গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ৫ প্রতারক
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সার্ভারে ঢুকে নির্দিষ্ট ব্যক্তির ছবি পাল্টে তথ্য ঠিক রেখে সেই অনুযায়ী তৈরি করা হতো ভুয়া টিন সার্টিফিকেট বা ট্রেড লাইসেন্স। এসব ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে ব্যাংক ঋণ তুলে পালিয়ে যেতেন তারা।
এমনই প্রতারক দলের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মতিঝিল বিভাগ। মঙ্গলবার রাতে খিলগাঁও ও রামপুরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. আল আমিন ওরফে জামিল শরীফ, খ ম হাসান ইমাম ওরফে বিদু্যৎ, মো. আবদুলস্নাহ আল শহীদ, মো. রেজাউল ইসলাম ও মো. শাহজাহান।
বুধবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ভুয়া এনআইডি, ট্রেড লাইসেন্স ও টিআইএন সনদ ব্যবহার করে ঢাকা ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা ১
আত্মসাতের অভিযোগে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর খিলগাঁও এবং ১৩ ডিসেম্বর পল্টন থানায় দুটি মামলা হয়েছে।
এরপর ২৮ ফেব্রম্নয়ারি বিপস্নব নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং বিপস্নব ঘটনায় জড়িত থাকার কথা আদালতে স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। তার দেওয়া তথ্যমতে বাকিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
হাফিজ আক্তার বলেন, 'প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, প্রথমে ফ্ল্যাট কেনার জন্য লোনের বিষয়ে ব্যাংকের লোকজনদের সঙ্গে পরামর্শ করে। প্রতারকচক্রটি আগেই কৌশলে ফ্ল্যাটের প্রকৃত মালিকের কাছ থেকে তার এনআইডি এবং ফ্ল্যাটের কাগজপত্রের ফটোকপি নিয়ে নেয়।'
পরে যে ফ্ল্যাটটির জন্য ঋণ নেওয়া হবে ব্যাংক কর্মকর্তারা সেটি পরিদর্শনে যাওয়ার আগে থেকেই সেখানে বিক্রির সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখা হয়। ফ্ল্যাট মালিকের দেওয়া কাগজপত্রে কিছু পরিবর্তন করে ব্যাংকে জমা দেওয়া হয় এবং ব্যাংক কর্মকর্তারা ফ্ল্যাটে গিয়ে এবং এনআইডি সার্ভারে ঢুকেও সবকিছু সঠিক দেখতে পান।
চক্রটি এক-দুই মাসের জন্য একটি অফিস ভাড়া করে এবং ব্যাংক কর্মকর্তারা ওই অফিসও পরিদর্শন করেন জানিয়ে হাফিজ আক্তার বলেন, 'ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন করার দিন ব্যাংকের লোক উপস্থিত থাকে এবং ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এনআইডি, ট্রেড লাইসেন্স ও টিআইএনের তথ্য সঠিক পাওয়ায় ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন হওয়ার এক-দুই দিন পর পে-অর্ডারের মাধ্যমে লোনের টাকা দেয়।'
'চক্রটি যখন লোনের কিস্তি পরিশোধ না করে তখন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের দেওয়া এনআইডি কার্ডের তথ্য সার্ভারে অনুসন্ধান করলে তৈরি করা ভুয়া এনআইডি কার্ডের কোনো তথ্য দেখতে পায় না। কারণ ওই এনআইডির নাম-ঠিকানা ঠিক রেখে শুধু ছবি ও এনআইডি নম্বরের একটি ডিজিট বদলে দেওয়া হয়।'
নির্বাচন কমিশনের কিছু অসাধু কর্মচারীর সহায়তায় ফ্ল্যাট মালিকের দেওয়া এনআইডি নকল করে ভুয়া তৈরি করা হয় বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা হাফিজ আক্তার।
এ ধরনের চক্র সম্পর্কে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'নির্বাচন কমিশন কর্তৃপক্ষ গোয়েন্দা পুলিশকে জানিয়েছে, এই ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে নির্বাচন কমিশন এই পর্যন্ত ৪৪ জনকে বহিষ্কার করেছে।'
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, এই চক্রটির মূলহোতা আল আমিন। বিদু্যৎ আর রেজাউল এনআইডি নকল করার জন্য নির্বাচন কমিশনের অসাধু কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করত। বাকিরা খরিদ্দার বা ফ্ল্যাটের মালিক সাজত।
চক্রটি একটি বেসরকারি ব্যাংকের এক কোটি ৭০ লাখ টাকা নিয়ে হাওয়া হয়েছিল বলে তিনি জানান।