সিনহার ‘দুনীির্ত’ তদন্ত নিয়ে প্রশ্নে বিব্রত দুদক চেয়ারম্যান

প্রকাশ | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
ইকবাল মাহমুদ
সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে দুনীির্তর অভিযোগ তদন্ত নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বিব্রত হওয়ার কথা জানালেন দুনীির্ত দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। পদত্যাগী বিচারপতি সিনহার লেখা বই নিয়ে নতুন করে আলোচনার মধ্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের এক কথার পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার সাংবাদিকরা তদন্তের বিষয়ে জানতে চান দুদক চেয়ারম্যানের কাছে। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর ক্ষমতাসীনদের রোষের মুখে থাকা বিচারপতি সিনহা গত অক্টোবরে ছুটি নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমানোর পর সেখান থেকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। এরপর তার বিরুদ্ধে নানা দুনীির্তর অভিযোগ ওঠে; তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, এমন একটি দুনীির্তর অনুসন্ধানে দুদকও নামে। সম্প্রতি বিচারপতি সিনহা তার লেখা বইয়ে দাবি করেন, তাকে জোর করে পদত্যাগ করিয়ে নিবার্সনে পাঠানো হয়েছে। এরপর তাকে নিয়ে নতুন করে আলোচনার মধ্যে আইনমন্ত্রী রোববার বলেন, বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে দুনীির্তর অভিযোগ খতিয়ে দেখছে দুদক। সাংবাদিকরা দুদক চেয়ারম্যানের কাছে ওই তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাইলে ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘শোনেন, মাননীয় মন্ত্রী উনার ইচ্ছা যা, বলতেই পারেন। মাননীয় মন্ত্রীর কথায় তো মামলা হবে না, অনুসন্ধানও হবে না। সরকার নিজেরাই বলে স্বাধীন কমিশন। সো মাননীয় মন্ত্রী যা বলেছেন, উনারটা উনাকেই জিজ্ঞাস করেন, আমাকে না।’ তিনি বলেন, ‘মন্ত্রীর কথায় কোনো প্রভাব দুদকে পড়বে না। এটা আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি। যথাযথ এভিডেন্স ছাড়া কারও বিরুদ্ধে অনুসন্ধান বা তদন্ত হবে না।’ ফারমাসর্ ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে দুই কথিত ব্যবসায়ী অবৈধভাবে চার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। সেই টাকা অন্য আরেক ব্যবসায়ী হয়ে এস কে সিনহার বাড়ি বিক্রি বাবদ তার ব্যাংক হিসাবে ঢুকেছে বলে একটি অভিযোগ দুদক তদন্ত করছে বলে খবর প্রকাশ হয়েছে; সেই প্রসঙ্গেই বলছিলেন আইনমন্ত্রী। দুদক চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেন, ‘একবার আপনারা লিখেছেন, চার কোটি টাকা ইয়ে হয়েছে। সেটা দুইজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে একটা অনুসন্ধান। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ঋণ প্রদান এবং ঋণের সেই টাকা অন্য কোথায়ও যাওয়া নিয়ে অনুসন্ধান চলছে। ‘সেই টাকার ব্যাপারে পত্রিকায় আপনারা একটা ইঙ্গিত দিয়েছেন। আমরা কিন্তু কখনো বলিনি। অনুসন্ধান শেষ হলো না, দুদক থেকে এমন একটা কথা বেরিয়ে যাবে, দিস ইজ ভেরি আনফরচুনেট।’ সেই চার কোটি টাকার অনুসন্ধান দ্রæত শেষ করতে সংশ্লিষ্ট কমর্কতাের্ক নিদের্শ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। এস কে সিনহার বিরুদ্ধে ১১টি অভিযোগ দুদকে এসেছে কিনাÑ জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান পাল্টা সাংবাদিকদের বলেন, ‘কই, আপনাদের কাছে ১১টি অভিযোগ আছে নাকি? থাকলে দেন।’ বিচারপতি সিনহা ছুটি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে দুনীির্ত, অথর্পাচার, আথির্ক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনসহ সুনিদির্ষ্ট ১১টি অভিযোগের কথা সুপ্রিম কোটের্র পক্ষ থেকে জানানো হয়। বলা হয়, ওইসব অভিযোগের কারণে আপিল বিভাগের অন্য বিচারকরা আর প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বসে মামলা নিষ্পত্তিতে রাজি নন। সাবেক ওই প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে দুদকে কোনো অনুসন্ধান চলছে কিনা- জানতে চাইলে ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘সেই প্রশ্নের জবাব এখন আমি দেব না। আপনাদের ওয়েট করতে হবে। আপনারা এভাবে একটা প্রশ্ন করলে আমার জন্য অসুবিধা হয়। কারণ আমাকে দেখতে হবে, বুঝতে হবে, জানতে হবে।’ তিনি বারবার এড়িয়ে যাওয়ায় সাংবাদিকরা সরাসরি উত্তর পেতে আবারও প্রশ্ন করেন। সাবেক আমলা ইকবাল মাহমুদ তখন বলেন, ‘আপনারা এমন একজন ব্যক্তির ব্যাপারে বলছেন, অনেক বড় ও বৃহৎ। আমাকে বিব্রত না করাটাই সবার জন্য ভালো।’