আনোয়ারায় জাপানি প্রযুক্তিতে অর্গানিক শুঁটকি উৎপাদন

প্রকাশ | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০

জাহাঙ্গীর আলম, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম)
স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে শুঁটকি উৎপাদন -যাযাদি
চট্টগ্রামের আনোয়ারায় জাপানি প্রযুক্তিতে গ্রিনহাউস ঘরে সূর্যের আলোকে ধরে রেখে টেকনিক্যাল ফিস ড্রায়ারে শুঁটকি উৎপাদন শুরু করেছেন তিন যুবক। ইতোমধ্যে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতের সম্পূর্ণ বিষমুক্ত নতুন প্রকল্প 'জেটিএস এগ্রো ইন্ডাস্ট্রি' বেশ জনপ্রিয়তাও লাভ করেছে। এখানে কোনো লবণ, কীটনাশক (ডিডিটি) ও ধুলাবালি- এমনকি মশা-মাছিও ঢোকার কোনো সুযোগ নেই। উপজেলার বারশত ইউনিয়নের কালীবাড়ি এলাকায় মো. তানভীর, আমজাদ হোসেন ও জয়নাল আবেদীন উদীয়মান এই প্রকল্পের কাজ শুরু করেন। জাপানি প্রযুক্তিতে শুঁটকি শুকানোর এই ধারণা দেশে একেবারেই নতুন বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, এটি চট্টগ্রামের প্রথম ড্রাই প্রকল্প। আনোয়ারা উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, উপকূলীয় রায়পুর, বারশত ও জুঁইদন্ডী ইউনিয়নে জেলেরা বছরের শেষ নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত শুঁটকি উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করেন। বঙ্গোপসাগর থেকে বছরে প্রায় ছয় লাখ মেট্রিক টন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আহরণ করা হয়। এর মধ্য থেকে ২০-২২ শতাংশ মাছ উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় শুঁটকি হিসেবে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। ১৫-২০ প্রজাতির মাছের শুঁটকি তৈরি করা হয়। এসব মাছের মধ্যে লইট্যা, ছুরি মাছ, পোয়া মাছ, ইচা মাছের শুঁটকি অন্যতম। মৎস্য বিভাগ সূত্র আরও জানায়, অনিরাপদ ও বিভিন্ন বিষাক্ত কেমিক্যাল মিশিয়ে শুঁটকি তৈরির ফলে দিন দিন মানুষের ভীতি বাড়ছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যান্সারের জন্য হটস্পট হিসেবে দক্ষিণ চট্টগ্রামকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর অন্যতম কারণ বিষাক্ত শুঁটকি। বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদনে বারশত কালীবাড়ি এলাকায় তারা স্থাপন করেন 'টেকনিক্যাল ফিস ড্রায়ার'। গত ৩ ফেব্রম্নয়ারি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. রশিদুল হক এটি উদ্বোধন করেন। এই টেকনিক্যাল ফিস ড্রায়ারে একবারে প্রায় ৮০০ কেজি শুঁটকির ধারণক্ষমতা রয়েছে। এই ফিস ড্রায়ারে কাঁচা মাছ একবার ঢোকালে ১০ দিনের মধ্যেই পরিপূর্ণ শুঁটকি হিসেবে বের করা হয়। উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পড়ালেখার পাশাপাশি ব্যতিক্রমী কিছু করার চিন্তা ছিল তাদের মাথায়। উপকূলীয় এলাকায় জন্ম-বেড়ে ওঠার সুবাদে শুঁটকির বিষয়টি মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। টেকনিক্যাল ফিস ড্রায়ার প্রকল্পের উদ্যোক্তা তিন যুবকের বাড়ি আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর গ্রামে। পড়ালেখা ও পারিবারিক সুবাদে থাকেন চট্টগ্রাম শহরে। তিনজনই বিভিন্ন বিষয়ে অনার্সে পড়ালেখা করছেন। শুঁটকিতে ক্ষতিকর ডিডিটি ব্যবহারের কারণে কীভাবে তা এড়িয়ে স্বাস্থ্যসম্মত শুঁটকি তৈরি করা যায়, তা নিয়ে চিন্তা শুরু করেন তারা। করোনা শুরুর দিকে ইউটিউব ও বিভিন্ন জার্নাল ঘেঁটে তারা টেকনিক্যাল ফিস ড্রায়ার প্রযুক্তিতে অর্গানক শুঁটকির ধারণা নেন। উদ্যোক্তা তানভীর আহমদ জানান, পড়ালেখা শেষে নিজেদের স্বাবলম্বী ও আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তুলতে তিন বন্ধু মিলে এই শুঁটকি প্রকল্প গড়ে তুলেছেন। স্বাস্থ্যসম্মত হওয়ায় ইতোমধ্যে এর সুনাম লোকমুখে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতি কেজি লইট্যা শুঁটকি ৮০০, ছুরি শুঁটকি এক হাজার ৮০০ টাকা করে বিক্রি করছেন। এতে লাভবানও হয়েছেন। প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে হওয়ায় খরচও খুব কম। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. রাশিদুল হক জানান, আনোয়ারা উপকূলের শুঁটকি বিষমুক্ত হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ জনপ্রিয়। তিন যুবকের নতুন এই অর্গান পদ্ধতির শুঁটকি প্রকল্পে উপজেলা মৎস্য অফিস সার্বিক সহযোগিতা দিচ্ছে। বিষ, লবণ ও ধুলাবালিমুক্ত উৎপাদনের কারণে এটি যেমন স্বাস্থ্যসম্মত; তেমনি সুস্বাদেরও।