শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
রক্তে কেনা আমার স্বাধীনতা

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক ভাস্কর্য ও স্মৃতিফলক

মাগুরার মহম্মদপুর
এস আর এ হান্নান
  ০১ মার্চ ২০২১, ০০:০০
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে উজ্জীবিত রাখতে কলেজ রোডে নির্মিত ভাস্কর্য

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে মাগুরার মহম্মদপুরের অকুতোভয় বীরমুক্তিযোদ্ধাদের রয়েছে অসামান্য অবদান। রক্তাক্ত রণাঙ্গনে যুদ্ধ করতে গিয়ে অনেকে শহীদ হয়েছেন। এসব বীর সৈনিকদের অবদান ও আত্মত্যাগের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে উজ্জীবিত রাখতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভাস্কর্য, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি চত্বর ও স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে মার্কেট, পাঠাগার, স্কুল ও সড়কের নামকরণ করা হয়েছে।

একাত্তরের রণাঙ্গনে মাগুরার মহম্মদপুরে শহীদ হয়েছিলেন ৬ মুক্তিপাগল বাঙালি। তারা হলেন- শহীদ আবীর হোসেন, শহীদ নুরুল ইসলাম, শহীদ জহুরুল ইসলাম মুকুল, শহীদ আহম্মদ হোসেন, শহীদ মহম্মদ হোসেন এবং শহীদ মহম্মদ আলী। মহম্মদপুরকে শত্রম্নমুক্ত করতে গিয়ে শহীদ হয়েছিলেন তারা।

শহীদ আবীর হোসেন : ১৯৭১ সালের ১৬ অক্টোবর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন সাহসী তরুণ আবীর হোসেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে দেশমাতৃকার ডাকে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তিনি। এদিন মহম্মদপুর সদর থেকে ১৫-১৬ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত নহাটার জয়ারামপুর নামক স্থানে বিকাল থেকে শুরু হয় পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধ। হানাদার বাহিনীর ছোড়া গুলিতে রণক্ষেত্রে শহীদ হন আবীর হোসেন। তিনি উপজেলার কাশিপুর গ্রামের মুনছুর মোল্যার ছেলে। শহীদের স্মরণে নিজ গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উপজেলা সদরে একটি সাধারণ পাঠাগারের নামকরণ করা হয়েছে।

শহীদ নুরুল ইসলাম : নুরুল ইসলামের বাড়ি মহম্মদপুরের নহাটা গ্রামে। ১৯৭১ সালের ২৬ জুলাই নহাটায় সংঘটিত সম্মুখ যুদ্ধে হানাদার বাহিনীর ছোড়া গুলিতে নুরুল ইসলাম শহীদ হন। যে স্থানে তিনি শহীদ হয়েছিলেন সেই স্থনে তার স্মরণে একটি স্মৃতি ফলক নির্মাণ করা হয়েছে।

শহীদ জহুরুল ইসলাম মুকুল :শহীদ মুকুলের বাড়ি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলায়। অকুতোভয় ওই সৈনিক মহম্মদপুরের বিনোদপুর যুদ্ধে শাহাদৎবরণ করেছিলেন। তিনি যে স্থনে শহীদ হয়েছিলেন তার স্মরণে সেখানে একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে।

শহীদ আহম্মদ ও মহম্মদ হোসেন : আহম্মদ ও মহম্মদ দুই সহোদর। উপজেলার নাগড়িপাড়া গ্রামে তাদের বাড়ি। ১৯৭১ সালের ১৯ নভেম্বর মহম্মদপুর সদরে যে যুদ্ধ হয়েছিল তা- মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে 'মহম্মদপুর যুদ্ধ' নামে খ্যাত। পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধদের তুমুল যুদ্ধ হয়। ওই যুদ্ধে দু'সহোদর আহম্মদ ও মহম্মদ সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। রাজাকারদের ছোড়া গুলিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আহম্মদ। ভাইয়ের গুলি লেগেছে জানতে পেরে বড় ভাই মহম্মদ তাকে সেখান থেকে সরিয়ে নেয়ার সময় তিনিও গুলিবিদ্ধ হন। ওই যুদ্ধে একসঙ্গে দু'ভাই শহীদ হন। তাদের আত্মত্যাগ স্মরণীয় করে রাখতে মহম্মদপুর থেকে তাদের বাড়ির দিকে যে রাস্তাটি গিয়েছে তার নামকরণ করা হয়েছে 'শহীদ আহম্মদ-মহম্মদ সড়ক'। এছাড়া উপজেলা সদরের একটি মার্কেটের নামকরণ করা হয়েছে তাদের নামে।

শহীদ মহম্মদ আলী : মহম্মদ আলীর বাড়ি যশোরের রূপদিয়ায়। তিনিও ১৯ নভেম্বরের মহম্মদপুর যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন। এভাবেই মাগুরা সদর, মহম্মদপুর, শ্রীপুর ও শালিখা ৭ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয়। চারিদিকে শুরু হয়ে যায় জয়োলস্নাস, বিজয় মিছিল।

স্মৃতি চত্বর, ভাস্কর্য ও স্মৃতিফলক: বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মহম্মদপুর উপজেলা সদরের কলেজ রোডে নির্মাণ করা হয়েছে তিন শহীদের ভাস্কর্য। শহীদ আবীর, শহীদ আহম্মদ ও শহীদ মহম্মদ-এর ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয় ২০০৯ সালে। গত বছর মহম্মদপুর উপজেলা পরিষদ অভ্যন্তরে নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন 'বঙ্গবন্ধু মু্যরাল'। যার নাম দেওয়া হয়েছে 'মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি চত্বর'। এখানে রয়েছে পানির ফোয়ারা। চত্বরটিকে মনোরমভাবে সাঁজানো হয়েছে। এছাড়া উপজেলা সদরে 'শহীদ রওশন মার্কেট', 'বীরপ্রতীক গোলাম ইয়াকুব মিয়া মার্কেট', 'আবদুর রশীদ বিশ্বাস মার্কেট'-এর নামকরণ করা হয়েছে।

মহম্মদপুর উপজেলায় ৪টি সড়ক রয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের নামে। মুক্তিযোদ্ধা কোবাদ আলী, শহীদ আহম্মদ-মহম্মদ সড়ক, বীরপ্রতীক গোলাম ইয়াকুব মিয়া ও মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সাত্তারের নামে এই সড়কগুলোর নামকরণ করা হয়েছে।

মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রামানন্দ পাল বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি অম্স্নান রাখতে এবং মুক্তিযদ্ধের চেতনা আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি চত্বর, ভাস্কর্য ও স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে