শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ধরা পড়লেন সেই 'মহাপ্রতারক'

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০
জাহিদুর রহমান ইকবাল

মুজিববর্ষ উদ্‌যাপনের সুযোগ নিয়ে মহাপ্রতারণার ফাঁদ পেতেছিলেন কথিত বনবন্ধু জাহিদুর রহমান ইকবাল। প্রতারণার ঢালস্বরূপ নিজেই 'বনবন্ধু' উপাধি তৈরি করেছেন। মুজিবর্ষে গাছ লাগানোর কথা বলে অভিনব পন্থায় বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। বুধবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদসম্মেলনে এসব তথ্য জানান তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হারুণ-অর-রশীদ।

তার দেওয়া তথ্যমতে, মুজিববর্ষের লোগো ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী ব্যবহার করে প্রায় ৪০ হাজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কাছে অনুদান চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। প্রতারক জাহিদুর রহমান ইকবাল নিজের ব্যবহৃত গাড়ির চারপাশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাণী সংবলিত ছবি টাঙিয়ে রাখতেন।

এর বাইরে নিজেকে একাধিক ভুয়া প্রতিষ্ঠানের প্রধান পরিচয় দিয়ে দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে প্রতারণা চালিয়ে আসছিলেন তিনি। ব্যাংক লোন পাইয়ে দেওয়া, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজের অনুমোদনসহ নানা ধরনের কনসালটেন্সির নামে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।

সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারের শাহআলী ভবনে নিজের কথিত অফিস থেকে জাহিদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। এরপর বেরিয়ে আসতে থাকে তার অভিনব পন্থায় নানা প্রতারণার তথ্য।

গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে ২৭০টি সিল, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ডকুমেন্টস প্রসেসিং ফাইল ১৮৪টি, মুজিববর্ষের লোগো ব্যবহার করা ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী সংবলিত চিঠি ৫০০টি, সিপিইউ দু'টি, প্রিন্টার দু'টি, স্ক্যানার একটি, মনিটর দু'টি, ল্যাপটপ একটি, মোবাইল দু'টি ও একটি টয়োটা করোলা গাড়ি জব্দ করা হয়েছে।

ডিসি হারুণ-অর-রশীদ বলেন, গত ৩০ বছর ধরে কারওয়ান বাজার এলাকায় গ্রেপ্তার জাহিদুর রহমান ইকবাল ওরফে বনবন্ধু জাহিদুর রহমান ইকবাল প্রতারণা করে আসছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু

শেখ মুজিবুর রহমানের মুজিববর্ষের লোগো ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী ব্যবহার করে চলছিল তার বর্তমানে মূল প্রতারণা। তিনি প্রায় ৪০ হাজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কাছে চিঠি দিয়েছে।ে এর মাধ্যমে তিনি ওই সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অবৈধভাবে টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন। প্রতারক বনবন্ধু জাহিদুর মুজিববর্ষে বিভিন্ন জায়গায় গাছ লাগাবে বলেও অনেকের কাছ থেকে টাকা নিতেন।

জাহিদুর রহমানের নানা প্রতারণার বর্ণনায় ডিসি বলেন, জাহিদুর রহমান প্রতারণামূলকভাবে অর্থ আত্মসাৎ করতেন। অবৈধভাবে সিল তৈরি ও সংরক্ষণ করে প্রতারণার উদ্দেশ্যে মুজিববর্ষের লোগো ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তির কাছে প্রায় ৪০ হাজার চিঠি পাঠিয়েছেন।

কনসালটেন্ট গ্রম্নপ লিমিটেড, এসএমই কনসালটেন্ট লিমিটেড, ইইএফ কনসালটেন্ট লিমিটেড নামে তিনটি অবৈধ কোম্পানির চেয়ারম্যান এবং সিইও হিসেবে নিজেকে দাবি করেন। কিন্তু তিনি কোম্পানিগুলোর কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন লোন পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে কনসালটেন্সির নামে অর্থ আত্মসাৎ করতেন এ প্রতারক।

পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, তার বিরুদ্ধে আমরা হাজার হাজার অভিযোগ পেয়েছি। আমরা যখন তার কাছে গেলাম তিনি তখন বলেন, আপনাদের যে পুলিশ ব্যাংক সেটি তো আমার কনসালটেন্সি ফার্ম করে দিয়েছে, তাও নাকি বিনা পয়সায় করে দিয়েছে। তিনি অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের সিইও ও চেয়ারম্যান পরিচয় দিলেও তার পড়াশোনার কোনো সার্টিফিকেট নেই।

আমরা তাকে আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ডের আবেদন করব। রিমান্ডে নিলে বোঝা যাবে তিনি কত লোকের কাছ থেকে কী পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

কী পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে ডিসি বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত পাঁচশ লোকের মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে ধারণা করছি। তবে রিমান্ডে না নেওয়া পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না তিনি কত টাকা হাতিয়েছেন। শুনেছি ২০০৭ সালে একবার সতন্ত্র পদে মেয়র নির্বাচন করে জামানত হারিয়েছিলেন। এছাড়া অনেক ভুক্তভোগী আমাদের কাছে আসছেন। তার সঙ্গে আর কেউ জড়িত আছে কি-না সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

প্রতারক 'বনবন্ধু' জাহিদুর রহমান ইকবালের অবৈধ প্রতিষ্ঠান কনসালটেন্ট গ্রম্নপ লিমিটেড, এসএমই কনসালটেন্ট লিমিটেড ও ইইএফ কনসালটেন্ট লিমিটেডের ব্যানারে ফিনান্সিয়াল কনসালটেন্স, কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন, সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন, ট্রাস্ট রেজিস্ট্রেশন, ফাউন্ডেশন রেজিস্ট্রেশন, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ডকুমেন্টস প্রসেসিং, ব্যাংক বিমা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডকুমেন্টস প্রসেসেসিং, টিন ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন, ফায়ার লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স ডকুমেন্টস প্রসেসিং ইত্যাদির নামে অসংখ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে