কুমিের্টালা জেনারেল হাসপাতাল

৫ বছরেও চালু হয়নি পূণার্ঙ্গ চিকিৎসাসেবা

প্রকাশ | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

জাহিদ হাসান
কুমিের্টালা জেনারেল হাসপাতাল
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সহায়ক জনবল সংকটের কারণে প্রতিষ্ঠার পঁাচ বছর পরও রাজধানীর কুমিের্টালা জেনারেল হাসপাতালে পূণার্ঙ্গ চিকিৎসা কাযর্ক্রম চালু না হওয়ায় রোগীরা সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন। পাশাপাশি এই প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক কাজকমর্ও চলছে জোড়াতালি দিয়ে। সরেজমিন খেঁাজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর উত্তর অঞ্চলে বসবাসরত জনসাধারণের উন্নত চিকিৎসাসেবা দিতে ২০১২ সালের মে মাসে ঢাকা সেনানিবাসের এমইএস এলাকায় ১২তলা ভবনবিশিষ্ট এই হাসপাতালটি নিমার্ণ করা হয়। তবে প্রতিষ্ঠানটির অবকাঠামোগত সুবিধা থাকলেও রোগীদের চাহিদা অনুপাতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সেবা-সহায়ক জনবলের ব্যাপক সংকট রয়েছে। কমর্রত চিকিৎসক ও নাসর্রা বলছেন, মেডিকেল কলেজের অধিভুক্ত না হওয়ায় অধ্যাপক, সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপকের কোনো স্থায়ী পদ নেই। এ কারণে চিকিৎসাসেবার কলেবর বাড়াতে ২০১৫ সালে পাশ্বর্বতীর্ আমর্-ফোসের্স মেডিকেল কলেজের সঙ্গে অ্যাফিলিয়েটেডভুক্ত করে একটি এমওইউ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সংযুক্ত চিকিৎসকদের জন্য কক্ষও বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু চুক্তিবদ্ধ এসব সহযোগী, সহকারী ও অধ্যাপক পযাের্য়র চিকিৎসকরা হাসপাতালটিতে আসেন না। কমর্কতার্-কমর্চারীরা আরও জানান, হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রায় ছয় বছর হতে চললেও নিউরোমেডিসিন বিভাগ খোলা হয়নি। কিডনি রোগের চিকিৎসা দিতে ৩৩টি ডায়ালাইসিস মেশিন-সংবলিত ইউনিট থাকলেও চালু হয়নি ইনডোর বা আউটডোর কাযর্ক্রম। এমনকি প্রতিদিন ৬৬ জন রোগীকে ডায়ালাইসিস দেয়া হলেও ইউনিটটিতে নেফ্রোলজিস্ট বা কিডনি চিকিৎসক মাত্র একজন। আবার গ্যাস্ট্রোএন্টারোলোজি ইউনিটে বহিবির্ভাগ চিকিৎসা কাযর্ক্রম চালু না করেই তিনজন চিকিৎসক দিয়ে ইনডোর বিভাগ খোলা হয়েছে। ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে ইনডোর-আউটডোরসহ একজন মাত্র মেডিকেল অফিসার কাজ করছেন। এতে করে মানসম্মত সেবা দেয়াও সম্ভব হচ্ছে না। তবে হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিনুল ইসলামের দাবি, প্রয়োজন-সাপেক্ষে আমির্ মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক রোগী দেখছেন। এ ছাড়া ৫০০ শয্যার এই হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে ৭০০ জনের মতো রোগী ভতির্ থাকছে ও বহিবির্ভাগে দিনে চার হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। আটটি ওটিরুমে প্রতিদিন ৬-৮টি পযর্ন্ত ছোট-বড় অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে। গাইনি বিভাগে ২৪ ঘণ্টা অপারেশনের ব্যবস্থা রয়েছে। এমনকি রোগীর চাপে অনেককে আন্তঃবিভাগের মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এদিকে, জনবল সংকটের ব্যাপারে শরিফুল ইসলাম সবুজ নামে হাসপাতালের এক কমর্চারী অভিযোগ করেন, তিনি হাসপাতালের অফিস সহকারী পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হলেও রেকডর্ কিপার, পরিচালকের পিএ এবং ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের কাজ করতে হচ্ছে। একইভাবে ইন্সট্রুমেন্ট টেকনিশিয়ান সুমন সূত্রধর বলেন, তিনি একাধারে ক্যাশ, স্টোর বিভাগ এবং পেয়িং বেড পযের্বক্ষণসহ তিনটি বিভাগের দায়িত্ব পালন করছেন। হাসপাতাল ভবন ঘুরে দেখা যায়, চিকিৎসক ও জনবলের অভাবে সুবিশাল হলরুম-সদৃশ অষ্টম তলার একদিকে ৪০ জন আনসার সদস্য থাকছেন। আরেকদিকে ধুলাধূসরিত পরিবেশে রোগীদের বেড, কমোড ও অন্যান্য সরঞ্জাম স্তূপ করে রাখা হয়েছে। নবম তলায় পশ্চিম পাশে ৫৪টি এবং পূবর্ পাশের ৩২টি কেবিন থাকলেও সেখানে কোনো আয়া বা ক্লিনার নিয়োগ দেয়া হয়নি। দশম তলার এক ইউনিটে হাসাপাতালের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও অন্য পাশ রান্নাঘর হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৬২২ এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ৯৬৬ জন জনবল নিয়োগের অনুমোদন দেয়া আছে। অথচ ২০০৯ সালের ২৩ অক্টোর থেকে হাসপাতাল উপ-পরিচালকের একটি পদ শূন্য পড়ে আছে। একইভাবে স্টোর অফিসার, ডাইটেশিয়ান, গ্র্যাজুয়েট ফামাির্সস্ট, উপ-সেবা তত্ত¡াবধায়ক, প্রশাসনিক কমর্কতার্, হিসাব ও পরিসংখ্যান কমর্কতার্, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, স্টুয়াডর্, উচ্চমান সহকারী, স্টেনো-টাইপিস্ট, সিকিউরিটি সুপারভাইজার, স্টোর কিপার, কাডির্গ্রাফার, অফিস সহকারী কাম টাইপিস্ট, ক্যাশিয়ার, হাউস কিপার, ইন্সট্রুমেন্ট কেয়ারটেকার, স্টেরিলাইজার কাম অপারেটর, ইমাম, টিকিট ক্লাকর্, রেন্ট কালেক্টর, ক্যাশ সরকার, অপারেটর স্টেরিলাইজিং, ওটি বয় এবং ডোমের পদসমূহে কোনো নিয়োগ দেয়া হয়নি। এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিনুল ইসলাম যায়যায়দিনকে বলেন, ‘এখানে ডাক্তার থেকে সুইপার পযর্ন্ত ঘাটতি রয়েছে। তবে জনবল কম থাকার পরও সপ্তাহে ৩৬টির বেশি অস্ত্রোপচার হচ্ছে। এতগুলো অস্ত্রোপচারের জন্য মাত্র চারজন এনেসথেসিস্ট কাজ করছেন। এ ছাড়া বানর্ ইউনিটেও এনেসথেসিস্টের সংকটের কারণে ডাক্তারদের স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে। ৩৪৪ জনবলের একটি চাহিদাপত্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া আছে। মন্ত্রণালয় থেকে পরিদশের্ন আসলে অথর্ ছাড়ও হবে বলে আমরা আশা করছি। তখন আটতলার ওয়াডর্ চালু ও দশমতলায় একটি পূণার্ঙ্গ অডিটোরিয়াম তৈরি হবে।’