শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এখনো নাগরিক সুবিধাবিহীন জনপদ বিলাইছড়ির ফারুয়া

আজগর আলী খান, রাজস্থলী (রাঙামাটি)
  ০১ মার্চ ২০২১, ০০:০০

বিশ্ব মানচিত্রের তিনটি দেশ এসে যে ইউনিয়নে মিলিত হয়েছে, এমন একটি ইউনিয়নের নাম ফারুয়া। পার্বত্য রাঙামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলাধীন ফারুয়া ইউনিয়নের আয়তন ২৮০ বর্গকিলোমিটার। দেশে এর চেয়ে কম আয়তনের অনেক উপজেলাও রয়েছে। আয়তনে বড় হলেও এই উপজেলায় লোকসংখ্যা বেশ কম। প্রায় ১৮ হাজার নাগরিক অধু্যষিত এই ইউনিয়নের মানুষ সভ্যতা থেকে এখনো অনেক দূরে।

সড়ক যোগাযোগ নেই বললেই চলে। হাঁটা পথই এই উপজেলার মানুষের একমাত্র ভরসা। নেই বিদু্যৎ, মোবাইল নেটওয়ার্ক বা প্রয়োজনীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দিগন্তবিস্তৃত বন-বনানী আর পাহাড়ে ঘেরা জনপদ বিলাইছড়ি যেন প্রকৃতির কোলে ঘুমিয়ে থাকা এক সবুজ রানি। বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও ভারত; তিন দেশের সংযোগস্থল হলেও ব্যবসাবাণিজ্য গড়ে ওঠেনি কোনোকালেই।

এই উপজেলা ঘিরে পর্যটন শিল্প বিকাশের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে তা সুদূরপরাহত। উপজেলার ধুপপানি ঝরনার কল কল ধ্বনি বেশ অনেক দূর থেকেই শোনা যায়। হেঁটে যখন আপনি ঝরনার পাশে পৌঁছবেন; প্রকৃতির অপরূপ প্রতিচ্ছবি, আর মাটির সোঁদা গন্ধে নিমিষেই আপনার সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে। যেদিকে তাকাবেন শুধু উঁচুনিচু পাহাড় আর পাহাড়। স্থানীয়রা এখানে উৎপাদন করে প্রচুর পরিমাণে নানা জাতের ফল ও শাকসবজি। কিন্তু এর কোনোটাই বাইরে বাজারজাতের সুযোগ নেই; সব খেয়ে নেয় চাষিরা নিজেরাই। এই তাজা সবজি, আর প্রকৃতির নির্মল বাতাসই স্থানীয়দের স্বাস্থ্য সতেজ রাখতে সাহায্য করে। কারণ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে কোনোকালেই তেমন ডাক্তার থাকেনি। বর্ষা মৌসুমে সামান্য কিছু সবজি ও ফল বাইরে থেকে আসা পাইকাররা সংগ্রহ করলেও তার ব্যবসায়িক মূল্যায়ন উলেস্নখ করার মতো নয়।

স্বাধীনতার বছরই এ ইউনিয়নে গড়ে উঠেছিল ফারুয়া বাজার। শনিবার দিন বসে সাপ্তাহিক হাট। তখন মানুষে গিজ গিজ করে বাজারটি। নিজেদের উৎপাদিত পণ্যের পসরা নিয়ে বাজারে বসে জুমিয়ারা। নানা রকম ফল, সবজি বিক্রি করে তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী কিনে নিয়ে যায়। অর্ধশতাব্দী পার হয়ে গেলেও এ বাজারের তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। কালের বিবর্তনে বাজারের অনেকখানি বিলীন হয়ে গেছে রাইংখিয়ং নদীতে। একমাত্র মসজিদটিও ভাঙনের কবলে রয়েছে দীর্ঘদিন।

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী লোকসংখ্যা ১৪ হাজার বলা হলেও বর্তমানে সেখানে অন্তত ১৮ হাজার মানুষের বসবাস। তাদের মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় যেমন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, তেমনি বিদু্যৎ না থাকায় টেলিভিশন দেখারও সুবিধা নেই। সরকারের দেওয়া ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা থেকে অনকে দূরে এই ১৮ হাজার মানুষ। সোলারের সাহায্যে বর্তমানে কিছু এলাকায় টেলিভিশন দেখানো হচ্ছে।

স্থানীয় বাজার কমিটির সভাপতি হারুনুর রশিদ বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরে বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নে নেই কোনো মোবাইল নেটওয়ার্ক ও বিদু্যৎ। পাশের কাপ্তাই উপজেলায় বিদু্যৎ উৎপাদন কেন্দ্র থাকা সত্ত্বেও আজও এ এলাকায় বিদু্যৎ পৌঁছেনি।'

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঠেগামুখ স্থলবন্দর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিনশ' কিলোমিটার লম্বা প্রস্তাবিত ট্রানজিট সড়কটির ভায়াপথ এই ফারুয়া। সড়কটির কাজ শুরু হলেও চলছে দ্রম্নতগতিতে। স্থানীয়রা প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী 'গ্রাম হবে শহর' স্স্নোগানটির বাস্তবায়ন চায়। সেজন্য মোবাইল নেটওয়ার্ক, বিদু্যৎ ও শিক্ষার সুযোগ পাওয়ার দাবি জানান তারা। সেই সঙ্গে হাটবারে উৎপাদিত প্রয়োজনীয় দ্রব্যগুলো কেনাবেচার সুযোগও চায় তারা। পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক সাবেক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার বলেন, 'বিএনপির আমলে এ অঞ্চলটিকে কোনো প্রকার নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়নি। রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি- এ ৩ জেলাকে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তায় আমি মোবাইলের আওতায় এনেছি। ফারুয়া ইউনিয়নটি মোবাইল নেটওয়ার্ক ও বিদু্যতের আওতায় আনতে নানা ধরনের বেগ পেতে হচ্ছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে