বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
সংসদে প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী

ডেল্টা পস্ন্যানের আওতায় ৮০ প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ

যাযাদি রিপোর্ট
  ২১ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০
শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ডেল্টা পস্ন্যানের আওতায় ২০৩০ সালের মধ্যে ৮০টি প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর জন্য মোট খরচ হবে দুই হাজার ৯৭৮ বিলিয়ন টাকা। ডেল্টা ফান্ডের কাঠামো ও ফান্ড পরিচালনার নীতিমালা প্রণয়নের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

বুধবার জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অধিবেশনের প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির মসিউর রহমান রাঙ্গার এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

জাতীয় পার্টির সংরক্ষিত আসনের সদস্য রওশন আরা মান্নানের প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনোমিক্স অ্যান্ড বিজনেস রিচার্সের ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক লিগ টেবিল-২০২১ অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন যে ধরনের অর্থনৈতিক বিকাশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতি। এই রিপোর্টে মূলত সামনের বছর এবং আগামী ১৫ বছরে বিশ্বের কোনো দেশের অর্থনীতি কী হারে বাড়বে তারই পূর্বাভাষ দেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালের সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।

তিনি আরও বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে অন্য অনেক দেশে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলেও বাংলাদেশ তা অনেকটাই এড়াতে পেরেছে। ২০২০ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫.২৪ শতাংশ হয়েছে। ২০১৯ সালে প্রবৃদ্ধি ছিল ৮.১৫ শতাংশ, যা ছিল দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি। খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে দশম। বাংলাদেশ আজ চালে উদ্বৃত্ত দেশ। চাল উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয়, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, আলু উৎপাদনে সপ্তম, আম উৎপাদনে সপ্তম, পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম, চাষের মাছ উৎপাদনে পঞ্চম, ছাগল উৎপাদনে চতুর্থ।

ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য কাজিম উদ্দীনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের মানুষের জীবন ও অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সরকার বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে দেশে করোনাভাইরাসসহ অর্থনৈতিক অবস্থা স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হয়েছে। করোনাভাইরাসের তিন কোটি ডোজ টিকা সংগ্রহের কাজ চলছে। শিগগিরই টিকা দেওয়া শুরু হবে।

জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারির প্রশ্নে তিনি বলেন, করোনাকালে বাংলাদেশে এসে আটকে পড়া ও চাকরিচু্যত প্রবাসীদের নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে শ্রমিক পাঠানোর লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। প্রবাসী অধু্যষিত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের অনুরোধ জানিয়ে কোভিডকালে চাকরিচু্যত প্রবাসীদের সার্বিক কল্যাণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ফোনে যোগাযোগসহ পত্র প্রেরণ করা হয়। এতে তিনটি বিষয় গুরুত্ব দেওয়া হয়। চাকরিচু্যত প্রবাসী কর্মীদের নূ্যনতম খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, চাকরিচু্যতদের যাবতীয় দেনা-পাওনা পরিশোধসহ ছয় মাসের বেতনভাতা দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানো এবং বিদেশে কর্মসংস্থান ও ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য ওই দেশগুলোতে কোভিড-১৯ রিকভারি অ্যান্ড রেসপন্ড ফান্ড গঠনের সুপারিশ।

আহসানুল হকের প্রশ্নে তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নজিরবিহীন বিরূপ প্রভাব ফেলেছে, যা থেকে বাংলাদেশও মুক্ত নয়। তবে শুরু থেকেই আমাদের সরকার সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে, যার ফলে এ পর্যন্ত কোভিড আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা, মৃতু্যর হার এবং অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ তুলনামূলকভাবে অধিকতর সাফল্য দেখাতে পেরেছে।

সংরক্ষিত নারী আসনের সুলতানা নাদিরার প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর ঘূর্ণিঝড় আক্রান্ত ও নদী ভাঙনকবলিত ভূমিহীন, গৃহহীন ও ছিন্নমূল পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। ১৯৯৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মোট তিন লাখ ৮৫ হাজার ৪৭৩টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে দুই শতাংশ খাস জমি বন্দোবস্ত প্রদানপূর্বক একক গৃহনির্মাণের মাধ্যমে দেশব্যাপী প্রথম পর্যায়ে ৬৬ হাজার ভূমিহীন, গৃহহীন পরিবারের জন্য গৃহনির্মাণ করে দেওয়ার কার্যক্রম চলছে। পর্যায়ক্রমে আট লাখ ৮৫ হাজার ৫২২টি পরিবারকে গৃহনির্মাণ ও ব্যারাকের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হবে।

সরকারি দলের আছলাম হোসেন সওদাগরের প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানের প্রতিবন্ধী ক্রীড়া কমপেস্নক্স স্থাপনের জন্য সাভারের বারইগ্রাম ও দক্ষিণ রামচন্দ্রপুর মৌজার ১২ দশমিক ০১ একর জমি দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। এখানে প্রতিবন্ধী ক্রীড়াবিদদের জন্য স্টেডিয়ামসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ আন্তর্জাতিক মানের প্রতিবন্ধী ক্রীড়া কমপেস্নক্স নির্মাণের জন্য ৪৯৯ কোটি ৯৬ লাখ ৩২ হাজার টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে ডিপিপি অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে