শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
চকরিয়ার তরছঘাটা

সেতু খোলা-বাঁধায় দুর্ভোগ লাখো মানুষের

মুহাম্মদ মনজুর আলম, চকরিয়া
  ০১ মার্চ ২০২১, ০০:০০
চকরিয়ায় তরছঘাটা পয়েন্টে মাতামুহুরী নদীর ওপর নির্মিত বাঁশের সাঁকোয় ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার -যাযাদি

কক্সবাজারের চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদীর ওপর তরছঘাটা পয়েন্টে একটি পাকা সেতুর অভাবে কয়েক যুগ ধরে পাঁচ ইউনিয়নের পঞ্চাশ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ দুর্বিসহ জীবনযাপন করছেন।

দশ বছর আগে এটি ছিল বাঁশের সেতু। এরপর সেতুটি কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়। কিন্তু বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়ার আশঙ্কায় বর্ষা মৌসুমে সেতুর কাঠগুলো খুলে ফেলা হয়। তখন নৌকায় পারাপার ছাড়া কোনো উপায় থাকে না মানুষের। বর্ষার শেষে আবারও কাঠ দিয়ে সেতুটি বাঁধা হয়। এভাবে জীবন চলছে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার তরছঘাটা এলাকার মানুষের। শুধু ওই এলাকার মানুষই নয়, এ কাঠের সেতুর ওপর নির্ভরশীল সাহারবিল, পূর্ব বড়ভেওলা, কৈয়ারবিলের আংশিক খিলচাদক, বিএমচর ও কোনাখালী ইউনিয়নের লাখো মানুষ।

জানা গেছে, চকরিয়া পৌরসভার তরছঘাটা-পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের সংযোগস্থল মাতামুহুরী নদী। সেখানে ১১০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে সমান্য কিছু অর্থ বরাদ্দ দেয় কক্সবাজার জেলা পরিষদ।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, তরছঘাটা এলাকায় নির্মিত কাঠের সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন সাহারবিল, পূর্ব বড় ভেওলা, বিএমচর, কৈয়ারবিলের আংশিক খিলচাদক ও কোনাখালী ইউনিয়নের লোকজন পারাপার হচ্ছেন। কেউবা রিকশা-টমটম-মোটরসাইকেলে চড়ে আবার কেউবা পায়ে হেঁটে পার হচ্ছেন সেতুটি। সবাই চরম ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি দিয়ে জীবন হাতে নিয়ে পার হন। পারাপারের সময় ধারণক্ষমতার স্বল্পতার কারণে ছোট-বড় দুর্ঘটনাও ঘটছে অহরহ।

তরছঘাটা এলাকার কলেজ শিক্ষক মোসলে উদ্দিন মানিক বলেন, 'প্রতি বছর বর্ষায় যখন পাহাড়ি ঢল নামে তখন এ কাঠের সেতু নদীতে ভেসে যাওয়ার আশঙ্কায় খুলে ফেলা হয়। তখন ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পারাপার ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। এ সময় স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্রছাত্রী ও এলাকাবাসীকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়।'

পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের কৃষক মৌলবী মনছুর আহমদ বলেন, 'তরছঘাটার পার্শ্ববর্তী অন্তত পঞ্চাশটি গ্রামে প্রতি বছর ব্যাপক আকারে রবি শস্য ও সবজি চাষ করা হয়। যাতায়াতের অসুবিধার জন্য আমাদের ক্ষেতে উৎপাদিত বিভিন্ন তরিতরকারি পার্শ্ববর্তী বাজারগুলোতে নেওয়া সম্ভব হয় না। এতে একদিকে যেমন উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পাওয়া থেকে আমরা বারবার বঞ্চিত হচ্ছি, অন্যদিকে সময়মতো ক্ষেতের ফসল বাজারে পৌঁছাতে না পেরে ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে।'

পূর্ব বড় ভেওলা ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ারুল আরিফ দুলাল বলেন, 'আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে মাতামুহুরী নদীর ওপর তরছঘাটা এলাকায় একটি পাকা সেতু নির্মাণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কাঠের ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটির কথা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়েও অবগত করা হয়েছে। সেখান থেকে আশ্বাসও পেয়েছি।' তিনি আরও বলেন, 'একটি পাকা সেতু নির্মিত হলে পূর্ব বড় ভেওলাসহ ৫টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক জনসাধারণের ভাগ্য বদলাবে এবং দীর্ঘ দিনের আশা পূরণ হবে। কৃষকরাও তাদের উৎপাদিত পণ্য সহজে বাজারজাত করে ন্যায্যমূল্য পাবে।'

জানতে চাইলে চকরিয়া-পেকুয়া (কক্সবাজার-১) আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম বলেন, 'তরছঘাট দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার লোকজন ঝুঁকি নিয়ে মাতামুহুরী নদী পারাপার হচ্ছে এটি সত্য। তবে আমি নির্বাচিত হওয়ার পর সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করে যাচ্ছি যাতে অল্প সময়ের মধ্যে তরছঘাটায় একটি সেতু অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্মাণ করা যায়। সরকারিভাবে অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে আমার পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে