শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
একুশ আমার অহংকার

চার শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার

গাজীপুর
আবুল হোসেন
  ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০
কালীগঞ্জে ভূমি অফিসের সামনে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার

গাজীপুরের চার শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো কোনোটিতে অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার নির্মাণ করে দিবসটি পালন করা হয়।

জেলা প্রাথমিক ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গাজীপুরে ৭৭৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তিন শতাধিক এনজিও পরিচালিত প্রাথমিক শিক্ষালয় এবং দুই সহস্রাধিক কিন্ডারগার্টেন রয়েছে। এছাড়া কলেজ ৪৩টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৫২ এবং মাদ্রাসা রয়েছে ১৭৮টি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪০২টিতে কোনো শহীদ মিনার নেই। তবে বাস্তবে এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোফাজ্জল হোসেন জানান, 'গাজীপুর জেলা ও সিটি করপোরেশন এলাকার ৭৭৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১০২টিতেই শহীদ মিনার নেই। এছাড়া মাদ্রাসা ও কিন্ডারগার্টেনগুলোর বেশির ভাগই নেই কোনো শহীদ মিনার।'

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানা জানান, 'জেলার ৪৩টি কলেজের ১১টিতে, ৩৫২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০৬টিতে এবং ১৭৮টি মাদ্রাসার মধ্যে ১৬৯টিতেই কোনো শহীদ মিনার নেই।'

তিনি আরও জানান, 'এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে কিংবা অন্যান্য বিশেষ দিনগুলোতে ফুল দিতে বড়দের সঙ্গে শিশু শিক্ষার্থীদেরও দূরদূরান্তে যেতে হয়। এতে শিশুদের অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়।'

শহরের জয়দেবপুর দারুছ্‌ ছালাম ফাজিল মাদ্রাসাটি ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হলেও সেখানে কোনো শহীদ মিনার নেই। শহীদ মিনার নির্মাণ প্রসঙ্গে মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মো. কেফায়েত উলস্নাহ জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানের মাঠে ঈদের জামাত হয়, মাঠে জায়গাও অপ্রতুল। এখানে মসজিদ ও এতিমখানাও রয়েছে। পর্যাপ্ত জায়গা ও ফান্ডের অভাবে মাদ্রাসায় শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে নিজস্বভাবে দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করা হয়। ২১ ফেব্রম্নয়ারির দিন শিক্ষার্থীরা প্রভাতফেরি নিয়ে জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যায়। তবে এবার করোনা মহামারি থাকায় সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান করা হয়েছে।

গাজীপুর সিটির ছোট দেওড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে বসবাসরত মমজাত উদ্দিন জানান, এ স্কুলে শহীদ মিনার নেই। স্কুলে শহীদ মিনার থাকলে ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা ভাষা শহীদদের প্রতি সহজে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারত এবং এ নিয়ে আলোচনা হলে তারা '৫২-এর ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাসও জানতে পারত।

ওই স্কুলের এক শিক্ষার্থী জানায়, তাদের স্কুলে কোনো শহীদ মিনার নেই। তাই তারা ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে অন্য প্রতিষ্ঠানের শহীদ মিনারে যায়। যদি তাদের স্কুলে একটি শহীদ মিনার থাকত তাহলে খুব ভালো হতো, তাদের কষ্ট হতো না।

ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক জেসমিন আক্তার জানান, তাদের স্কুলে কোনো শহীদ মিনার নেই। মাতৃভাষা দিবসে তারা পাশের অগ্রণী উচ্চবিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের স্মরণ করেন। স্কুলের জন্য শহীদ মিনার নির্মাণের কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জেরিনা ইয়াসমিন জানান, তাদের স্কুলেও শহীদ মিনার ছিল না। নিজস্ব উদ্যোগে স্কুল কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মো. আফছার উদ্দিন গত বছর একটি শহীদ মিনার তৈরি করে দিয়েছেন। আগে প্রতি বছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে তারা অস্থায়ী শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহীদ মিনার না থাকার কারণ হিসেবে অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অর্থ সংকটকেই চিহ্নিত করেছেন।

এ বিষয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রেবেকা সুলতানা ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মোফাজ্জল হোসেন জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণে কোনো সরকারি বরাদ্দ নেই। তবে স্থানীয়ভাবে প্রতিষ্ঠানগুলোর কমিটি কিংবা জেলা পরিষদের উদ্যোগে কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে।

গাজীপুর জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান এসএম মোকছেদ আলম জানান, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান পালন এবং যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো শহীদ মিনার নেই সেইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য জেলা পরিষদ থেকে একটা বরাদ্দ দেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপনের ব্যবস্থা তথা উদ্যোগ নেওয়া হবে।

গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম বলেন, নিজস্ব বাজেট থেকে, স্থানীয়ভাবে এবং টিআর থেকে বা সংসদ সদস্যদের বরাদ্দ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে