চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন

ইশতেহারে আওয়ামী লীগের ৩৭ দফা, বিএনপির ৯

প্রকাশ | ২৪ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

হেলাল উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নগর পিতা নির্বাচনে আগামী ২৭ জানুয়ারি ভোট দেবেন ২০ লাখ ভোটার। আর ভোটারদের মন জয়ে গতকাল শনিবার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী ও বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। নৌকার প্রার্থী তার ইশতেহারে ৩৭টি প্রতিশ্রম্নতি দিলেও ধানের শীষের প্রার্থী সীমাবদ্ধ রেখেছেন ৯টিতে। দুই প্রধান প্রার্থীই তাদের ইশতেহারে জলাবদ্ধতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থ সংস্থানের বিষয়ে সুস্পষ্ট রূপরেখা দেননি কেউই। ১৯৯৪ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে ২৮ দফা উন্নয়নের প্রতিশ্রম্নতি নিয়ে ভোটের মাঠে লড়েছিলেন এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। ১১ বছর পর ২০১৫ সালে ৩৫ দফা উন্নয়নের স্বপ্ন দেখিয়ে ভোটের মাঠে লড়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা আ জ ম নাছির উদ্দীন। মহিউদ্দিন-নাছিরের উত্তরসূরি রেজাউল করিম চৌধুরী দিয়েছেন ৩৭ দফা উন্নয়নের প্রতিশ্রম্নতি। গতকাল সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে ইশতেহার ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের রেজাউল করিম চৌধুরী। সদ্য বিদায়ী মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু শ্লোগানে তিনি বঙ্গবন্ধু হলে আসেন। ইশতেহারে জলাবদ্ধতা নিরসনকে প্রাধান্য দিয়ে ১০০ দিনের একটি পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর আনোয়ারুল আজিম আরিফ, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সহসভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালাম, সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান। এর একশ' গজ দূরে নগরীর জামালখানে একটি রেস্টুরেন্টে ৯ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেন বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। ইশতেহারে তিনিও জলাবদ্ধতাকে প্রাধান্য দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান প্রমুখ। রেজাউলের ৩৭ দফা :আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজাউল করিম নগর উন্নয়ন ও পরিচালনায় ৩৭ দফা প্রতিশ্রম্নতি দেন। এর মধ্যে গুরুত্ব দেন জলাবদ্ধতা নিরসনকে। উলেস্নখ করেছেন ১০০ দিনের অগ্রাধিকার কর্মসূচিও। তবে এই অগ্রাধিকার পরিকল্পনায় নেই নগরীর এই মুহূর্তে দৃশ্যমান সবচেয়ে বড় সমস্যা মশার উৎপাত নিরসনের কথা। বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখেও পড়েন রেজাউল। জবাবে তিনি বলেন, 'মশার অত্যাচারের কথাটা সত্য। সবার সঙ্গে পরামর্শ করেই সমস্যার সমাধান করা হবে। এই শহর যেমন মেয়রের, এই শহর একজন সাংবাদিকেরও, একজন ডাক্তারেরও। এটুকু বলতে পারি, কারও সঙ্গে পরামর্শ না করে কোনো সিদ্ধান্ত নেব না।' ৩৭ দফা প্রতিশ্রম্নতিতে আরও আছে যানজট সমস্যা থেকে উত্তরণ, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, নালা-নর্দমা ও খাল-নদী দখলদার উচ্ছেদ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পর্যটন রাজধানী হিসেব চট্টগ্রামকে গড়ে তোলা, হোল্ডিং ট্যাক্স এবং চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে সমন্বয়কের ভূমিকা পালনের প্রতিশ্রম্নতি দেন মেয়রপ্রার্থী রেজাউল করিম। জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পগুলো ঠিকমতো বাস্তবায়নেই সর্বোচ্চ মনোযোগ দেওয়ার কথা বলেন রেজাউল। নগরীর দখল হয়ে যাওয়া খাল-নালা-নদী পুনরুদ্ধার ও পানি নিষ্কাশনের উপযোগী করতে ১০০ দিনের মধ্যে সব ত্রম্নটি ও প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে তা নির্মূলে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করবেন বলেও জানান তিনি। চসিকের ১২০০ কোটি টাকার দেনা নিয়ে রেজাউলকে করা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনি বলেন, 'দেনা ১২০০ কোটি টাকা না, এক হাজার কোটি টাকার মতো। বারবার শুধু এক কথা বলেন, দেনা। আপনাদের জানতে হবে যে সিটি করপোরেশনের একটা ম্যাচিং ফান্ড আছে। অর্থাৎ প্রকল্প গ্রহীতাকে প্রকল্প ব্যয়ের সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ বহন করতে হয়। বাস্তবতা হচ্ছে, সিটি করপোরেশন সেই ম্যাচিং ফান্ড দিতে সক্ষম নয়। এটা নিয়ে এত অস্থির হওয়ার কিছু নেই। সরকার অবগত আছে।' শাহাদাতের ৯ দফা বিএনপি প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন তার ইশতেহারে জলাবদ্ধতামুক্ত চট্টগ্রাম, স্বাস্থ্যকর চট্টগ্রাম, শিক্ষাবান্ধব চট্টগ্রাম, গৃহ কর ও আবাসন সুবিধা, পরিচ্ছন্ন চট্টগ্রাম, নিরাপদ চট্টগ্রাম, সাম্য-সম্প্রীতির চট্টগ্রাম, নান্দনিক পর্যটন নগর এবং তথ্য প্রযুক্তিসমৃদ্ধ চট্টগ্রাম গড়াকে প্রাধান্য দেন। ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম মহানগর একটি পাহাড়, সাগর ও নদী পরিবেষ্টিত শহর। পাহাড় হতে বৃষ্টির পানি বিভিন্ন খাল হয়ে শহরের মধ্য দিয়ে কর্ণফুলী নদীতে পতিত হয়। অবৈধভাবে পাহাড় কাটার কারণে বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি মাটি পড়ে খাল ও নালা বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এছাড়াও বর্জ্য অব্যবস্থাপনার কারণে তা খালে গিয়ে পড়ে। যা নিরসনে বাস্তব উদ্যোগ গ্রহণ করব। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা মুক্ত চট্টগ্রাম গড়তে শহরের মধ্যে প্রবাহিত খাল উদ্ধার করে তা পানি চলাচলের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং খালের উভয় পাশ রক্ষায় বাঁধ নির্মাণ করা হবে। প্রতি বছর বর্ষার আগে শহরের সব খাল, নালা-নর্দমা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কারসহ পানি চলাচলের উপযুক্ত করে শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন করব। তিনি বলেন, নাগরিকদের যাতায়াত সুবিধার জন্য পরিকল্পিত স্মার্ট নগরীর সৌন্দর্য রক্ষা করে আয়বর্ধক প্রকল্প বৃদ্ধিসহ বাস স্টপ নির্মাণ করা হবে। বন্ধ প্রতিষ্ঠানসমূহ চালু ও লাভজনক করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। বায়ু দূষণ রোধে ইলেকট্রিক বাস সার্ভিস চালু করা হবে। নগরীতে অবস্থিত দীঘি ও লেকসমূহকে পর্যটন স্পটে পরিণত করা হবে। এছাড়া নগরবাসীর জন্য নানা সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন বাস্তবভিত্তিক দৃষ্টিনন্দন উন্মুক্ত পার্ক নির্মাণ করা হবে। স্বাস্থ্যকর চট্টগ্রাম গড়ার প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে ডা. শাহাদাত বলেন, করপোরেশন এলাকায় অবহেলিত বিভাগগুলোর মধ্যে অন্যতম স্বাস্থ্য বিভাগ। নগরের জনসংখ্যা গত ৫০ বছরে প্রায় ২০ গুণ বৃদ্ধি পেলেও নতুন কোনো হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় শয্যা সংখ্যার অপ্রতুলতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাজধানী ঢাকায় ১০টি বিশেষায়িত হাসপাতাল থাকলেও চট্টগ্রামে পর্যাপ্ত নেই। চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত বন্দরনগরীর স্বাস্থ্য সেবার পরিধি বৃদ্ধিকল্পে অন্তত আরও ২ হাজার শয্যার পর্যাপ্ত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। সাথে সাথে শিশু হাসপাতাল, মাতৃসদন ও ট্রমা সেন্টারসহ বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হবে।