বঙ্গবন্ধু সেতু ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া

ঘন কুয়াশায় যান চলাচল ব্যাহত, চরম ভোগান্তি

প্রকাশ | ২৩ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
দৌলতদিয়া ও পাটুলিয়া ঘাটে যানজট -যাযাদি
ঘন কুয়াশার কারণে বঙ্গবন্ধু সেতু ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে। এতে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপ্রান্তে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা ও পশ্চিমপ্রান্তে সিরাজগঞ্জ সড়ক পর্যন্ত থেমে থেমে যানজট সৃষ্টি হয়। এছাড়া দৌলতদিয়া ও পাটুলিয়া ঘাটে যানবাহন আটকে পড়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন চালকসহ যাত্রীরা। আমাদের স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর : আমাদের স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল জানান, ঘন কুয়াশার কারণে বঙ্গবন্ধু সেতুতে দফায় দফায় টোল আদায় বন্ধ থাকায় বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে। এতে সেতুর পূর্বপ্রান্তে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা ও পশ্চিমপ্রান্তে সিরাজগঞ্জ রোড পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়। সেতুর টোলপস্নাজা বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত দফায় দফায় কয়েক ঘণ্টা বন্ধ রাখায় মহাসড়কে এ যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজটের কারণে যাত্রী ও পরিবহণ-সংশ্লিষ্টরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। এতে শিশু ও বয়স্ক যাত্রীরা বেশি কষ্টের শিকার হন। গোড়াই হাইওয়ে থানার এলেঙ্গা ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. কামাল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, ঘন কুয়াশার কারণে সেতুর ওপর দুর্ঘটনা এড়াতে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে বেশ কয়েকবার টোল আদায় বন্ধ রাখা হয়। এজন্য কয়েক ঘণ্টা সেতুর ওপর দিয়ে যানচলাচল করতে পারেনি। তাই সেতুর দুই পাড়ে যানবাহন আটকা পড়ে গাড়ির দীর্ঘ জট সৃষ্টি হয়। পরে সেতুতে টোল আদায় শুরু হলেও মাত্রাতিরিক্ত গাড়ির চাপে ধীরগতিতে যান চলাচল করতে থাকে। এতেও থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়। মালবাহী ট্রাকচালকরা জানান, বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপ্রান্তে সড়কের একদিকে মহাসড়ক উন্নয়নের কাজ চলছে। এতে এক পাশ দিয়ে পরিবহণ চলাচল করছে, এতে গাড়ির জট লেগেই থাকছে। অন্যদিকে ঘন কুয়াশার কারণে সেতুতে টোল আদায় বন্ধ রাখায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাদের মহাসড়কে কাটাতে হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাড় থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাজী আইয়ুবুর রহমান জানান, ১ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকেই কুয়াশা বেড়ে যায়। রাত ৯টার পর এর তীব্রতা আরও বাড়তে থাকে। ফলে সাড়ে ৯টার দিকে সেতু কর্তৃপক্ষ যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। যানজট নিরসনে পুলিশ কাজ করছে বলেও তিনি জানান। গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি জানান, ঘন কুয়াশার কারণে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে শুক্রবার ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে দীর্ঘ ৯ ঘণ্টা। বৃহস্পতিবার রাত ২টা থেকে কুয়াশার ঘনত্ব বৃদ্ধি পেলে দুর্ঘটনা এড়াতে এই নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার সকালে কুয়াশার ঘনত্ব কমে গেলে বেলা ১১টার দিকে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়। দীর্ঘ সময় ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় নদী পারের অপেক্ষায় দৌলতদিয়া প্রান্তে আটকা পড়েছে সহস্রাধিক যানবাহন। আটকেপড়া যাত্রী, চালক ও ঘাট-সংশ্লিষ্টরা তীব্র শীতে চরম ভোগান্তির শিকার হন। শুক্রবার বেলা ৩টা পর্যন্ত দৌলতদিয়া ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে কমপক্ষে ২ কিলোমিটার এবং গোয়ালন্দ মোড় এলাকায় আরও কমপক্ষে ২ কিলোমিটারজুড়ে সারিবদ্ধভাবে আটকে রাখে পুলিশ। দুই এলাকায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অন্তত ৫ শতাধিক গাড়ি আটকে ছিল বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। বিআইডবিস্নউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক আবু আবদুলস্নাহ রনি জানান, রাত ২টার দিকে তীব্র কুয়াশায় ফেরি চালকদের দৃষ্টিসীমা শূন্যে নেমে আসে। এ কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে নৌরুটে ফেরিসহ সব নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়। তবে ৯ ঘণ্টা পর কুয়াশা কেটে গেলে বেলা ১১টা থেকে আবার ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। এদিকে শিবালয় (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটে ঘন কুয়াশায় ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় প্রায় ৭শ' ট্রাক ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। নদীতে কুয়াশার কারণে ফেরি চলাচলে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ সময় লাগায় ঘাট এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এ নৌ-রুটে স্বাভাবিক সময়ে ফেরি চলাচল করতে সময় লাগতো মাত্র ২০ থেকে ৩০ মিনিট। কিন্তু ঘন কুয়াশার কারণে ফেরি চলাচল করতে সময় লাগছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা ঝিনাইদহগামী ট্রাকচালক জাহাঙ্গীর আলম জানান, তিনি গত মঙ্গলবার বিকালে পাটুরিয়া ঘাটে আসেন। কিন্ত পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটে ঘন কুয়াশার কারণে ফেরি চলাচলে সময় বেশি লাগায় পাটুরিয়া ঘাটে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ঘাটে যানজটের কারণে শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষায় থেকেও ফেরির টিকিট পাননি তিনি। ঢাকার মতিঝিল থেকে ছেড়ে আসা ফরিদপুরগামী ট্রাকচালক হাসেম আলী জানান, গত শুক্রবার সকালে পাটুরিয়া ঘাটে আসেন। কিন্তু গতকাল বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষায় থেকেও ফেরির টিকিট পাননি তিনি। এ রকম প্রায় ৭শ' ট্রাক পারাপারের অপেক্ষায় ঘাট এলাকায় পড়ে রয়েছে। আরিচা অফিসের বিআইডবিস্নউটিসির ডিজিএম জিলস্নুর রহমান জানান, এ নৌ-রুটে ঘন কুয়াশার কারণে গত শনিবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ৭ দিন ধরে ফেরি চলাচল বিঘ্ন হওয়ায় প্রতিদিন ঘাট এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।