তঁাতশিল্প আধুনিকায়নে বিশেষ উদ্যোগ, বাড়ছে ঋণ

প্রকাশ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
সংস্কারের অভাবে হারিয়ে যেতে থাকা তঁাত ইউনিট রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে দেড় হাজার তঁাত আধুনিকায়নের জন্য ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয় করবে সরকার। তবে তঁাতিদের কোনো টাকা-পয়সা এ জন্য ব্যয় করতে হবে না। এ ছাড়া মূলধনের অভাবে তঁাত ইউনিট বন্ধ রেখেছেন, এমন অস্বচ্ছল নিবাির্চত ৩৪ হাজার ৬৫০টি তঁাতের অনুক‚লে চলতি মূলধন হিসেবে ১৪৫ কোটি ১০ লাখ টাকা ঋত বিতরণ করবে সরকার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সবশেষ দু’টি তঁাত শুমারি (১৯৯০ ও ২০০৩) অনুযায়ী, ১৯৯০ সালে যেখানে দেশে মোট ২ লাখ ১২ হাজার ৪২১টি তঁাতকল ছিল, সেখানে ২০০৩ সালে কমে দঁাড়ায় ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫১২টিতে। অথার্ৎ তঁাতকলের সংখ্যা ক্রমেই কমছে। যদিও সবশেষ জরিপ অনুযায়ী, এ শিল্পের বাষির্ক উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৬৮ দশমিক ৭৯ কোটি মিটার কাপড়। জাতীয় অথর্নীতিতে মূল্য সংযোজনের দিক দিয়ে অবদান ছিল ১ হাজার ২২৭ কোটি টাকারও বেশি। তঁাতের সুদিন ফেরাতে তঁাত ইউনিটের আধুনিকায়নের পাশাপাশি বাড়ছে ঋত বিতরণের হারও। বাংলাদেশ তঁাত বোডর্ সূত্র জানায়, তঁাতিদের ঋণ বিতরণের হার বাড়ানো হচ্ছে। এমন উদ্যোগ এবারই প্রথম। আগে কোমর তঁাতে ১০ হাজার টাকা ঋণ দেয়া হতো, এখন ৩০ হাজার করা হয়েছে। একজন তঁাতি সবোর্চ্চ পঁাচটি তঁাতে ৫০ হাজার টাকা ঋণ পাবেন। একইভাবে জামদানি ও সিল্ক তঁাতে ১৮ হাজার টাকার পরিবতের্ ৬০ হাজার টাকা ঋণ দেয়া হবে। ঋণের সাভির্স চাজর্ পঁাচ শতাংশ। ঋণ দেয়ার প্রথম তিন মাসে কোনো কিস্তি দিতে হবে না। তিন মাস পরে সাভির্স চাজর্সহ ৩৬ কিস্তিতে তঁাতিদের ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এ ছাড়াও ফ্রেম তঁাতে ১৮ হাজারের পরিবতের্ ৫০, পিট লোমে ১২ হাজার টাকার পরিবতের্ ৪০ হাজার টাকা ঋণ পাবেন তঁাতিরা। বাংলাদেশ তঁাত বোডের্র পুনবার্সনের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন ও আথর্-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নে ‘তঁাতিদের আথর্-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে চলতি মূলধন সরবরাহ ও তঁাতের আধুনিকায়ন’ প্রকল্পের আওতায় এ সব সুবিধা পেতে চলেছেন তঁাতিরা। প্রকল্পের মোট ব্যয় ১৫৮ কোটি টাকা। চলতি সময় থেকে ২০২৩ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ তঁাত বোডর্। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হবে ঋণ বিতরণ ব্যবস্থা। বাংলাদেশ তঁাত বোডের্র প্রধান (পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন) আইয়ুব আলী বলেন, তঁাতের সুদিন ফেরাতে বাড়ছে ঋণহার। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হবে ঋণ বিতরণ। যে সব তঁাতি অস্বচ্ছল শুধু তারাই পাবেন ঋণ। এ ছাড়া অনেক তঁাত ইউনিট জরাজীণর্। যে সব তঁাতি এগুলো মেরামত করতে পারছেন না, তাদের জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় নারী তঁাতিদের ক্ষমতায়ন করা হবে। তঁাত খাতের উন্নয়ন ও আয় বধের্নর মাধ্যমে তঁাতিদের আথর্-সামাজিক উন্নয়ন এবং জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করা হবে। যে কোনো মূল্যে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে বদ্ধপরিকর সরকার। ১৯৯০ সালের আগেও হস্তচালিত তঁাতশিল্প ছিল দেশের সবর্বৃহৎ কুটির শিল্প। তঁাত শিল্পে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ নিয়োজিত ছিল। কমর্সংস্থানের দিক থেকে কৃষি ও গামের্ন্টস শিল্পের পরই তৃতীয় বৃহত্তম এবং গ্রামীণ কমসর্ংস্থানের দিক থেকে দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত ছিল তঁাত। কিন্তু ভিনদেশি পোশাকের বাজার দখল এবং আধুনিকায়ন ও পৃষ্ঠপোষকতা-প্রশিক্ষণের অভাবে তঁাতশিল্প ছেড়ে দিচ্ছেন তঁাতিরা। বিদেশি পোশাকের পাশাপাশি দেশীয় অন্যান্য পোশাকেও আধুনিকায়নের ফলে নতুনত্ব এলেও তঁাত শিল্পে উন্নত প্রযুক্তি বা প্রশিক্ষণ নেই। এর মধ্যে কঁাচামালের মূল্যবৃদ্ধি ও শ্রমের যথেষ্ট মূল্য না পাওয়ার কারণে এই শিল্প ছেড়ে জীবিকার তাগিদে অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন তঁাতিরা। ঢাকা, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, যশোর, কুষ্টিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফরিদপুর, পটুয়াখালী, বরিশাল এবং পাহাড়ি অঞ্চলের তঁাতকল বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর মিলছে সংবাদমাধ্যমে। তঁাতিদের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে এই শিল্পে ধরে রাখতেই সরকার এমন উদ্যোগ হাতে নিতে যাচ্ছে।