পাবনায় ক্যাপসিকাম চাষে নতুন সম্ভাবনা

প্রকাশ | ০৩ মার্চ ২০২১, ০০:০০

আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী, পাবনা
বিদেশি সবজি আবাদের দিকে চাষিদের আগ্রহের কারণে পাবনায় ক্যাপসিকামের বাণিজ্যিক চাষ বেড়েছে। আসলে সফলতাও। বাজারের চাহিদায় সারাদেশে সরবরাহ করে কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন চাষিরা। এ দেখেই জেলায় দিনদিন বাড়ছে ক্যাপসিক্যাম আবাদের পরিধি। উচ্চমূল্যের ফসলটির আর্থিক সম্ভাবনার কথা জানিয়ে আবাদে চাষিদের উৎসাহ দিচ্ছে জেলার কৃষিবিভাগ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলা সদরের মধুপুর গ্রামের। উচ্চশিক্ষিত অনুসন্ধিৎসু কৃষক নজরুল ইসলাম প্রচলিত ফসলের পাশাপাশি দুই বছর শখের বসে চার বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ক্যাপসিকাম আবাদ করেন। অভিজ্ঞতা না থাকায়, ফলন ভালো না হলেও দমে যাননি তিনি। ডিজিটাল তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আবাদের বিষয়ে জেনেছেন। সরেজমিন গাজীপুরে গিয়ে ক্যাপসিকাম আবাদ দেখে এসে চাষাবাদে ভুল ত্রম্নটি শুধরে এ বছর দুই বিঘা জমিতে ক্যাপসিকাম আবাদ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মৌসুমের শুরুতেই মিলেছে ভালো ফলন। উচ্চশিক্ষিত কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, গত বছর ক্যামসিকাম ক্ষেতে আগাছার কারণে ফলন ভালো হয়নি, খরচও বেশি হয়েছে। সে ঝামেলা এড়াতে এবার জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে পলিথিন বিছিয়ে চারা রোপণ করেছেন। আর তাতেই বাজিমাত। নজরুলের হিসেবে প্রতিটি গাছ থেকে তিনি গড়ে এক কেজি ফলন পেলেও তার লাভের অঙ্ক চার লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। ক্যাপসিকাম চাষি নজরুল ইসলাম বলেন, শখের বসে শুরু করলেও এখন পেশা হয়ে গেছে। দুই বছর আগে চার বিঘা জমিতে শুরু করি। প্রথমে কিছু সমস্যার কারণে লাভ হয়নি। তবে আগ্রহটা দ্বিগুণ হয়েছে। জেদ চেপেছে মনে, হবে না কেন? জেনে-শুনে এ বছর শীতের শুরুতে আবারও ক্যাপসিকাম আবাদ করি। আলস্নাহর রহমতে এবার ফলন খুবই ভালো হয়েছে। বাজারে এর চাহিদা খুবই ভালো।' তিনি জানান, উৎপাদিত ক্যাপসিকাম ঢাকার কাওরান বাজারে পাঠানো হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফলনগুলো যাচ্ছে। এ ছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে চায়নিজ রেস্টুরেন্টগুলোতে ক্যাপসিকাম যাচ্ছে। ঢাকার বিভিন্ন রেস্টুরেন্টেও এর ব্যাপক চাহিদা, সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পাবনাতে খুব বেশি কেউ এ আবাদ করে না। নজরুলের এমন সাফল্যে ক্যাপসিকাম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন আশপাশের গ্রামের চাষিরাও। মকবুল হোসেন, রাশেদুল ইসলাম নামে দুই কৃষক জানান, অল্প জমিতে বেশি আবাদ করা যায়। এতে লাভবান হচ্ছেন তারা। বেশি খরচ নেই, পরিচর্যাও বেশি করতে হয় না। এ কারণে সবার মধ্যে ক্যাপসিকাম চাষে আগ্রহ বাড়ছে। রাজধানী থেকে পাইকার এসে ক্যাপসিকাম কিনে নিয়ে যান ক্ষেত থেকেই। জেলার মাটি ও আবহাওয়া ক্যাপসিকাম চাষের উপযোগী। তাই প্রতিনিয়ত জেলায় আবাদের পরিসর বাড়ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ী পাবনার উপপরিচালক আব্দুল কাদের বলেন, 'ক্যাপসিকাম একটি সম্ভাবনাময় ফসল। কৃষক যদি প্রতি কেজি একশ' টাকা দরেও বিক্রি করে তাহলে এক একর জমি থেকে একজন কৃষক কয়েক লাখ টাকা আয় করতে পারবে। পাবনার মাটি ক্যাপসিকাম চাষের জন্য উপযোগী। ধীরে ধীরে আবাদের পরিধি বাড়ছে। আশা করি পাবনার কৃষক এই ফসল চাষ করে লাভবান হতে পারবেন।' জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, পাবনা জেলায় এ বছর পাঁচ হেক্টর জমিতে ক্যাপসিকাম আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে হেক্টরপ্রতি ৪০ মেট্রিক টন ফলন পাওয়া যাবে। ক্যাপসিকাম চাষ বৃদ্ধিতে কৃষকদের নানাভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে।