শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বরেন্দ্র অঞ্চলে নতুন আলুর দাম নিয়ে শঙ্কিত কৃষক

এম. আব্দুল বাতেন, গোদাগাড়ী
  ২০ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০
রাজশাহীর গোদাগাড়ীর একটি ক্ষেতে আলু তোলায় ব্যস্ত কৃষক-কৃষানি -যাযাদি

বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে পরিচিত রাজশাহী বিভাগ। ফসল উৎপাদনেও রয়েছে যথেষ্ট খ্যাতি। ধান, পাট, গম, টমেটোসহ নানা নিত্যনতুন ফসল উৎপাদন করে যথেষ্ট সুনাম কুড়াচ্ছে এ অঞ্চল। চলতি মৌসুমে এই বরেন্দ্র অঞ্চলে উঠতে শুরু করেছে অগ্রিম আলু। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর গাছ ও ফলন ভালো হচ্ছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। আর রাজশাহী কৃষি বিভাগ বলছে এই অঞ্চলে এবার আলু আবাদে যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল তা ছাড়িয়ে গেছে। তবে ফলন ভালো হলেও সময়মতো দাম ভালো পাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে শঙ্কিত কৃষক।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় আলুর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে। কিন্তু ১ হাজার ৬২৯ হেক্টর জমি বেশি আবাদ হয়ে তা দাঁড়িয়েছে ৩৬ হাজার ৬২৯ হেক্টর।

রাজশাহী জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলু আবাদ হয়েছে তানোর উপজেলায় ১২ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে। এছাড়াও গোদাগাড়ী উপজেলায় ১৮৫০ হেক্টর, পবায় ৪২৫০ হেক্টর, মোহনপুরে ৪৭০৫ হেক্টর, বাঘমারায় ৯৪৮০ হেক্টর, দুর্গাপুরে ১৮৭০ হেক্টর, পুঠিয়ায় ১০৫০ হেক্টর, চারঘাটে ৮৫ হেক্টর ও বাঘায় ৪১০ হেক্টর। এছাড়াও রাজশাহী মহানগরীর মতিহারে ২৯ হেক্টর, বোয়ালিয়ায় ৫০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে বলে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে।

গোদাগাড়ীর আলুচাষি মো. হিমেল জানান, এবার ৭০ বিঘা জমিতে তিনি আলু আবাদ করেছেন। অন্যের জমি লিজ নিয়ে সব মিলে আলু লাগাতে বিঘা প্রতি খরচ হয় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। অগ্রিম আলু প্রতি বিঘায় ফলন হয় ৭০-৮০ মন। নতুন আলু কেজিপ্রতি বিক্রি হয় পাইকারি সর্বোচ্চ ১৪ টাকা। এই হিসেবে বিঘাপ্রতি লাভ হয় ১০ হাজার টাকার মতো। তবে আলু সংরক্ষণের জন্য কোল্ডস্টোরে রাখলে ৬০ কেজির বস্তা ভাড়া দিতে হয় ২৩৫ টাকা। এছাড়াও অনেক সময় আলুর দাম না থাকায় বড় ধরনের লোকসান গুনতে হয়ে চাষিদের।

তানোরের কৃষক মো. আলম জানান, পড়াশোনার পাশাপাশি প্রতি বছর আলু আবাদ করেন তিনি। এবার দুই বিঘা নিজের জমিতে আলু আবাদ করেছেন। এতে বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা। ডায়মন্ড ও কার্ডিনাল জাতের অগ্রিম আলু উঠতে শুরু করেছে। এই আলু নভেম্বরের মাঝামাঝিতে লাগালে ৬০ দিনের মধ্যে উঠতে শুরু করে। বর্তমানে এই আলুর পাইকারি সর্বোচ্চ ১৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা কেজি। অগ্রিম জাতের এই আলু বিঘাপ্রতি ফলন হয় ৬০ থেকে ৭০ মন। সব খরচ বাদ দিয়ে মোটামুটি ১৫ হাজার টাকা লাভ হবে। তবে সংরক্ষণের অভাবে আলু এক সময় কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জমি হতে যখন আলু উঠে তখন এক শ্রেণীর ফড়িয়া দালাল কেজিপ্রতি ৪ থেকে ৫ টাকা কম দামে আলু কিনে নেয় কৃষকদের কাছ থেকে। ওরা পাইকারি দরে ওই আলু অতি মুনাফায় বিক্রি করে। আর কমদামে আলু কেনার এসব সিন্ডিকেট চক্র মূলত বাজার নিয়ন্ত্রণ করে।

অন্যদিকে আলু সংরক্ষণের জন্য কোল্ডস্টোরে রাখতে গেলে সেখানেও রয়েছে সিন্ডিকেট চক্র। বস্তাপিছু আলু রাখতে অনেক বেশি টাকা নেয়, ফলে সব আলু কৃষক কোল্ডস্টোরে রাখতে পারে না। ফলে এক সময় সিন্ডিকেট চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে কোলস্টোরে আলু রাখতে হয়।

আলু চাষি হাসান জানান, অগ্রিম জাতের যে আলু ৬০ দিনে উঠানো হয় সেটিতে কিছুটা লাভবান হওয়া যায়। তবে এবার বীজসহ সবকিছুর দাম বেশি হওয়ায় আলুতে লোকসানের শঙ্কা আছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শামছুল হক জানান, রাজশাহী জেলায় আলু আবাদে যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো তা ছাড়িয়ে গেছে। আবহাওয়া ভালো ও রোগ-বালাই না থাকাই আলুর বাম্পার ফলন হবে। বর্তমানে যে দাম আছে তা থাকলে আলু চাষিরা লাভবান হবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে