মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
রক্তে কেনা আমার স্বাধীনতা

বরাদ্দ পেলেও আটকে আছে বধ্যভূমি সংরক্ষণের কাজ

মন্তোষ চক্রবর্তী
  ০৪ মার্চ ২০২১, ০০:০০
সংরক্ষণ করা হয়নি কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের বধ্যভূমি -যাযাদি

স্বাধীনতার ৪৯ বছর অতিক্রান্ত হলেও কিশোরগঞ্জের হাওড় উপজেলা অষ্টগ্রামের বধ্যভূমি দুটি সংরক্ষিত হয়নি, স্থাপন করা হয়নি কোনো নামফলকও। একটি প্রকল্পের মাধ্যমে এই বধ্যভূমি সংরক্ষণ করার কথা থাকলেও কার অবহেলায় তা হচ্ছে না সে প্রশ্ন জোরালো হচ্ছে।

উপজেলার বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত দেওঘর ইউনিয়নের পাওনেরকান্দি এবং পূর্ব অষ্টগ্রামের জেলেপাড়া অধু্যষিত ইকরদিয়ায় দুটি বধ্যভূমির পাশে আজও স্বজনহারা পরিবারের লোকজন কখনো কাঁদেন, কখনো নীরবতা পালন করেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর হাওড়ে প্রচুর উন্নয়নের কর্মকান্ড হলেও বধ্যভূমি দুটি সংরক্ষণের উদ্যোগ না নেওয়ায় মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় জনগণের মধ্যে চরম হতাশা আর ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে। তারা দ্রত বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণের দাবি জানান। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে পাওনেরকান্দিতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কথা থাকলেও এখনো পর্যন্ত নির্মাণের কাজ শুরু না হওয়ায় জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হচ্ছে।

এ ব্যাপারে অষ্টগ্রাম উপজেলা প্রকৌশলী মো. গোলাম সামদানীকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান, 'পাওনেরকান্দি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য ৩৪ লাখ ৯৯ হাজার টাকা বরাদ্দ এসেছে কিন্তু বধ্যভূমির জায়গাটি উপজেলা ভূমি অফিস থেকে দেখিয়ে না দেওয়ার কারণে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কাজ করা যাচ্ছে না।'

মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসী জানান, পাওনেরকান্দি বধ্যভূমিটি অষ্টগ্রাম থানার মূল বধ্যভূমি ছিল। ১৯৭১ সালে পাক হানাদার, আলবদর ও রাজাকারেরা অষ্টগ্রাম থানা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার শত শত নারী-পুরুষ ধরে এনে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করত।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসী সৃত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর এই বধ্যভূমিতে শত শত মানুষের হাড়, কঙ্কাল এবং মাথার খুলি পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এদিকে উপজেলার জেলে অধু্যষিত ইকরদিয়া গ্রামে ১৯৭১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর শান্তি কমিটির নেতৃত্বে হানাদার বাহিনী ও রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা ভোরবেলায় ঘুমন্ত মানুষের ওপর হামলা চালিয়ে দক্ষিণ পাড়ায় লুটপাট করে। তারা দুটি ধনাঢ্য বাড়িসহ পুরো গ্রামে আগুন জ্বালিয়ে দেয় ও লুটপাট করে। প্রায় অর্ধশত নারী-পুরুষকে আটক করে একটি স্থানে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে।

এ বিষয়ে পূর্ব অষ্টগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাছেদ মিয়া বলেন, 'স্বাধীনতার এত বছর পেরিয়ে গেলেও সরকারিভাবে কোনো শহীদের স্মৃতিস্তম্ভ অথবা নামফলকও স্থাপন করা হয়নি।' তিনি আরও বলেন, 'নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে এই বিষয়ে একাধিকবার আলাপ-আলোচনা হলেও এর কোনো ফল আসেনি।'

শহীদ পরিবারে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বললে তারা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, 'শুধুমাত্র জাতীয় দিবস এলেই বধ্যভূমিতে মোমবাতি জ্বালানো ছাড়া প্রশাসন আর কোনো কিছু করে না।'

এ ব্যাপারে উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কাজী আফতাব উদ্দিন জানান, স্বাধীনতার সময় স্বাধীনতার প্রতিশক্তির প্রভাব বেশি ছিল, এখনো তাই মনে হচ্ছে, সে কারণে বোধ হয় বধ্যভূমি দুটি সংরক্ষণ হচ্ছে না।'

অষ্টগ্রামের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল আলম জানান, 'দেওঘর ইউনিয়নের পাওনেরকান্দি বধ্যভূমিটির কাজ করার জন্য খুব দ্রত জায়গা নির্ধারণ করে দেব। তবে ইকুরদিয়া চন্ডীতলা বধ্যভূমির বিষয়টি তিনি দেখছেন বলে জানান।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে