শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
পুঞ্জীভূত ঋণের বোঝা

জিলবাংলা চিনিকলে বহুমুখী সংকট

লিয়াকত হোসাইন লায়ন, ইসলামপুর (জামালপুর)
  ১৯ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

পুঞ্জীভূত ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে জিলবাংলা চিনিকল বহুমুখী সংকটে পড়েছে। দীর্ঘদিনের বকেয়া ঋণের বোঝা মাথায় থাকায় নুয়ে পড়েছে দেওয়ানগঞ্জের এই চিনিকলটি। স্বল্প উৎপাদন ক্ষমতা, মিলের পুঞ্জীভূত বকেয়া ঋণের সুদ, শ্রমিক-কর্মচারীদের অসন্তোষ, জোনের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ২৫টি ইঞ্জিনচালিত ক্রাশার মেশিন ব্যবহারসহ কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় ময়দা, পচা চিটাগুড় ও নালী দিয়ে গুড় তৈরির প্রবণতা বৃদ্ধিতে জামালপুরের একমাত্র চিনি শিল্প প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েছে।

জানা গেছে, ১৯৫৮ সালে পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের যৌথ অর্থায়নে ৩৫১ একর জমির উপর মিলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। চিনি কলটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ১৯৫৯-৬০ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম আখ মাড়াই শুরু হয়। চলতি বছর ২০২০-২১ মৌসুমে মিল জোন এলাকায় ৭ হাজার আখ চাষি উৎপাদিত আখ নিয়ে ৬৩তম আখ মাড়াই শুরু হয়। ১৯৫৯-৬০ থেকে ৬২তম আখ মাড়াই মৌসুম অতিক্রমকালে ৪৪টিতে লোকসান ১৮টি লাভ করেছে। মিলের এই ৬২তম আখ মাড়াই বড় অংশটাই লোকসান দিতে হয়েছে।

অন্যদিকে গত অর্থ বছরে ২০১৯-২০ আখ মাড়াই মৌসুমে ৬ কোটি টাকা মূল্যের ১ হাজার মেট্রিক টন চিনি, ১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা মূল্যের ৭ মেট্রিক টন চিটাগুড় অবিক্রীত রয়েছে। শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনুমোদিত ৯৮৯ জনের মধ্যে ৬৩৭ জন কর্মরত রয়েছেন। বাকি ৩৫২টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য হলেও ২০২০ সালে শ্রমিকদের ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা বেতন বকেয়া পাচ্ছে। ২০২০-২১ আখ মাড়াই ৯৫ দিন ধার্য করা হলেও বিগত বন্যার কারণে চরাঞ্চলের আখের ব্যাপক ক্ষতির ফলে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই মিল বন্ধ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

মিল কৃষি ব্যবস্থাপক মজিবর রহমান জানান, 'আখ মাড়াই ব্যাংক সুদসহ চিনির মূল্য ১শ' ৮০ টাকা পড়লেও চিনি বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়। বিভিন্ন রাসায়নিক সংস্থা থেকে বীজ সার কীটনাশক প্রায় ২ কোটি ৪৮ লাখ ও বিসিআইসি ৫৬ কোটি টাকা মিলের কাছে পাওনা রয়েছে। এই পুঞ্জীভূত ব্যাংক ঋণের টাকার সুদ দিতে গিয়ে মিলকে দীর্ঘদিনের লোকসান টানতে হচ্ছে।'

গত বছর আখ মাড়াই অবিক্রীত চিনি ৬৫৬ মে.টন এবং ২০-২১ ১ হাজার ২০ মে.টন উৎপাদন হয়েছে। ৪শ'২৬ কোটি টাকা পুঞ্জীভূত মিলের ঋণ ৬২তম পর্যন্ত থাকায় মিলের লোকসান হওয়ার বড় কারণ।

আখ চাষি কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আ. মান্নান মোলস্না জানান- প্রতি বছর পুঞ্জী সংকট প্রকৃত চাষিদের লোন না দেওয়ায় চাষিদেরও চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

জিলবাংলা চিনি কলের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও চাষিরা জানান- মিলটিতে প্রতি বছর লোকসানের দায়মুক্ত করে লাভজনক পর্যায়ে নিতে মিলে বকেয়া ঋণের সুদ মওকুফ করাসহ পুরাতন আমলে পুরাতন পদ্ধতির উৎপাদন ব্যবস্থার উন্নয়ন করে মাড়াই ক্ষমতা দ্বিগুণ করতে হবে। চাষিদের ন্যায্যমূল্য সঠিক সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে এবং দেশের প্রচলিত আইনে যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে চিনিশিল্প ধ্বংসকারী শ্যালো ইঞ্জিনচালিত গুড় তৈরির সরঞ্জাম ক্র্যাশার মেশিন বন্ধ করতে হবে।

ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রায়হানুল হক জানান, আখ চাষিদের উৎসাহিতকরণ, সার, বীজ, যথা সময়ের মধ্যে আখের টাকা পরিশোধ, চাষিদের স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান, প্রান্তিক চাষিদের প্রতি মাসে আখ চাষের উদ্বুদ্ধকরণ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। কৃষকরা যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে কর্র্তৃপক্ষের খেয়াল রাখাসহ সবাইকে সচেতন হতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে