বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শুকিয়ে যাচ্ছে চলনবিলের বুক চিরে বয়ে যাওয়া ১৬টি নদ-নদী

নাজমুল হাসান, গুরুদাসপুর (নাটোর)
  ০২ মার্চ ২০২১, ০০:০০
শুকিয়ে যাওয়া চলনবিল এখন ফসলি জমি -যাযাদি

নাটোরের গুরুদাসপুর ও চলনবিলের প্রধান নদী আত্রাই, নন্দকুঁজা, গুমানীসহ ১৬টি নদ-নদীতে পানি শুকিয়ে নৌ-চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বর্ষা মৌসুমে পানি দেখা গেলেও বর্ষা শেষে আর থাকে না। দখল, দূষণ আর ভরাটের কারণে সংকুচিত হয়ে মরে যাচ্ছে চলনবিলের নদী। ফলে সেচকাজ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি দেশি মৎস্য সম্পদ ও জীব-বৈচিত্র্য হুমকির মুখে। নদীকে জীবিকা করে খাওয়া মানুষগুলো বেকার হয়ে পড়েছে। এছাড়া স্থবিরতা নেমেছে ব্যবসা-বাণিজ্যে। তবে উপজেলার সাবগাড়ী এলাকায় একটি রাবারড্যাম স্থাপনের কারণে নদীর কয়েক কি.মি. জুড়ে এখনো পানি রয়েছে। আর এক মাস পরে রাবারড্যাম নামিয়ে দিলে সে পানিও থাকবে না।

এক সময় নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বাণিজ্যকেন্দ্র গুরুদাসপুর উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারের সঙ্গে নদীপথের সহজলভ্য ও অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ নৌ-যোগাযোগে ব্যবসা-বাণিজ্য চলেছে। নানা কারণে অস্তিত্ব সংকটে থাকা নন্দকুঁজা-আত্রাইসহ এসব নদ-নদী সৌন্দর্য, জৌলুস ও স্বকীয়তা হারিয়ে খালে পরিণত হয়েছে। জলপথে পণ্য পরিবহণে খরচ কম হলেও বর্তমান সময়ে এলাকার সব জলপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অধিক খরচে ব্যবসায়ীদের স্থলপথে পণ্য পরিবহণ করতে হচ্ছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানী ডক্টর মো. রেদওয়ানুর রহমানের প্রবন্ধ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, প্রায় ২৯ বছর আগেও চলনবিলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীতে বছরজুড়েই ৬-১২ ফুট পানি থাকত। ফলে বছরজুড়েই নৌচলাচল করত। কিন্তু বছরের পর বছর পলি জমে এসব নদী ভরাট হয়ে গেছে। পরিসংখ্যান মতে, প্রতি বছর ২২২.৫ মিলিয়ন ঘনফুট পলি নদীগুলো দিয়ে প্রবেশ করে। অপরদিকে ৫৩ ঘনফুট পলি নদীপথে বিলের সীমা ত্যাগ করে। অবশিষ্ট ১৬৯.৫ মিলিয়ন ঘনফুট পলি প্রতিবছর বিলে স্থিতি পায়। এ পলি জমে প্রতিবছর চলনবিল অঞ্চলের ভূমি ০.৫ ইঞ্চি পরিমাণ উঁচু হয়। অথচ এক সময় এসব নদীতে বছরজুড়েই পানি থাকত। নদীতে চলাচল করত ছোট-বড় নৌকা।

নদী আর নৌকাকে ঘিরে চলনবিলের গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড়, নাজিরপুর, সিংড়া, বড়াইগ্রামের আহম্মেদপুর, তাড়াশের ধামাইচ, নাদোসৈয়দপুর, চাটমোহরের ছাইকোলা, অষ্টমনিষা, মির্জাপুর, ভাঙ্গুড়ায় গড়ে উঠেছিল বড় নৌবন্দর। চলত রমরমা ব্যবসা-বাণিজ্য। কালের আবর্তনে সেসব এখন শুধুই ইতিহাস। বিলের অধিকাংশ এলাকা আবাদযোগ্য জমিতে পরিণত হয়েছে। এসব জমিতে ধান, গম, সরিষাসহ নানা ধরনের ফসল উৎপাদিত হচ্ছে।

গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড় মোকামের ব্যবসায়ী আইনুল মোলস্না, আফজাল হোসেন, ওমর আলীসহ কয়েকজন জানান- তারা এক সময় নৌকায় করে শত শত মন ধান, পাট, গম, সরিষাসহ চলনবিলের সব কৃষিজাত পণ্য ঢাকা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে নিয়ে যেতেন। আবার সেসব মোকাম থেকে নানা পণ্য এখানে এনে পাইকারি দামে বিক্রি করতেন। কম খরচে সহজলভ্য পরিবহণ সুবিধা ভোগ করলেও এখন আর ওই সুবিধা তারা পান না। এখন বছরের ৩-৪ মাস (বর্ষাকালে) কোনোরকমে তারা নৌকায় পণ্য আনা-নেওয়া করে থাকেন। ফলে আগের মতো আর ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারেন না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে