকার কমলাপুরে ৫ একর আয়তনের রেলওয়ে হাসপাতালটি অংশীদারত্বের ভিত্তিতে পরিচালনার প্রস্তাব দেবে ঢাকা।

তুরস্ক বাংলাদেশের সঙ্গে 'অ্যাগ্রিমেন্ট অন ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন' স্বাক্ষর করার প্রস্তাব দিয়েছে। এ চুক্তিতে সংশ্লিষ্ট থাকবে তুরস্কের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা টার্কিশ কোঅপারেশন অ্যান্ড কো-অর্ডিনেশন এজেন্সি (টিকা)। সংস্থাটি ঢাকায় অফিস খুলতে চায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্মতি দিলে চুক্তিটি সই হতে পারে।

বাংলাদেশের সঙ্গে 'অ্যাগ্রিমেন্ট অন কো-অপারেশন ইন দ্য ফিল্ড অব এডুকেশন' স্বাক্ষর করতে চায় তুরস্ক। এ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেবে তুরস্ক সরকার। বৃত্তির জন্য ছাত্র মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় ধর্মীয় মৌলবাদের বিষয়টি নিবিড় সতর্কতায় বিবেচনার বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে ঢাকা।

এরদোয়ানের সফরে দেশটিতে থাকা অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরত দিতে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) স্বাক্ষরেরও প্রস্তাব দিয়েছে তুরস্ক। এতে সম্মতি নেই বাংলাদেশের।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পশ্চিম ইউরোপ অণুবিভাগের মহাপরিচালক আন্দালিব ইলিয়াস সভায় জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোয় যেসব বাংলাদেশি ইতোমধ্যে অবৈধ হয়ে পড়েছেন, তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ও ইইউ ২০১৭ সালে একটি এসওপি স্বাক্ষর করেছে।

তিনি জানান, তুরস্ক সরকারও একই ধরনের একটি চুক্তি বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাক্ষর করতে আগ্রহী। এতে বাংলাদেশের অনাগ্রহ রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে