একুশ আমার অহংকার

শতভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই রয়েছে শহীদ মিনার

দিনাজপুর

প্রকাশ | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০

মমিনুল ইসলাম
হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার -যাযাদি
দিনাজপুর জেলায় রয়েছে অসংখ্য স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রায় প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং জেলার বিভিন্ন জায়গায় মাতৃভাষার জন্য জীবন উৎসর্গকারী শহীদদের স্মরণে নির্মাণ করা হয়েছে শহীদ মিনার। এসব শহীদ মিনারে প্রতিবছর ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন জেলার কোমলমতি শিশু-কিশোর, তরুণ ও দেশপ্রেমিক নাগরিকরা। দিনাজপুর সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. সাইফুজজামান জানান, দিনাজপুর জেলার মোট ১ হাজার ৮৬৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে শতভাগ শহীদ মিনার রয়েছে। তিনি বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে পূর্ব থেকে প্রতিটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার, সততা স্টোর এবং মুক্তিযুদ্ধ বুক কর্নারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দিনাজপুর জেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল বারী জানান, দিনাজপুর জেলায় নিম্নমাধ্যামিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, কারিগরি, মাদ্রাসা- সব মিলে ১ হাজার ৯০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় প্রত্যেকটিতে শহীদ মিনার রয়েছে। দিনাজপুর শহরে প্রথম শহীদ মিনার নির্মিত হয় ১৯৫৬ সালে তৎকালীন সুরেন্দ্রনাথ কলেজ (বর্তমান দিনাজপুর মহিলা কলেজ) চত্বরে। পরবর্তীতে ১৯৬৩ সালে দিনাজপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজে (বর্তমানে দিনাজপুর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ) দ্বিতীয় শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। শহরের বালুবাড়ীতে তৃতীয় শহীদ মিনার নির্মিত হয় ১৯৭৩ সালের জানুয়ারিতে। ১৯৯৯ সালের ফেব্রম্নয়ারি মাসে গোর-এ শহীদ বড় ময়দানের উত্তর-পূর্বকোণে ৫০ শতক জায়গা নির্ধারণ করে ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে দিনাজপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ করে ২১ ফেব্রম্নয়ারির থেকে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করার ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রম্নয়ারির বর্বরতার কথা স্মরণ করে প্রতি বছর ২১ ফেব্রম্নয়ারি রাত ১২টার পর দিনাজপুরবাসী এই শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা আন্দোলনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী রাসেল কবির জানান, একুশে ফেব্রম্নয়ারি এখন সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। যা আমাদের জন্য গৌরবের বিষয়। শহীদ মিনার আমাদের শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে দেয়। দেশের কাজে আমাদের অনুপ্রাণিত করে। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনো শহীদ মিনার নির্মিত হয়নি সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দ্রম্নত শহীদ মিনার নির্মাণ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান তিনি। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী টগর সরকার জানান, ২১ ফেব্রম্নয়ারি আন্তর্জাতিকভাবে মার্তৃভাষা হিসেবে পালিত হলেও আমাদের দেশে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু নেই। দেশের অনেক উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কিছু সরকারি-বেসরকারি অফিসে ইংরেজি ভাষার আধিক্য রয়েছে। বাংলা ভাষাকে সর্বত্র ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়ার কথা বলেন তিনি। দিনাজপুর সরকারি কলেজের প্রাণী বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আহসান হাবিব জানান, ফেব্রম্নয়ারি মাস এলেই আমাদের মনে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রম্নয়ারির ভাষা আন্দোলন ও শহীদদের কথা স্মরণে আসে। সেই সঙ্গে এক ধরনের আবেগ ও ভালোবাসা কাজ করে। ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই আসে আমাদের মহান স্বাধীনতা। শহরের নিউটাউন এলাকার তরুণ ফরহাদ হোসেন জানান, ভাষা আন্দোলনের পর ইতোমধ্যে পেরিয়ে গেছে ৬৯ বছর। ভাষা আন্দোলনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ইউনেস্কো ২১ ফেব্রম্নয়ারিকে আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এখন দিনটি আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে। যা আমাদের দেশের জন্য গৌরবের বিষয়।