রক্তে কেনা আমার স্বাধীনতা

অযত্ন-অবহেলায় হারিয়ে যাচ্ছে গোমস্তাপুরের বধ্যভূমিগুলো

গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ)

প্রকাশ | ০৫ মার্চ ২০২১, ০০:০০

ইমরান আলী
বোয়ালিয়ার শাহাপুর গ্রামে অবস্থিত শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলায় অযত্ন-অবহেলায় হারিয়ে যাচ্ছে '৭১-এর বধ্যভূমিগুলো। উপজেলায় ৩টি স্থানে বধ্যভূমি রয়েছে। তার মধ্যে শুধু রহনপুর রেল স্টেশনের পাশে বিজিবি ক্যাম্পের সামনে অবস্থিত বধ্যভূমির সীমানাপ্রাচীর রয়েছে। বোয়ালিয়া ইউনিয়নের শাহাপুর গ্রামে অবস্থিত ১৭ বীরমুক্তিযোদ্ধা ও ১৮ এলাকাবাসী শহীদের স্মরণে করা স্মৃতিস্তম্ভটি তৈরি করা হলেও সীমানাপ্রাচীর না থাকায় জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। রাজাকারদের সহযোগিতায় রহনপুর এবি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (পুনর্ভবা নদীর তীরে) পাকিস্তানি ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাসহ অনেক সাধারণ মানুষকে ধরে এনে হত্যা করা হয়েছিল। প্রতিবছর স্বাধীনতা ও বিজয় মাস এলেই এ বধ্যভূমিগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বছরের বাকি সময় থাকে অযত্ন-অবহেলায়। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও সেগুলো সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে জানান স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। দিনদিন স্মৃতিস্তম্ভের কংক্রিটগুলো খসে পড়ছে। উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা নেজামুদ্দিন জানান, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯ সেপ্টেম্বর দিনটি ছিল রোববার। বোয়ালিয়া ইউনিয়নবাসির জীবনে নেমে আসে এক অন্ধকার দিন। মানুষের আর্তচিৎকারে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। রেহাই পায়নি মায়ের কোলে থাকা ১-২ মাসের বাচ্চারাও। পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকার মিলে নির্বিচারে ওই এলাকার প্রায় ৩শ সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছিল। যাদের মধ্যে ১৩৩ জনের নাম-পরিচয় জানা গেলেও বাকিদের পাওয়া যায়নি। সেদিন সম্ভ্রম হারিয়েছিলেন ওই এলাকার বহু নারী। দু'দফায় বীরাঙ্গনাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়। যাদের মধ্যে ১১ জনের বাড়ি গোমস্তাপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের। বধ্যভূমি, গণকবর ও যুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো এবং বাদপড়া শহীদদের নামগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষণের দাবি জানান স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। তারা জানান, জাতীয় স্বার্থে এসব স্থান সংরক্ষণ করা জরুরি। ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গোমস্তাপুর উপজেলা ছিল ৭নং সেক্টরের অধীন। সে সময় পাকিস্তানি বাহিনী এ উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে নৃশংসভাবে হত্যাকান্ড ঘটিয়েছিল। আর এ নির্মমতার সাক্ষী হয়ে আছে কয়েকটি বধ্যভূমি ও গণকবর। মুক্তিযুদ্ধে গোমস্তাপুর উপজেলায় কয়েকশ' মুক্তিযোদ্ধাসহ প্রায় ১০ হাজারেও বেশি সাধারণ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকার-আলবদর বাহিনী। যার সাক্ষী রহনপুর রেলস্টেশনের পাশে বধ্যভূমি। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ১১ পদাতিক ডিভিশনের উদ্যোগে একটি স্মৃতিস্তম্ভসহ গণকবরটি সীমানাপ্রাচীর তৈরি করা হয়। এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান জানান, বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছটিয়ে থাকা বধ্যভূমিগুলো সংস্কার ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উলেস্নখ্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলা সদর রহনপুরসহ বিভিন্ন স্থানে বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। ১১ ডিসেম্বর সকালে লেফটেন্যান্ট রফিকের নেতৃত্বে ৩০-৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল বাঙ্গাবাড়ী, আলীনগর থেকে রহনপুর অভিমুখে রওনা হয় সঙ্গে বোয়ালিয়া এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা রহনপুরে প্রবেশ করে। কিন্তু প্রবেশের আগেই পাকিস্তানি বাহিনী রহনপুর এবি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে গড়ে তোলা সেনাক্যাম্প গুটিয়ে ট্রেনযোগে পালিয়ে যায়।