রংপুরে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান 'ব্যর্থ'

প্রকাশ | ০১ মার্চ ২০২১, ০০:০০

রংপুর প্রতিনিধি
রংপুরে খাদ্য বিভাগের নির্ধারিত ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান 'ব্যর্থ' হয়েছে। রোববার ছিল সংগ্রহ অভিযানের শেষ দিন। নির্ধারিত সময়ে লক্ষ্যমাত্রার ১৩ ভাগও পূরণ হয়নি। ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ হাজার ৩৮২ মেট্রিক টন। সেখানে কেনা হয়েছে মাত্র দুই হাজার মেট্রিক টন, যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ২০ ভাগ। অন্যদিকে, চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ হাজার ৬৩৮ মেট্রিক টন। কেনা হয়েছে মাত্র এক হাজার ৩৯১ মেট্রিক টন। এটি লক্ষ্যমাত্রার ১০ ভাগও পূরণ হয়নি। রংপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিস সূত্র জানায়, জেলার ৮ উপজেলায় নিবন্ধিত অটোরাইস মিলসহ হাসকিং ৩ শতাধিক থাকলে চুক্তি করে মাত্র ৬৩ জন চালকল মালিক। এরপরেও চুক্তি অনুযায়ী চাল দেননি চালকল মালিকরা। গত বছর বোরো মৌসুমেও রংপুর জেলায় ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হয়েছিল। সেবারও মিলাররা চুক্তি করে নির্ধারিত পরিমাপের চাল দেয়নি। সে সময় খাদ্য বিভাগ থেকে বলা হয়েছিল, যারা ধান-চাল দেয়নি তাদের আর্নেস্ট মানি বাজেয়াপ্তসহ চুক্তি বাতিল করা হবে। পাশাপাশি নতুন করে আর চুক্তি করা হবে না বলেও জানানো হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তা আর পূরণ হয়নি। খাদ্য বিভাগ সূত্র জানায়, সরকার ধানের দাম প্রতি কেজি ২৬ ও চাল ৩৬ টাকা কেজি দাম নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু খাদ্য বিভাগের নির্ধারণ করা দামের চেয়ে বাজার মূল্যে ধানের দাম বেশি হওয়ায় কৃষকরা এবার ধান বিক্রি করতে রাজি হননি। খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রংপুর জেলায় এবার প্রতি উপজেলায় ধান ও চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রংপুর সদর উপজেলায় ধান কেনার কথা ছিল ১ হাজার ৭১ মেট্রিক টন। বিপরীতে এক কেজি ধান কিনতে পারেনি খাদ্য বিভাগ। অন্যদিকে চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই হাজার ৯৬৬ মেট্রিক টন। বিপরীতে কেনা হয়েছে মাত্র ২৬৭ মেট্রিক টন। অন্যদিকে, বদরগঞ্জ উপজেলায় ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৬ মেট্রিক টন। কেনা যায়নি এক কেজিও। চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৮৪ মেট্রিক টন। কেনা হয়েছে মাত্র ২০ মেট্রিক টন। মিঠাপুকুর উপজেলায় ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার ১৯৮ মেট্রিক টনের বিপরীতে কেনা হয়নি এক কেজিও। চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন হাজার ৮৫৮ মেট্রিক টন, বিপরীতে কেনা হয়েছে মাত্র ৪১৯ মেট্রিক টন। পীরগঞ্জ উপজেলায় ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ১৯৪ মেট্রিক টন। বিপরীতে কেনা হয়েছে মাত্র দুই শত মেট্রিক টন। চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন হাজার ৮০২ মেট্রিক টন। কেনা হয়েছে মাত্র ৬৭৯ মেট্রিক টন। তারাগঞ্জ উপজেলায় ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০২ মেট্রিক টনের বিপরীতে কেনা যায়নি এক কেজিও। চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই হাজার ৬৭৪ মেট্রিক টনের বিপরীতে কেনা হয়নি এক কেজিও। গঙ্গাচড়া উপজেলায় ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৫০ মেট্রিক টনের বিপরীতে কেনা যায়নি এক কেজিও। চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৭৬ মেট্রিক টনের বিপরীতে একই চিত্র দেখা গেছে। কাউনিয়া উপজেলায় ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৯৪ মেট্রিক টন। তবে এক কেজি ধানও কেনা যায়নি। আর চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ২৯৪ মেট্রিক টন, সেখানে চাল কেনা হয়েছে মাত্র ৪ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। পীরগাছা উপজেলায় ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৬৭ মেট্রিক টন। কেনা যায়নি এক কেজিও। অন্যদিকে চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ২৮৪ মেট্রিক টনের বিপরীতে চালও কেনা হয়নি। রংপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুল কাদেরের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান সফল না হওয়ার কথা স্বীকার করেন। তবে তিনি বলেন, 'বাজারে ধান-চালের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় সংগ্রহ অভিযান সফল হয়নি।' সময় বৃদ্ধির এখনো কোনো নির্দেশনা পাননি বলেও জানান তিনি।