বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বান্ধবীকে সাড়ে ৪ কোটি টাকার ফ্ল্যাট উপহার পি কে হালদারের

যাযাদি রিপোর্ট
  ২০ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০
প্রশান্ত কুমার হালদার

প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) তার বান্ধবী অবন্তিকা বড়ালকে ধানমন্ডিতে চার কোটি ৩৫ লাখ টাকার বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছিলেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে। এ ফ্ল্যাটটি এখন জব্দ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে দুদক।

এর আগে গত বুধবার এই ফ্ল্যাট থেকেই অবন্তিকা বড়ালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে তাকে তিনদিনের রিমান্ডে নিয়ে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদে এ ফ্ল্যাটের তথ্যটি বেরিয়ে আসে। প্রাথমিক পর্যায়ে অবন্তিকা ফ্ল্যাটটি নিজের টাকায় কেনার কথা দাবি করলে যে ডেভেলপার কোম্পানি থেকে ওই ফ্ল্যাটটি কেনা হয়েছিল, সেখান থেকে নথিপত্র সংগ্রহ করে দুদক। তাতে দেখা যায়, ২০১৬ সালে চার কোটি ৩৫ লাখ টাকায় ধানমন্ডির ১০নং রোডে প্রায় তিন হাজার বর্গ্রপ্তটের একটি ফ্ল্যাট কিনে অবান্তিকাকে উপহান দেন পি কে হালদার। বিল্ডিং টেকনোলজি অ্যান্ড আইডিয়াস লিমিটেড (বিটিআই) থেকে ক্রয় করা ফ্ল্যাটটির মূল্য পরিশোধ হয় নগদ ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে। পুরো অর্থই আসে পি কে হালদারের বিভিন্ন হিসাব থেকে। পি কে হালদারের সুখাদা লিমিটেড ও হাল ইন্টারন্যাশনাল নামে দুটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেখানে গ্রেপ্তার অবন্তিকা বড়ালের বিনিয়োগ আছে।

দুদক সূত্র জানায়, পি কে হালদারের সঙ্গে যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশে বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কর্মকান্ডের মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ থাকায় অবন্তিকাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদক অবন্তিকা বড়ালের রাজধানীর ধানমন্ডির ফ্ল্যাটে একটি নোটিশ পাঠায়। ২৮ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় তাকে হাজির হতে বলা হয়েছিল ওই নোটিশে। তবে দুদকের চিঠি পাওয়ার পরও তিনি যথাসময়ে হাজির হননি। ব্যক্তিগত কোনো সমস্যার কারণে হাজির হতে পারেননি বা কবে হাজির হতে পারবেন- এ বিষয়েও লিখিত বা ফোনে দুদককে অবহিত করেননি তিনি। এর দুই সপ্তাহ পর অবন্তিকাকে গত বুধবার গ্রেপ্তার করা হয়।

এ বিষয়ে দুদক সচিব ডক্টর মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার জানান, পি কে হালদারের ইসু্যটা অনেক বড়। বিভিন্ন জনের মাধ্যমে তার বিভিন্ন দিকে সূত্র আছে। ইতোমধ্যে অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মোটামুটি ৬২ জনের সঙ্গে পি কে হালদারের যুক্ততা পাওয়া গেছে। এসব তথ্য আমাদের তদন্তকারী কর্মকর্তা জানিয়েছেন। বিভিন্ন ব্যাংকে রাখা পি কে হালদারের প্রায় এক হাজার ৫৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা ফ্রিজ করা হয়েছে।

জানা গেছে, পি কে হালদারের ঘনিষ্ঠজন শংখ ব্যাপারীকে জিজ্ঞাসাবাদে অবন্তিকা বড়াল বিষয়ে তথ্য বের হয়ে আসে। এরপরই তার বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু হয়। অবন্তিকা এবং পি কে হালদার উভয়ের বাড়ি পিরোজপুর। পি কে হালদারের বাড়ি জেলার নাজিরপুরের দীঘিরজান গ্রামে। এলাকার মেয়ে হিসেবে অবন্তিকার সঙ্গে পরিচয় তার। অবন্তিকার বাবা ছিলেন কলেজ শিক্ষক। তিনি মারা যাওয়ার পর অবন্তিকা ও তার পরিবার জেলা শহর ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন। এরপরই অবন্তিকার সঙ্গে পি কে হালদারের ঘনিষ্ঠতা হয়। পি কে হালদারের কাছ থেকে অনেক সুবিধা নিয়েছেন তিনি। একইভাবে নিজের অবৈধ সম্পদ আড়াল করেছেন এই অবন্তিকার মাধ্যমে।

পি কে হালদারের অর্থ পাচার ও প্রতারণার মামলায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্র্রেপ্তার অবন্তিকা বড়াল বর্তমানে কারাগারে। ইতোমধ্যে তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। চলতি সপ্তাহের যেকোনো দিন তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি দল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে