শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ

প্রথমেই নজর আদর্শ ক্যাম্পাস ও সৃজনশীল শিক্ষায়

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৬ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০
সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবন

দিন শেষে ঠিকই উপলব্ধিতে আসে, জীবনে ফলাফলনির্ভর পুঁথিগত শিক্ষা নয়, মেধাভিত্তিক সৃজনশীল শিক্ষাই কার্যকর। সৃজনশীল শিক্ষায় ভালো ফল করছে- এমন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রাজধানীর সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ অন্যতম। প্রতিষ্ঠানটি সৃজনশীল শিক্ষায় অভিভাবকদের নজর কাড়ে। ২০০২ সালে মাত্র ২০০ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে যাত্রা করে এখন প্রায় ১২,০০০ ছাত্রছাত্রী এখানে পড়ালেখা করছে। বারিধারা যে বস্নকে সাউথ পয়েন্টের নবমতলা এবং তিন তলাবিশিষ্ট দুটি সুরম্য ভবন। বিশাল আঙ্গিনা পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই ওপরে ওঠার চলন্ত সিঁড়ি, বিরাটাকার একাধিক লিফট ও পাওয়ারফুল জেনারেটর। সব মিলিয়ে শিক্ষানুকুল একটি আদর্শ ক্যাম্পাস।

পরীক্ষায় ভালো করার উদ্দেশে নোট, সাজেশন তথা মুখস্থ বিদ্যার স্থান এখানে নেই, বরং সৃজনশীল পদ্ধতিতে মেধাভিত্তিক পাঠদান এখানে করা হয়। সৃজনশীল শিক্ষা বলতে মূল পাঠ্যের বিভিন্ন অনুচ্ছেদের ওপর 'ব্রেইন স্টর্মিং বা চিন্তার উদ্রেক ঘটায়- এমন সব প্রশ্ন তৈরি করে অনুশীলন করানো হয় এখানে। বিশেষ করে প্রতিদিনের শ্রেণিপাঠ শিক্ষক বাস্তবতার নিরিখে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মাধ্যমে বুঝিয়ে পড়ান এবং এর ওপর শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিক প্রশ্ন ও উত্তর তৈরি করে। আক্ষরিক অর্থে এগুলোই সৃজনশীল শিক্ষা।

এখানে পাঠ্যপুস্তকের ডিজিটাল কনটেন্ট ও স্মার্টক্লাস তৈরির কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীনসহ রয়েছে বৃহৎ অডিটরিয়াম, হাইস্পিড ইন্টারনেট সুবিধাসহ আধুনিক 'ই লাইব্রেরি, ল্যাব, এমনকি স্বাস্থ্যসম্মত ক্যান্টিনও। মালিবাগে ছয় বিঘা জমিতে তৈরি করা হচ্ছে স্থায়ী আধুনকি ক্যাম্পাস। উত্তরায়ও নেওয়া হয়েছে সাত বিঘা জমি। বাংলা মাধ্যম, ইংরেজি ভার্সন ও ইংরেজি মাধ্যমের এই প্রতিষ্ঠানটির মালিবাগ, বনানী, বারিধারা, মিরপুর এবং উত্তরায় মোট ছয়টি শাখা রয়েছে। উত্তরায় রয়েছে একাধিক শাখা। বনানী শাখাটি ইংলিশ মিডিয়ামের, এখানে পেস্ন-গ্রম্নপ থেকে এ-লেভেল এবং বাকি শাখাগুলোতে পেস্ন- গ্রম্নপ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। বিশিষ্ট শিল্পপতি প্রকৌশলী এমএ রশিদের পৃষ্ঠপোষকতায় ভিকারুননিসা নূন কলেজের সাবেক প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, বরেণ্য শিক্ষানুরাগী ও উদ্যোক্তা অধ্যক্ষ হামিদা আলী এটি প্রতিষ্ঠা করেন।

সাউথ পয়েন্ট কলেজের বাংলা মাধ্যম ও ভার্সনের পাসের হার ঈর্ষণীয়ই বলতে হয়। প্রতিবছরই শতভাগ পাস করে। সেই সঙ্গে বছরব্যাপী বৃদ্ধি পাচ্ছে জিপিএ ফাইভ বা এ পস্নাসের সংখ্যাও। জিপিএ ফাইভের হার প্রতিবছরই ৮০-৯০ ভাগ। ২০১৯ সালে গুলশান থানায় ৮৫ জন বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭৫ জনই সাউথ পয়েন্টের। এর মধ্যে ট্যালেন্টপুলে পেয়েছে ১৮ জন। ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি এবং উক্ত বছরই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় নবম স্থান লাভ করে। গত বছর প্রকাশিত মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলে 'সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ' বরাবরের মতো ভালোই করেছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, সম্মিলিত মেধা তালিকায় ঢাকা মহানগরে শতভাগ পাসের ভিত্তিতে সাউথ পয়েন্টের স্থান ছিল ষষ্ঠ। গতবারের ফলাফলে প্রতিষ্ঠানটির মালিবাগ, বারিধারা ও মিরপুর শাখার কোথাও ফেল নেই। জন্মলগ্ন থেকেই এই ধারা অব্যাহত রয়েছে। উক্ত বছর পরীক্ষায় সাউথ পয়েন্টের ৪৫২ জন অংশগ্রহণকারীর সবাইই পাস করেছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে সর্বমোট ২৯৬ জন। বাংলা মাধ্যমে মোট ২৭৬ জন অংশগ্রহণকারীর সবাই পাস করেছে এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৫৯ জন। ইংরেজি মাধ্যমের পরীক্ষায় অংশ নেয় ১৭৬ জন, তন্মধ্যে শতভাগ পাসসহ জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৩৭ জন শিক্ষার্থী।

শুধু এসএসসি-এইচএসসিতেই নয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের থানাভিত্তিক গ্রেডিং ফলাফলে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার সর্বশেষ ফলাফলে 'সাউথ পয়েন্ট' গুলশান থানায় শীর্ষ স্থান অর্জন করে। অত্র থানার ১৭টি স্কুল-কলেজের প্রকাশিত ফলাফলের ওপর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে এই অভূতপূর্ব ফলাফল অর্জন করে সাউথ পয়েন্ট। গত বছরের ফলাফলে সবচেয়ে বেশি খুশি প্রতিষ্ঠানটির বারিধারা শাখার শিক্ষার্থীরা। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হতে না পারলেও ফোনে তারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে। এই শাখা থেকে ১৩৪ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১০০ জন এবং অবশিষ্ট সবাই ৪.৫ গ্রেডসহ 'এ' পেয়েছে। অর্থাৎ জিপিএ-৪.৫ এর নিচে কোনো গ্রেড নেই। এই শাখার ইংলিশ ভার্সন ও বিজ্ঞান বিভাগের ফলাফল রীতিমতো ঈর্ষণীয় বলতে হয়। ভার্সনে বিজ্ঞান বিভাগের ৩৬ শিক্ষার্থীর সবাই জিপিএ-৫ পেয়েছে। এই বিভাগের ১০৬ জন অংশগ্রহণকারীর ৯৫ জনই জিপিএ-৫ পায়। মালিবাগ শাখার শিক্ষার্থীরাও ভালো করেছে। তাদের ২৪৮ অংশগ্রহণকারীর ১৭৬ জনই জিপিএ-৫ পেয়েছে এবং ইংলিশ ভার্সনে বিজ্ঞান শাখার ৯৭ অংশগ্রহণকারীর ৮৬ জনই জিপিএ-৫ পেয়েছে।

সাউথ পয়েন্টের ইংরেজি মাধ্যম শাখার শিক্ষার্থীরা শুরু থেকেই 'ও' এবং 'এ' লেভেল পরীক্ষায় কান্ট্রি হায়েস্ট রেজাল্ট অর্জনের জন্য 'আউটস্ট্যান্ডিং ক্যামব্রিজ লার্নার অ্যাওয়ার্ড ও ডেইলি স্টার অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে। সর্বশেষ ২০১৯ 'ও' লেভেল পরীক্ষায়ও সাত বিষয়ের ছয়টিতেই 'এ* ও একটিতে 'এ' গ্রেড এবং 'এ' লেভেল পীক্ষায় পাঁচ বিষয়ের মধ্যে তিনটিতেই এ* ও দুটিতে 'এ' গ্রেড অর্জনসহ অভূতপূর্ব ফলাফল অর্জন করে এর বনানী শাখা। আর এই ফলাফলের জন্য 'ও' এবং 'এ' লেভেলে যথাক্রমে ৭৯ ভাগ ও ৫৭ ভাগ শিক্ষার্থী ডেইলি স্টার অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে।

শুধু একাডেমিক ফলাফলই নয়, জাতীয় বিভিন্ন দিবসে অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতা যেমন- বার্ষিক ক্রীড়া, বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতার বিকাশ ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির প্রয়াস চলে নিরন্তর।

সাউথ পয়েন্ট বনানী শাখা জার্মান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের চঅঝঈঐ (ঝপযড়ড়ষ:চধৎঃহবৎং ভড়ৎ :যব ঋঁঃঁৎব) নামক একটি প্রোগ্রামের আওতায় জার্মান ভাষা শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যার অধীনে শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর বৃত্তি সুবিধায় জার্মানে উচ্চশিক্ষার সুযোগসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় জার্মান সফর করছে তাদের অর্থায়নেই। কেবল জার্মানিতেই নয়, ২০১৩তে সাউথ পয়েন্ট বনানীর একদল শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রের নাসা সফর করে। সাউথ পয়েন্টের অন্যান্য শাখার শিক্ষার্থীরাও উপযুক্ত একাডেমিক শিক্ষা তথা প্রত্যাশিত ফলাফলের পাশাপাশি সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে অর্জন করছে অভূতপূর্ব সাফল্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে